বলিউড অভিনেতা ভিকি কৌশল অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘ছাবা’। লক্ষ্মণ উতেকার পরিচালিত এই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন রাশমিকা মান্দানা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের ৪ হাজার পর্দায় মুক্তি পায় এটি।

খুব বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে নির্মিত হয়নি ‘ছাবা’। মুক্তির প্রথম দিনই বক্স অফিসে সাড়া ফেলে এটি। সেই ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে। গত ১৮ দিনে আয়ের গ্রাফ ওঠানামা করলেও জয়রথ চলমান। এ পর্যন্ত প্রায় ৯০০ কোটি টাকা আয় করেছে এটি। পূর্বে ভিকি কৌশলের কোনো সিনেমা বক্স অফিসে এত টাকা আয় করেনি। সিনেমাটি কেন সাফল্য পেয়েছে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন ভারতীয় বক্স অফিস বিশ্লেষকরা।

বক্স অফিস বিশ্লেষক রমেশ বালা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “ছাবা’ সিনেমার শক্তিশালী বিষয়বস্তু সিনেমাটির সঙ্গে দর্শকদের যুক্ত করেছে। ইতিহাস ও ধর্মের মিশ্রণ দর্শক হৃদয়ে অনুরণিত হয়েছে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে, যেখানে শিবাজি মহারাজকে সম্মান করা হয়। গল্পটি সেখানকার স্পর্শকাতর ইতিহাসকে স্পর্শ করেছে।”

ঐতিহাসিক গল্প নিয়ে নির্মিত হলেই সিনেমা সাফল্য পায় না। ব্যাখ্যা করে রমেশ বালা বলেন, “দুই ধর্মের দুই রাজার সংবেদনশীল ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বকে, দর্শকদের আবেগপ্রবণ করেছে। সাধারণ পিরিয়ড ড্রামার তুলনায়, ‘ছাবা’ সিনেমায় গভীর সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সংযোগ থাকার কারণে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু সব ঐতিহাসিক সিনেমা এই সাফল্যে পায় না। এটি নির্ভর করে— গল্প বলার ধরন, অভিনয় এবং দর্শকদের অনুভূতির উপর।”

“ছাবা’ সিনেমার সাফল্য ভিকি কৌশলকে ‘ব্যাঙ্কেবল তারকা’ হিসেবে তার অবস্থান আরো দৃঢ় করেছে। বক্স অফিস বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে ভিকির আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের দরজা খুলে যাবে। রমেশ বালা বলেন, “ছাবা’ সিনেমায় ভিকি কৌশলের শক্তিশালী অভিনয় তার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করেছে। সিনেমাটির বক্স অফিস সাফল্য, সমালোচকদের প্রশংসা তার অবস্থানকে আরো দৃঢ় করেছে। যদিও খান বা হৃতিক রোশানের সমকক্ষ হতে পারেননি ভিকি। তবে আরো কয়েকটি সফল সিনেমা তাকে সেই স্তরে নিয়ে যেতে পারে! আগামী কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে যদি সফল কাজ উপহার দিতে পারেন, তাহলে ভিকি বলিউডের সবচেয়ে ‘ব্যাঙ্কেবল’ তারকাদের একজন হয়ে উঠবেন।”

‘ছাবা’ সিনেমা সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ ভিকি কৌশল। এ তথ্য উল্লেখ করে বক্স অফিস বিশ্লেষক বিশেক চৌহান ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “বিভিন্ন কারণে ‘ছাবা’ সিনেমা সাফল্য পেয়েছে। অনেকগুলো কারণের মধ্যে ভিকি কৌশল অন্যতম। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে তিনি তারকা নন। তিনি খুবই নির্ভরযোগ্য অভিনেতা। কারণ মুক্তির প্রথম দিনে দারুণ সাফল্য পায় এটি। নিঃসন্দেহ বড় ওপেনিং (৩১ কোটি রুপি) ছিল। এর আগে, তার কোনো সিনেমা দুই অঙ্কের ওপেনিং দিতে পারেনি। এমনকি ‘উরি’ সিনেমাও নয়। আলোচিত এ সিনেমাও একক অঙ্ক দিয়ে শুরু করেছিল।”

খানিকটা ব্যাখ্যা করে বিশেক চৌহান বলেন, “এই সাফল্য অনেক কারণের সমন্বয়ে পেয়েছে। যেমন— প্রযোজনা টিম, প্রযোজক, পরিচালক এবং গল্পের ঐতিহাসিক আবেদন। সিনেমাটিতে খুব ভালো পারফর্ম করেছেন ভিকি কৌশল। এটি যদি শাহরুখ খান বা সালমান খানের সিনেমা হতো, তাহলে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প হতো। এটি ভিকি কৌশলের সিনেমা এবং ৩০ কোটি রুপির বেশি আয়ের ওপেনিং আগে কখনো করেননি।”

ভিকি কৌশলের ক্যারিয়ার গ্রাফ বিশ্লেষণ করে বিশেক চৌহান বলেন, “উরি’ সিনেমার আয় যখন ২৫০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যায়, তখন ভিকি নিজের শক্ত অবস্থান পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই গতি ভেঙে ফেলেন তিনি। ‘উরি’ সিনেমা তাকে অ্যাকশন-হিরোর তকমা দিয়েছিল, যা সে কাজে লাগাতে পারেনি। এখন ‘ছাবা’ সিনেমার কল্যাণে আবার একই অবস্থানে ভিকি। আশা করি, ভিকি এবার তা কাজে লাগাবেন।”

এ প্রজন্মের অভিনেতাদের সমস্যা বিশ্লেষণ করে বিশেক চৌহান বলেন, “তরুণ প্রজন্মের অভিনেতাদের মাঝে তারকা শক্তির বিশাল শূন্যতা রয়েছে। ভিকি পাটনায় ছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘সত্যিকারের দর্শকরা ছোট শহরে বসবাস করে। যেমন— পাটনা, লখনৌ, কানপুর, বেরেলি, রায়পুর। তরুণ প্রজন্মের অভিনেতারা এই জায়গাগুলোর সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি। আপনি দর্শকদের সঙ্গে যত গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করবেন, তত বড় তারকা হয়ে উঠবেন। এটাই শাহরুখ খান, সালমান খান, অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগন এবং হৃতিক রোশানের শক্তি। তারা হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে এবং সেই কারণেই তারা এত বড়।”

‘ছাবা’ সিনেমার গল্প শিবাজির পুত্র ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের জীবনের ওপর ভিত্তি করে এগিয়েছে। ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের চরিত্রে ভিকি কৌশল ও মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের চরিত্র রূপায়ন করেছেন অক্ষয় খান্না। সম্ভাজি মহারাজের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাশমিকা মান্দানা।

তা ছাড়াও অভিনয় করেছেন— আশুতোষ রানা, ডিয়ানা পেন্টি, দিব্যা দত্ত প্রমুখ। দীনেশ বিজন প্রযোজিত এ সিনেমা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি)।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ফল য প য় অবস থ ন কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ