রিমান্ডে নিয়ে নারী আইনজীবীর কাছে চাঁদা দাবি, এসআইসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 5th, March 2025 GMT
রিমান্ডে এনে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নারী আইনজীবীর কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে পুলিশের এক উপপরিদর্শকসহ (এসআই) পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনার ১১ মাস পর গতকাল মঙ্গলবার রাজবাড়ীর আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী মুক্তা পারভীন।
বিচারক মামলা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন। রাজবাড়ী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোন্দকার হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামি মাহফুজুর রহমান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) কর্মরত। বাকি চার আসামি হলেন রাজশাহীর ছোট বনগ্রামের শেখ আবদুল্লাহ, শাহমখদুম এলাকার জাহিদ উল আলম, রাজপাড়া থানার রোমান ইসলাম ও মো.
মামলার আরজি সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল আইনজীবী মুক্তা পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এসআই মাহফুজুর রহমান ২০২৪ সালের ১৬–১৮ এপ্রিল রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করেন। রিমান্ড কক্ষে উপস্থিত থাকার আইনানুগ সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও শেখ আব্দুল্লাহ, জাহিদ উল আলম, রোমান ইসলাম ও মো. ছালাম সেখানে ছিলেন।
এর আগে ধর্ষণচেষ্টা, শ্লীলতাহানি ও ৩০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর গ্রহণের অভিযোগ এনে আইনজীবী মুক্তা পারভীন গত ১৩ জানুয়ারি রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা করেন। এতে এসআই মাহফুজুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
মুক্তা পারভীন বলেন, ‘প্রথমে জানুয়ারি মাসে মামলা করেছিলাম। প্রায় দুই মাস পার হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হননি। তাঁরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নানাভাবে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছেন। তাই আবারও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’
এ বিষয়ে এসআই মাহফুজুর রহমান বলেন, চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুক্তা পারভীন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আছে। রেলওয়ে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁরা ৭০-৮০ জনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী, সিলেট, রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক প্রতারণা মামলা আছে।
মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, ‘মুক্তা পারভীনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় তিনটি প্রতারণা মামলা আছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা থাকাকালীন আমাকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। এখন আমাদের হয়রানি করতে তিনি মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ভালো করে তদন্ত হলেই সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অন্তত ছয়টি ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একই পদক্ষেপের আওতায় বিশ্বজুড়ে মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের পেট্রোলিয়াম পণ্য কেনাবেচা ও বিপণনের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে’ ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নিয়েছে। ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে।
নিষেধাজ্ঞার শিকার কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের কিছু বড় পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস, জুপিটার ডাই কেম, রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম ও কাঞ্চন পলিমার্স।
নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের কিছু বড় পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল, বিশেষ করে মিথানল কিনেছে।
জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধেও এ সময়ে টলুইনসহ ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পণ্য আমদানির অভিযোগ রয়েছে।
রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি মিথানল ও টলুইনসহ ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ কিংবা যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ হবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান—যেগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তা–ও একইভাবে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য, বিশেষ করে মিথানল আমদানি করেছে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া কাঞ্চন পলিমার্স নামে একটি কোম্পানি ১৩ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পলিথিন পণ্য কিনেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ কিংবা যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ হবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তা–ও একইভাবে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।
এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির অংশ। এর মাধ্যমে ইরানের কথিত ‘ছায়া নৌবহর’ ও মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যারা বিশ্বব্যাপী ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৫ ঘণ্টা আগেমার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এসব পণ্য রপ্তানি থেকে ইরান যে রাজস্ব পায়, তা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়ানো ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তায় ব্যয় করা হয়।
ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আগের নিষেধাজ্ঞা চালু হওয়ার পর ভারত ইরানি তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস (এসডিএন) তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, এ নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য শাস্তি দেওয়া নয়; বরং আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
ভারতের পাশাপাশি তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এ বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল–বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
উল্লেখ্য, ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বাইরেও দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল তিনি এ ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে এবার ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন ট্রাম্প২২ ঘণ্টা আগেআগামীকাল ১ আগস্ট থেকে ভারতের পণ্যে নতুন এ পাল্টা শুল্কনীতি কার্যকর হবে। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ভারতকে ‘দণ্ড’ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে কী ধরনের দণ্ড দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।