যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যালেনটাউনে ইউক্রেনীয় গির্জা সেন্ট মেরির যেসব সদস্য গত রোববার প্রার্থনার জন্য জড়ো হচ্ছিলেন, তাঁরা তখনো ট্রাম্প-জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি। সবশেষ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কথার মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘চপেটাঘাত’ করেছেন বলে মনে করছেন গির্জার সদস্যরা। এ ঘটনায় হতবিহ্বল তাঁরা।

সেন্ট মেরির পুরোহিত ফাদার রিচার্ড জেন্দ্রাস বলেছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের মুখে চপেটাঘাত করা হয়েছে। আর এই চপেটাঘাত আমি অনুভব করতে পেরেছি।’

ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার নজিরবিহীন বিবাদের বিষয়টি চোখের চিকিৎসক দেখাতে যাওয়ার সময় প্রথম ফাদার রিচার্ড জেন্দ্রাসের নজরে আসে। তিনি বলেন, ‘ভিডিওটি দেখার পর আমি হতবাক হয়ে যাই। তিন বছর আগে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরুর সময় আমার যেমন অনুভূতি হয়েছিল, এখনো ঠিক একই রকম অনুভূতি হচ্ছে।’

রিচার্ড জেন্দ্রাস গির্জায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে ইংরেজি ও ইউক্রেনীয় ভাষায় কথা বলেন। এ সময় তিনি ক্ষমার মহত্বের ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য দেন।

জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা অ্যালেনটাউন ও এর আশপাশের ইউক্রেনীয় সম্প্রদায়কে নাড়া দিয়েছে। ইস্পাত ও টেক্সটাইলশিল্পে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ওই এলাকায় অভিবাসী হয়ে এসেছেন অনেক ইউক্রেনীয়।

গত শুক্রবার প্রকাশ্যে বিরল এই বিতর্কের সময় ট্রাম্প যখন জেলেনস্কিকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে মার্কিন সহায়তার জন্য ইউক্রেনের আরও বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, তখন তাঁর কণ্ঠস্বর বারবার উঁচু হয়ে যাচ্ছিল। যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়ার সঙ্গে ‘একটি চুক্তি’ করতেও জেলেনস্কিকে চাপ দেন ট্রাম্প।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও জেলেনস্কির সমালোচনা করে তাঁর আচরণকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে রাশিয়াকে বিশ্বাস করা যেতে পারে কি না, তা নিয়ে যখন জেলেনস্কি প্রশ্ন তোলেন, তখনই ট্রাম্প ও ভ্যান্স খেপে যান। ট্রাম্প বলেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর আস্থা রাখেন। পুতিন কথা রাখবেন বলেও মনে করেন ট্রাম্প।

উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ফলে জেলেনস্কি নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে ইউক্রেনীয় খনিজ ভাগাভাগিসংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর না করেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন।

কালো পোশাক ও ইউক্রেনীয় পিন পরে চার্চের ফাদার রিচার্ড জেন্দ্রাস বলেন, ‘মানুষ আমার বাড়িতে, আমার দোরগোড়ায় এসে হাজির হচ্ছে। সম্প্রদায়ের লোকজন আসছেন এবং নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছেন। আমি এখানে গির্জায় অসংখ্য ই–মেইল ও ফোনকল পেয়েছি, যাঁরা ট্রাম্প ও জেডি ভ্যান্সের কর্মকাণ্ডের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য এখনই কিছু করতে চান।’

রুশ আক্রমণে বিপর্যস্ত ইউক্রেন এবং যুদ্ধে নিহত সেনাদের স্মরণে বিভিন্ন পোস্টার দিয়ে ঘেরা ওই গির্জা। গির্জার এক সেবকের পিতা এ যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। বাখমুতে তাঁর নিহত হওয়ার খবর কয়েক মাস পরে যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের ওই সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছেছিল বলে জানান জেন্দ্রাস।

৭৪ বছর বয়সী উপাসক মারিয়া নর্টন বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের ঘটনা অনেক বেশি মানুষকে নাড়া দিয়েছে। (জেলেনস্কিকে) তিরস্কার করা হয়েছে। তাঁকে হুমকি দিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।’

নর্টন বলেন, ‘তাঁরা ওভাল অফিসে বিষয়টিকে একটি সার্কাসে পরিণত করেছেন। আমি যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা সবাই এমনকি রিপাবলিকান ইউক্রেনীয়রাও লজ্জিত।’

জেন্দ্রাস বলেন, সম্প্রদায়টি শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ওই অঞ্চলের কংগ্রেসম্যান রায়ান ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে দেখা করবে। ২০২৬ সালে আবারও নির্বাচনে লড়বেন ম্যাকেঞ্জি। অঞ্চলটির প্রতিটি ভোটই তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন য ইউক র ন র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ