চাহিদা অনুযায়ী জোগান নেই, ‘লেবুর দেশে’ চড়া লেবুর দাম
Published: 4th, March 2025 GMT
মাটির উর্বরতা ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পাহাড়-টিলা অধ্যুষিত সিলেটে লেবুর উৎপাদন বেশি হয়। এ জন্য সিলেটকে বলা হয় ‘লেবুর দেশ’। তবে এবার চাহিদা অনুযায়ী জোগান না থাকায় ‘লেবুর দেশে’ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভাষ্য, ইফতারের সময় ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবার কাছে লেবুর শরবতের বেশ চাহিদা থাকে। ফলে রোজার সময় বাজারে লেবুর চাহিদা বাড়ে। চাহিদা যতটা, সে পরিমাণে জোগান নেই। এ কারণে লেবুর দাম একলাফে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘সবজি বাজার পরিদর্শন করেছি। সবজি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তাঁরা প্রতি হালি ছোট লেবু ৬০ টাকা এবং বড় লেবু ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তাঁদের দাবি, পাইকারি বাজার থেকে তাঁরা ১০০টি ছোট লেবু ১ হাজার ৪০০ টাকায় এবং বড় লেবু ২ হাজার ২০০ টাকায় কিনেছেন। সেসব যাচাই করা হবে। কেউ বেশি লাভ করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেট শহরতলি এলাকা, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার থেকে চাহিদার অর্ধেক বেশি লেবু সরবরাহ করা হচ্ছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। এর বাইরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল এবং ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও সিলেটে লেবু আসে।
নগরের বন্দরবাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকায় প্রতি হালি মাঝারি লেবু ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চাষি লেবু ১০০ টাকা, টনা লেবু ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০ দিন আগেও এসব লেবু প্রতি হালি ৫০ থেকে ৬০ টাকার কমে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া এখন আকারভেদে একেকটি জারা লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায়। এ লেবু আগে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা কমে মিলত।
বন্দরবাজার লালবাজার-সংলগ্ন মাছবাজারের পাশে কয়েকটি লেবুর দোকান আছে। সোমবার বেলা দেড়টার দিকে এখানে লেবু কিনতে এসেছিলেন সোবহানীঘাট এলাকার বাসিন্দা মহিতুর রহমান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বড় আকারের যে লেবু চার-পাঁচ দিন আগে ৮ টাকায় কিনেছি, সে লেবু এখন ৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ল।’
রিকাবিবাজার এলাকার সবজি ব্যবসায়ী মো.
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট লেবুবাগান ১ হাজার ৪৫৭টি। এর মধ্যে ৮২৫টি জারা লেবুর বাগান এবং ৬৩২টি অন্যান্য জাতের লেবুর বাগান। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৩১ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে, মোট লেবু হয়েছে ৪ হাজার ৪৩৯ টন।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণভাগ চৌধুরীপাড়ার আলভীনা গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুর রব বলেন, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে সিডলেস লেবু চাষ করেছেন। মৌসুম শেষ হওয়ায় তাঁর বাগানেও এখন লেবু নেই। আবার চাহিদাও বেড়েছে। তাই দামও বাড়তি। তিনি বর্তমানে দৈনিক ২০০ লেবু বিক্রি করতে পারছেন। পাইকারি দামে প্রতি হালি ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। সেসব লেবু খুচরা বাজারে হালি বাজারে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব লেবুই রমজানের দুই সপ্তাহ আগে প্রতি হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান বলেন, লেবুর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। তবে সিলেটের বাগানগুলোতে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে সিডলেস লেবু পাওয়া যাচ্ছে। তাই হুট করে দাম বেড়ে যাওয়ার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙ্গায় চার গ্রামের সংঘর্ষে আহত ৬০
জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চার গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকটি বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোপীনাথপুর গ্রামের সাইমন মাতুব্বর ও কুদ্দুস মাতুব্বরের মধ্যে জমি নিয়ে গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এরই জেরে রবিবার সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠকে বসা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।
আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে বিএনপি দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০
শরীয়তপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ
গোপীনাথপুর গ্রামের দুটি পক্ষের সঙ্গে পরবর্তীতে ছোট হামেরদী, খাড়া কান্দি ও বাইশা খালি গ্রামের লোকজনও সংঘর্ষে যোগ দেন। ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। সংঘর্ষকারীরা ঢাল, শরকি, কালি, কাতরা, টেটার মতো অস্ত্র ব্যবহার করেন। ইট ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৬০ জন আহত হন। গুরুতরদের ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ হোসেন বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এবং চার গ্রামের লোকজন রণক্ষেত্র তৈরি করায় জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছিল। ক্ষতির পরিমাণ পরে জানাতে পারব।”
ঢাকা/তামিম/মাসুদ