সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মবধির শিশুর কানে শততম ইমপ্ল্যান্ট অস্ত্রোপচার হয়েছে। গতকাল বুধবার হাসপাতালে তিন বছর সাত মাস বয়সী শিশু মুনতাহার অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে হাসপাতালটি এ মাইলফলক অর্জন করেছে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানান, জন্ম থেকে পাঁচ বছর বয়সী যেসব শিশু বধিরতায় ভোগে, এমন শিশুদের চিকিৎসায় কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। শুরুতে কেবল ঢাকাতেই এ চিকিৎসা হতো। ঢাকার বাইরে সিলেট ও চট্টগ্রামে সরকারিভাবে এমন চিকিৎসা চালুর জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়ন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে সিলেটে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ২৫ মে থেকে সিলেটে এ চিকিৎসা শুরু হয়। গতকাল শততম রোগীকে এ চিকিৎসা দেওয়া হয়।

শিশু মুনতাহার বাড়ি মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার আজিরগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম মাসুদুর রহমান। মুনতাহার ইমপ্ল্যান্টটি সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন হাসপাতালের নাক, কান, গলা ও হেড নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান নূরুল হুদা নাঈম। সার্জারি দলে অন্য চিকিৎসকের মধ্যে ছিলেন জহিরুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম, টি এম ইমরান আহমদ, এনামুল ইসলাম, ময়নুল ইসলাম প্রমুখ। অস্ত্রোপচারে আরও ছিলেন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সায়্যেদা রাহিমা আক্তার (রুমী), অডিওলজিস্ট রুবাইয়্যা রহমান ও জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স সুপ্তা চক্রবর্তী।

চিকিৎসক নূরুল হুদা নাঈম বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত এ কার্যক্রমে পাঁচ বছরের নিচে জন্মবধির শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। গতকাল শিশু মুনতাহার কানে ইমপ্ল্যান্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শততম রোগীর সেবা দেওয়া হয়েছে। মুনতাহা এখন সুস্থ আছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ভবিষ্যতেও এ চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকবে।

নাক, কান ও গলা বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কক্লিয়ার প্রতিস্থাপন হল একটি ডিভাইস বা যন্ত্র যা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কক্লিয়ায় (কানের অভ্যন্তর ভাগে) প্রবেশ করানো হয়। যন্ত্রটির কাজ হলো শব্দগুলিকে বৈদ্যুতিক স্পন্দনে রূপান্তরিত করা, যার ফলে মস্তিষ্ক সহজে তার ব্যাখ্যা করতে পারে।

চিকিৎসকেরা আরও বলেন, বাংলাদেশে এক দশক আগেও কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন চিকিৎসা প্রচলিত ছিল না। আগে বিদেশে এ চিকিৎসায় খরচ হতো প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এখন দেশেই সরকারিভাবে এ চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। দেশে এখন এ চিকিৎসাবাবদ বেসরকারিভাবে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়। সরকার নামমাত্র মূল্যে এ চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নাক, কান ও গলা বিভাগের অধীন আলাদা একটা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে অস্ত্রোপচারের কক্ষ। যেসব শিশুর বধিরতা আছে, তাদের অভিভাবকেরা হাসপাতালে নাম নিবন্ধন করাতে পারবেন। পরে গরিব ও নির্বাচিত শিশুদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ চিকিৎসা দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমপ ল য ন ট ল ইসল ম চ ক ৎসক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন

কর্দোভার সংকীর্ণ গলিতে এক নারী দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর হাতে একটি কাঠের বাক্স, ভেতরে হাতে তৈরি মলম ও ঔষধি গাছ। তিনি আল-জাহরাভির কন্যা, একজন ধাত্রী, যিনি প্রসূতি মায়েদের সেবা করছেন। তাঁর কাজ শুধু শারীরিক নিরাময় নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের আস্থা ও আশার প্রতীক।

মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বে মুসলিম নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এমন অগণিত গল্প রচনা করেছেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সমাজের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। তৃতীয় ও শেষ পর্বে আমরা তাঁদের প্রভাব, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে তুলনা এবং তাদের ঐতিহাসিক স্বীকৃতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করব।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নারীদের ছাপ

মুসলিম নারী চিকিৎসকদের কাজ মুসলিম বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থাকে একটা কাঠামো দিয়েছে। রুফায়দা আল-আসলামিয়া (রা.)-এর মোবাইল হাসপাতালের ধারণা আধুনিক ফিল্ড হাসপাতালের পূর্বসূরি। তাঁর তাঁবু যা মদিনার মসজিদে নববিতে স্থাপিত হয়েছিল, স্বাস্থ্যসেবার মডেল হিসেবে কাজ করেছে।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারিতে মসজিদগুলো চিকিৎসা ও টিকাকরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা রুফায়দার মসজিদভিত্তিক তাঁবুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

এই মডেল পরবর্তী সময়ে আব্বাসীয় যুগের বিমারিস্তানে (হাসপাতাল) প্রতিফলিত হয়, যেখানে শিহাবুদ্দিন আল-সায়িগের (মৃ. ১৬২৭ খ্রি.) কন্যার মতো নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। (আল-সাঈদ, আত-তিব ওয়া রায়িদাতুহু আল-মুসলিমাত, পৃ. ১৮৯, আম্মান: দারুল ফিকর, ১৯৮৫)

নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আল-জাহরাভির (৯৩৬-১০১৩ খ্রি.) গ্রন্থ আত-তাসরিফ নারী চিকিৎসকদের জন্য শিক্ষার ভিত্তি ছিল, বিশেষ করে প্রসূতি ও গাইনোকোলজিতে। এই গ্রন্থ ইউরোপে অনূদিত হয়ে রেনেসাঁসের চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রভাব ফেলেছে। ১৯০৮ সালে গ্রন্থটির আধুনিক সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে কায়রো ‘দারুল কুতুব’ থেকে।

আন্দালুসে উম্ম হাসান বিনত কাজি তানজালি (১৪ শতক) চিকিৎসাশিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম তৈরি করেন, যা শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। (আবু বকর ও আল-সাদি, আন-নিসা ওয়া মিহনাত আল-তিব, পৃ. ২১২, কায়রো: দারুল কুতুব, ১৯৯৯)

এই কাজগুলো আধুনিক পাবলিক হেলথ সিস্টেমের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুনযে নারী সাহাবির বিয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন রাসুল (সা.)২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন দফা দাবিতে সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ডাক
  • উদ্ধার হলো এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স
  • মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন