নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আওতাধীন সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এবং বন্দর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে সদর থানা কমিটিতে রড চোর ও মাদক ব্যবসায়ীদের স্থান দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শাখাওয়াত ইসলাম রানা ও সদস্য সচিব মমিনুর রহমান বাবু। 

রানা একাধিকবার মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন সন্ত্রাসেরও অভিযোগ রয়েছে।  গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল সদর থাকা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও বন্দর উপজেলা শাখার ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয়। 

জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও মাহবুব হাসান জুলহাসকে সদস্য সচিব করে সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। এই কমিটির চার নম্বর  যুগ্ম আহবায়ক জুয়েল শেখ দুই বছর আগে রড চোরের দায়ে এলাকাবাসীর কাছে আটক হয়েছিলেন। 

সেই ভিডিও এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়েরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে জুয়েলকে কমিটিতে পদ দিয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রানা। এই কমিটির ছয় নাম্বার সদস্য নুরুজ্জামান টনি কুখ্যাত সন্ত্রাসী আজমীর ওসমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। 

তার বিরুদ্ধে ১৮নং ওয়ার্ডে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে। তাকে সদর থানার সদস্য করার পাশাপাশি ১৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি করতে চাইছেন রানা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও বন্দর উপজেলা কমিটি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

বন্দর উপজেলা আহবায়ক কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক মোবরক মাহমুদ পবন গত বছর এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৬ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম, বন্দর উপজেলার ৯ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মস্তান ও সদস্য মো.

নুরুল ইসলাম খানের বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

এতে দেখা যায় একটি পোস্টারে ২১শে ফেব্রুয়ারির শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান শামসুল আলম। তাতে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও জয়ের ছবি রয়েছে। এ ছাড়াও সেই পোস্টারে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়ার ছবি রয়েছে। 

অন্যদিকে বন্দর উপজেলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে তোলা নুর মস্তান ও মো. নুরুল ইসলাম খানের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এনিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম, সদস্য মো. নুরুল ইসলাম খান এবং বন্দর উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নূর মস্তানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে তারা। এতেও দমানো যাচ্ছে না শাখাওয়াত হোসেন রানাকে।

জানাগাছে, বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের স্থান দিতে উঠে পরে লেগেছেন তিনি। রানা নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টরগুলোতে ওসমানদের মতই মাফিয়া রূপে আবির্ভাব হচ্ছেন। এসব সেক্টরগুলোকে দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। যতই দিন যাচ্ছে, ততই রাজনৈতিক বেপরোয়া হয়ে উঠছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের এ নেতা।

 গত ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত রানার বিরুদ্ধে ডজন ডজন অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে থানাও বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ করেছে। এর আগে কমপক্ষে দুইবার মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রানা। বিস্তর অভিযোগ থাকার পরেও থানা পুলিশ কোন এক রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে দেখা যাচ্ছে না। তাই নানা অপকর্ম করেও বহাল থাকছেন তিনি। 

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী  বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ বিএনপির বেশির নেতাকর্মীকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করে মাদকের মামলায় ফাসিয়েছে। রানার বিষয়টিও তেমন। তবে কারো বিরুদ্ধে যদি এসব অভিযোগ প্রমানিত হয় হাতলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবো। কারো অপরাদের দায় স্বেচ্ছাসেবক দল নিবে না। 

তথ্য সূত্র: মানবজমিন
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ছ নত ই স দ ধ রগঞ জ থ ন ন র য়ণগঞ জ কম ট ত কম ট র ইসল ম সদস য সদর থ

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ

ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না। 
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস চালু হচ্ছে ১০ মাস পর
  • অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
  • আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
  • মে দিবসের সমাবেশকে সফল করতে মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভা 
  • নারায়ণগঞ্জে বালক (অনূর্ধ্ব-১৫) ফুটবল প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
  • নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে তরুণের মৃত্যু
  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ