মানুষকে কষ্ট দিয়ে কিসের আন্দোলন, প্রশ্ন যাত্রীর
Published: 4th, March 2025 GMT
বাসশ্রমিকদের মারধরের অভিযোগে ডাকা ধর্মঘটের কারণে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকায় চলাচলকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। একই সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। রমজানে আয় বন্ধ হওয়ায় দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য মালিকপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অনেক শ্রমিক।
গতকাল সোমবার বিকেল চারটার দিকে জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা বাস মালিক সমিতি যৌথভাবে ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়।
আরও পড়ুনজামালপুরে বাস সেবা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধীদের মহাসড়ক অবরোধ১৯ ঘণ্টা আগেধর্মঘটের প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জামালপুর শহরের কেন্দ্রীয় ও পৌর বাসস্ট্যান্ড, রাজীব কাউন্টার, ভোকেশনাল, জিগাতলা ও গেটপাড় এলাকার অটোরিকশা স্ট্যান্ড ঘুরে যাত্রীদের যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাসগুলো টার্মিনালে সারিবদ্ধ করে রাখা। কোনো বাস চলাচল করছে না। যাত্রীরা বাস বন্ধের খবর শুনে অন্যদিকে চলে যাচ্ছেন।শ্রমিকেরা কিছু সময়ের জন্য জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে শ্রমিক নেতাদের নির্দেশে সড়ক ছেড়ে দেয় তাঁরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ধর্মঘট করতাছি। শ্রমিক ও মালিক নেতাদের মধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সমাধান করবেন। কিন্তু সেটা তাঁরা পারতাছেন না। তাই সমস্যা বাড়তাছে। যাত্রীদের সঙ্গে আমাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ, প্রতিদিন টাকা আয় না করলে ঘরে চাল জোটে না।’
আরও পড়ুনজামালপুরে দুর্ঘটনায় একজন নিহত, বাসে আগুন দিল বিক্ষুব্ধ জনতা০২ মার্চ ২০২৫এর মধ্যেই অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছেন কয়েকজন চালক। শহরের জিগাতলায় অটোরিকশার স্ট্যান্ডে তাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। চালকেরা বলেন, রমজান মাসে আয়রোজগার একটু কম। গাড়ি চালালে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। কী কারণে অটোরিকশার ধর্মঘট চলছে, তা তাঁরা জানেন না। তাঁদের নেতারা শুধু অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখতে বলছেন। তাই তাঁরা বন্ধ রেখেছেন।
শহরের ভোকেশনাল অটোরিকশার স্ট্যান্ডে দেখা হয় কম্পপুর এলাকার রবিউল ইসলাম (৩৫) নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তাঁর এক আত্মীয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে দেখতে ময়মনসিংহে যেতে চান রবিউল। কিন্তু তিনি কোনো যানবাহন পাচ্ছিলেন না। রবিউলে ভাষ্য, ‘এসেই শুনলাম ধর্মঘট চলছে। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানলাম বাসও বন্ধ। তার মানে, যাওয়ার আর কোনো উপায় নাই। এভাবে হঠাৎ ধর্মঘট ডাকা ঠিক না। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কিসের আন্দোলন?’
চলমান পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে শ্রমিকেরা কিছু সময়ের জন্য জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে শ্রমিক নেতাদের নির্দেশে সড়ক ছেড়ে দেয়। আজ সকাল ১০টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের সামনে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’