মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের তিন থানা কমিটিতে মাদক ব্যবসায়ী-চিহ্নিত অপরাধীরা
Published: 5th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আওতাধীন সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এবং বন্দর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে সদর থানা কমিটিতে রড চোর ও মাদক ব্যবসায়ীদের স্থান দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শাখাওয়াত ইসলাম রানা ও সদস্য সচিব মমিনুর রহমান বাবু।
রানা একাধিকবার মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন সন্ত্রাসেরও অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল সদর থাকা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও বন্দর উপজেলা শাখার ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয়।
জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও মাহবুব হাসান জুলহাসকে সদস্য সচিব করে সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। এই কমিটির চার নম্বর যুগ্ম আহবায়ক জুয়েল শেখ দুই বছর আগে রড চোরের দায়ে এলাকাবাসীর কাছে আটক হয়েছিলেন।
সেই ভিডিও এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়েরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে জুয়েলকে কমিটিতে পদ দিয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রানা। এই কমিটির ছয় নাম্বার সদস্য নুরুজ্জামান টনি কুখ্যাত সন্ত্রাসী আজমীর ওসমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে ১৮নং ওয়ার্ডে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে। তাকে সদর থানার সদস্য করার পাশাপাশি ১৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি করতে চাইছেন রানা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও বন্দর উপজেলা কমিটি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বন্দর উপজেলা আহবায়ক কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক মোবরক মাহমুদ পবন গত বছর এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৬ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম, বন্দর উপজেলার ৯ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মস্তান ও সদস্য মো.
এতে দেখা যায় একটি পোস্টারে ২১শে ফেব্রুয়ারির শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান শামসুল আলম। তাতে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও জয়ের ছবি রয়েছে। এ ছাড়াও সেই পোস্টারে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়ার ছবি রয়েছে।
অন্যদিকে বন্দর উপজেলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে তোলা নুর মস্তান ও মো. নুরুল ইসলাম খানের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এনিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম, সদস্য মো. নুরুল ইসলাম খান এবং বন্দর উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নূর মস্তানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে তারা। এতেও দমানো যাচ্ছে না শাখাওয়াত হোসেন রানাকে।
জানাগাছে, বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের স্থান দিতে উঠে পরে লেগেছেন তিনি। রানা নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টরগুলোতে ওসমানদের মতই মাফিয়া রূপে আবির্ভাব হচ্ছেন। এসব সেক্টরগুলোকে দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। যতই দিন যাচ্ছে, ততই রাজনৈতিক বেপরোয়া হয়ে উঠছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের এ নেতা।
গত ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত রানার বিরুদ্ধে ডজন ডজন অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে থানাও বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ করেছে। এর আগে কমপক্ষে দুইবার মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রানা। বিস্তর অভিযোগ থাকার পরেও থানা পুলিশ কোন এক রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে দেখা যাচ্ছে না। তাই নানা অপকর্ম করেও বহাল থাকছেন তিনি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ বিএনপির বেশির নেতাকর্মীকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করে মাদকের মামলায় ফাসিয়েছে। রানার বিষয়টিও তেমন। তবে কারো বিরুদ্ধে যদি এসব অভিযোগ প্রমানিত হয় হাতলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবো। কারো অপরাদের দায় স্বেচ্ছাসেবক দল নিবে না।
তথ্য সূত্র: মানবজমিন
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ছ নত ই স দ ধ রগঞ জ থ ন ন র য়ণগঞ জ কম ট ত কম ট র ইসল ম সদস য সদর থ
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।