ভিকির ‘ছাবা’ কেন বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে?
Published: 5th, March 2025 GMT
বলিউড অভিনেতা ভিকি কৌশল অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘ছাবা’। লক্ষ্মণ উতেকার পরিচালিত এই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন রাশমিকা মান্দানা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের ৪ হাজার পর্দায় মুক্তি পায় এটি।
খুব বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে নির্মিত হয়নি ‘ছাবা’। মুক্তির প্রথম দিনই বক্স অফিসে সাড়া ফেলে এটি। সেই ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে। গত ১৮ দিনে আয়ের গ্রাফ ওঠানামা করলেও জয়রথ চলমান। এ পর্যন্ত প্রায় ৯০০ কোটি টাকা আয় করেছে এটি। পূর্বে ভিকি কৌশলের কোনো সিনেমা বক্স অফিসে এত টাকা আয় করেনি। সিনেমাটি কেন সাফল্য পেয়েছে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন ভারতীয় বক্স অফিস বিশ্লেষকরা।
বক্স অফিস বিশ্লেষক রমেশ বালা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “ছাবা’ সিনেমার শক্তিশালী বিষয়বস্তু সিনেমাটির সঙ্গে দর্শকদের যুক্ত করেছে। ইতিহাস ও ধর্মের মিশ্রণ দর্শক হৃদয়ে অনুরণিত হয়েছে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে, যেখানে শিবাজি মহারাজকে সম্মান করা হয়। গল্পটি সেখানকার স্পর্শকাতর ইতিহাসকে স্পর্শ করেছে।”
ঐতিহাসিক গল্প নিয়ে নির্মিত হলেই সিনেমা সাফল্য পায় না। ব্যাখ্যা করে রমেশ বালা বলেন, “দুই ধর্মের দুই রাজার সংবেদনশীল ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বকে, দর্শকদের আবেগপ্রবণ করেছে। সাধারণ পিরিয়ড ড্রামার তুলনায়, ‘ছাবা’ সিনেমায় গভীর সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সংযোগ থাকার কারণে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু সব ঐতিহাসিক সিনেমা এই সাফল্যে পায় না। এটি নির্ভর করে— গল্প বলার ধরন, অভিনয় এবং দর্শকদের অনুভূতির উপর।”
“ছাবা’ সিনেমার সাফল্য ভিকি কৌশলকে ‘ব্যাঙ্কেবল তারকা’ হিসেবে তার অবস্থান আরো দৃঢ় করেছে। বক্স অফিস বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে ভিকির আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের দরজা খুলে যাবে। রমেশ বালা বলেন, “ছাবা’ সিনেমায় ভিকি কৌশলের শক্তিশালী অভিনয় তার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করেছে। সিনেমাটির বক্স অফিস সাফল্য, সমালোচকদের প্রশংসা তার অবস্থানকে আরো দৃঢ় করেছে। যদিও খান বা হৃতিক রোশানের সমকক্ষ হতে পারেননি ভিকি। তবে আরো কয়েকটি সফল সিনেমা তাকে সেই স্তরে নিয়ে যেতে পারে! আগামী কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে যদি সফল কাজ উপহার দিতে পারেন, তাহলে ভিকি বলিউডের সবচেয়ে ‘ব্যাঙ্কেবল’ তারকাদের একজন হয়ে উঠবেন।”
‘ছাবা’ সিনেমা সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ ভিকি কৌশল। এ তথ্য উল্লেখ করে বক্স অফিস বিশ্লেষক বিশেক চৌহান ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “বিভিন্ন কারণে ‘ছাবা’ সিনেমা সাফল্য পেয়েছে। অনেকগুলো কারণের মধ্যে ভিকি কৌশল অন্যতম। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে তিনি তারকা নন। তিনি খুবই নির্ভরযোগ্য অভিনেতা। কারণ মুক্তির প্রথম দিনে দারুণ সাফল্য পায় এটি। নিঃসন্দেহ বড় ওপেনিং (৩১ কোটি রুপি) ছিল। এর আগে, তার কোনো সিনেমা দুই অঙ্কের ওপেনিং দিতে পারেনি। এমনকি ‘উরি’ সিনেমাও নয়। আলোচিত এ সিনেমাও একক অঙ্ক দিয়ে শুরু করেছিল।”
খানিকটা ব্যাখ্যা করে বিশেক চৌহান বলেন, “এই সাফল্য অনেক কারণের সমন্বয়ে পেয়েছে। যেমন— প্রযোজনা টিম, প্রযোজক, পরিচালক এবং গল্পের ঐতিহাসিক আবেদন। সিনেমাটিতে খুব ভালো পারফর্ম করেছেন ভিকি কৌশল। এটি যদি শাহরুখ খান বা সালমান খানের সিনেমা হতো, তাহলে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প হতো। এটি ভিকি কৌশলের সিনেমা এবং ৩০ কোটি রুপির বেশি আয়ের ওপেনিং আগে কখনো করেননি।”
ভিকি কৌশলের ক্যারিয়ার গ্রাফ বিশ্লেষণ করে বিশেক চৌহান বলেন, “উরি’ সিনেমার আয় যখন ২৫০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যায়, তখন ভিকি নিজের শক্ত অবস্থান পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই গতি ভেঙে ফেলেন তিনি। ‘উরি’ সিনেমা তাকে অ্যাকশন-হিরোর তকমা দিয়েছিল, যা সে কাজে লাগাতে পারেনি। এখন ‘ছাবা’ সিনেমার কল্যাণে আবার একই অবস্থানে ভিকি। আশা করি, ভিকি এবার তা কাজে লাগাবেন।”
এ প্রজন্মের অভিনেতাদের সমস্যা বিশ্লেষণ করে বিশেক চৌহান বলেন, “তরুণ প্রজন্মের অভিনেতাদের মাঝে তারকা শক্তির বিশাল শূন্যতা রয়েছে। ভিকি পাটনায় ছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘সত্যিকারের দর্শকরা ছোট শহরে বসবাস করে। যেমন— পাটনা, লখনৌ, কানপুর, বেরেলি, রায়পুর। তরুণ প্রজন্মের অভিনেতারা এই জায়গাগুলোর সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি। আপনি দর্শকদের সঙ্গে যত গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করবেন, তত বড় তারকা হয়ে উঠবেন। এটাই শাহরুখ খান, সালমান খান, অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগন এবং হৃতিক রোশানের শক্তি। তারা হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে এবং সেই কারণেই তারা এত বড়।”
‘ছাবা’ সিনেমার গল্প শিবাজির পুত্র ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের জীবনের ওপর ভিত্তি করে এগিয়েছে। ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের চরিত্রে ভিকি কৌশল ও মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের চরিত্র রূপায়ন করেছেন অক্ষয় খান্না। সম্ভাজি মহারাজের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাশমিকা মান্দানা।
তা ছাড়াও অভিনয় করেছেন— আশুতোষ রানা, ডিয়ানা পেন্টি, দিব্যা দত্ত প্রমুখ। দীনেশ বিজন প্রযোজিত এ সিনেমা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি)।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ফল য প য় অবস থ ন কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।