ছেলেবেলার শিক্ষা—‘কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই’। সেই ভুল করে মহাবিপাকে পড়েছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র শামা মুহাম্মদ। ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে তিনি ‘মোটা’ বলায় রে রে করে উঠেছে বিজেপি। শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।

শামা অবশ্য অনড়। দলের নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্ট মুছে দিলেও তিনি বলছেন, কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। শুধু খেলোয়াড় হিসেবে রোহিত শর্মার ফিটনেসের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি মনে করেন, অন্য অনেকের তুলনায় ফিটনেসের দিক থেকে রোহিত দুর্বল।

আত্মপক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি শামা অবশ্য বিজেপিকেও রেয়াত করেননি। রোহিতকেই নিয়ে কয়েক বছর আগে করা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের (বর্তমানে বিজেপি নেত্রী ও সংসদ সদস্য) মন্তব্য তুলে দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিজেপির ‘শাউটিং ব্রিগেডের’ উদ্দেশে বলেছেন, ‘এখন কী বলবেন? সে সময় বিজেপির একজনও কঙ্গনার সমালোচনা করেননি। অথচ সেদিন এই রোহিত শর্মাকেই কঙ্গনা ‘ধোপার কুকুর’ বলেছিলেন’।

এরই পাশাপাশি শামা টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও। বলেছেন, কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে স্থূলতার বিপদ সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দেশের প্রতি আটজনের মধ্যে একজন স্থূল। তিনি বিশেষ করে বলেছিলেন, শিশুদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। স্থূলতা রুখতে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে তেল খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ১০ শতাংশ তেল কম খেতে। তাতেই অনেক উপকার হবে।

মোদির ওই বক্তব্যের উল্লেখ করে শামা বলেছেন, রোহিতের স্থূলতা নিয়ে তিনিও সেটাই বলতে চেয়েছেন। বডি শেমিং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না।

এই বিতর্কের মধ্যেই চিকিৎসাসংক্রান্ত অন্যতম সেরা সাময়িকপত্র ‘দ্য ল্যানসেট’ জানিয়েছে, বর্তমান বিশ্বে স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়া এক বিশ্রি প্রবণতা। এভাবে চললে আগামী ২৫ বছর পর ২৫ বছরের বেশি বয়সী ৪৫ কোটি ভারতীয় স্থূল বলে বিবেচিত হবেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের আগে থাকবে একমাত্র চীন (৬২ কোটি)। ভারতের পরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (২১ কোটি)।

সামাজিক মাধ্যমে শামা গতকাল সোমবার ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে রোহিত শর্মা মোটা। ওঁর ওজন কমানো দরকার। তা ছাড়া রোহিত মাঝারি মাপের ক্রিকেটার। ব্যক্তিত্বহীন অধিনায়ক। তিনি ভাগ্যবান যে ভারতের অধিনায়ক হয়েছেন।’

ওই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি নেতারা রে রে করে ওঠেন। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়া কটাক্ষ করে বলেন, কংগ্রেসের উচিত অ্যাথলেটদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া। তাঁরা তাঁদের পেশাদার জীবন সামলাতে সক্ষম। কারও শরীর নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। যাঁরা দেশের জন্য লড়ছেন, তাঁদের অপমান করা একেবারেই উচিত নয়।

শামাকে আক্রমণ করে বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেছেন, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে যাঁরা ৯০টি নির্বাচনে হেরেছেন, তাঁরা রোহিতের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। রোহিতের নেতৃত্বেই ভারত কিন্তু গত বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে।

বিতর্কটা এমন সময় দানা বাঁধে, যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি। বিতর্ক শুরু হতেই কংগ্রেস জানিয়ে দেয় মন্তব্যটি দলের নয়। অন্যতম মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, কংগ্রেস সব ক্রীড়াবিদকে সম্মান করে। তাঁদের অবদানের মর্যাদা দেয়।

বিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্ল বলেন, রোহিত দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ফিটও। দলকে সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করছেন। তিনি দারুণ নেতা।

শামা তাঁর মন্তব্য মুছে দিলেও বিজেপিকে ছাড়ছেন না। টেনে এনেছেন এই রোহিতকে নিয়েই চার বছর আগে করা কঙ্গনা রানাউতের মন্তব্য। সেটা তুলে দিয়ে বিজেপির কাছে জানতে চেয়েছেন, তখন কেউ প্রতিবাদী হয়েছিলেন কি না। রোহিত ও কঙ্গনার করা পোস্ট দুটি জুড়ে ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়ার কাছে শামা জানতে চেয়েছেন, ‘আপনার কিছু কি বলার আছে? এমনিই জানতে চাইছি।’

চার বছর আগে ২০২১ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় রোহিত শর্মা সামাজিক মাধ্যমে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে লিখেছিলেন, ‘সবাই একযোগে কোনো সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা আমরা যখন করেছি, তখনই ভারত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দেশ গঠনে আমাদের কৃষকদের অবদান অপরিসীম। আমি নিশ্চিত, সমাধানের উপায় খুঁজতে সবাই একজোট হয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন।’

রোহিতের এই মন্তব্যেরই তীব্র সমালোচনা করেছিলেন কঙ্গনা। তিনি লিখেছিলেন, ‘ক্রিকেটাররা সবাই কেন ধোপার কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করছে, যারা ঘরেরও নয়, ঘাটেরও নয়? কেনই বা কৃষকেরা সেই আইনের বিরোধিতা করছে, যা বৈপ্লবিকই শুধু নয়, তাদের মঙ্গলের জন্য তৈরি? যারা হইচই করছে তারা সন্ত্রাসবাদী। জোরের সঙ্গে সেটা বলুন না। কিসের এত ভয়?’

এই বিতর্কের মধ্যেই শামা অবশ্য একজনের সমর্থন পেয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সংসদ সদস্য অধ্যাপক সৌগত রায় বলেছেন, কংগ্রেসনেত্রী ঠিকই বলেছেন। রোহিত যেভাবে খেলছেন, তাতে তাঁর দলে জায়গা পাওয়াই উচিত নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন মন ত র বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।

তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ