দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকার সম্পাদক মোরছালিন বাবলা ও তার পত্রিকার সাংবাদিক মাহফুজ সিহানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লা আল মাসুমের আদালতে তিনি এই মামলাটি দায়ের করেন। 

মামলায় তিনি উল্লেখ্য করেন, গত ১ মার্চ মোরছালিন বাবলার সম্পাদিত দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবনের মানহানি ও ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বর্তমানে পলাতক গডফাদার সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সংবাদ সম্মেলনের একটি ছবি এডিট করে রফিকুল ইসলাম জীবনকে শামীম ওসমানের বিশ^স্ত সহচর হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। 

আর এই সংবাদ সম্মেলনটি ছিলো শহীদ জিয়া হলের উপরে জিয়াউর রহমানের মূরাল ভাঙ্গা প্রসঙ্গে। পত্রিকায় যে ছবিটি ছাপা হয় সেই ছবিটিতে আরো অনেক সাংবাদিক শামীম ওসমানের পাশে বসা ছিলেন এবং তার সামনে জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেল গুলির ক্যামেরার বুম রাখা ছিলো।

কিন্তু দৈনিক যুগের চিন্তায় এই ছবিটি কেটে অনেককে বাদ দিয়ে এবং টেলিভিশনের বুম গুলি বাদ দিয়ে কেবল মাত্র সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবনের ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিনের ছবিটি ছাঁপানো হয়। এবং রফিকুল ইসলাম জীবনকে শামীম ওসমানের বিশ^স্ত সহচর হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

অথচ এই সাংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমানকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করা হয়। তিনি কেনো জিয়াউর রহমানের ম্যূরাল ভেঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন এমন প্রশ্নও করা হয়। তাছাড়া সেই সংবাদ সম্মেলনে দেশের প্রায় সব কয়টি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন এবং পূরো সংবাদ সম্মেলনটি রেকর্ড করা হয়। 

মামলার বিষয়ে রফিকুল ইসলাম জীবনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা করার কথা স্বীকার করে বলেন, আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়াতো আমার কোনো উপায় ছিলো না। কারণ অযথাই তিনি  (মোরছালিন বাবলা) আমাকে তার পত্রিকায় আক্রমন করেছেন। তাও এমন একটি পত্রিকা যে পত্রিকায় আমি বছরের পর বছর নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে শত শত রিপোর্ট করেছি।

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব তাকে শোকজ করেছে। আমিতো ব্যক্তিগত ভাবে শোকজ করেনি বা করতে পারি না। কমিটি যা পাশ করবে তাতে আমি স্বাক্ষর করতে বাধ্য। অথচ তিনি জেনে শুনে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে বসলেন। 

তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, জনপ্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সকলেই আমাকে চিনেন এবং জানেন আমি কোন মতাদর্শের মানুষ। অথচ তিনি আমাকে শামীম ওসমানের বিশ^স্ত সহচর বানিয়ে দিলেন।

তাছাড়া প্রেসক্লাব তাকে শোকজ করেছে। তিনি শোকজের জবাব দেবেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে আগেই আমার বিরুদ্ধে তার পত্রিকাকে ব্যবহার করলেন। আর শোকজের জবাব দিলেন তার পরে। আসলে এক সময় তিনি টাকার অভাবে পত্রিকা চালাতে হিমসিম খেতেন, কিন্তু এখন তিনি বহু টাকার মালিক। তাই অহংকারে তার মাটিতে পা পরে না।

তাই এখন আর আপন পরও চিনতে চাননা। আমি আশা করি আদালতে ন্যায় বিচার পাবো, ইনশাআল্লাহ। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তার সাথেও তো বহু বিতর্কিত ব্যক্তির ছবি আছে যা কিনা এখন সোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব ছবি নিয়ে তিনি কি জবাব দেবেন?
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ শ ম ম ওসম ন র ন র য়ণগঞ জ জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!

সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। 

এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।  

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। 

এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন। 

এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। 

এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।

একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।

নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।

যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।  

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়। 

২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
  •  শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা চান নাই : টিপু 
  • নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাথে গিয়াসউদ্দিনের মতবিনিময় সভা
  • সোনারগাঁয়ে ইসলামী আন্দোলনের পরিচিতি সভা ও শপথ গ্রহণ  
  • বন্দর ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ 
  • তেল চোর দেলোয়ারকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন : টিপু
  • নারায়ণগঞ্জে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৫ বিএনপি নেতা বহিষ্কার
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু
  • কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও সদস্য ফরম বিতরণ
  • সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!