রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বুধবার রাতে সারজিস আলমের উপস্থিতি ঘিরে একপক্ষের প্রতিবাদী স্লোগান ও পরবর্তী সময়ে মারামারির ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মো. মুশতাক তাহমিদ নামের এমবিএর ওই শিক্ষার্থীর পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে। সেখানে ১৩টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আহত মুশতাক তাহমিদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও চার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

হামলার জন্য মুশতাক তাহমিদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা পরিচয়ধারী আহমেদ শাকিল ও তাঁর সহযোগী মাসরুরকে দায়ী করেছেন। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনায় থানায় মামলা গ্রহণ এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন তিনি।

গতকাল রাতের ঘটনার বিষয়ে মুশতাক তাহমিদ জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গতকাল রাত আটটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘ঘাট পাড়ে’ যান। সেখানে অনেকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তিনি কেন আগেই এখানে আসেননি, গণ–অভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারকে দেখভালসহ নানা বিষয়ে তাঁর কাছে অনুযোগ করেন শিক্ষার্থীদের অনেকে। এই আলাপচারিতার এক পর্যায়ে রাত ১০টার পর সারজিস আলম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর ফটকের সামনে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে ছাত্রদলের পরিচয় দিয়ে ৩৫–৪০ জনের মতো ছেলে সারজিস আলমের উপস্থিতির প্রতিবাদ জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। ‘ঢাবির দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’সহ বিভিন্ন উসকানিমূলক স্লোগান দেন তাঁরা।

একপর্যায়ে ওই প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সারজিস আলম ও তাঁর সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয় জানিয়ে মুশতাক তাহমিদ বলেন, তাঁরা সারজিস আলমের ওপর আক্রমণ করতে এলে তিনি থামানোর জন্য এগিয়ে যান। তখন তাঁর ওপর হামলা হয়। ‘এ সময় আহমেদ শাকিল আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন এবং মাসরুর মাথায় কামড় দেন,’ বলেন তাহমিদ।

হামলাকারীদের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কেউ ছিলেন না জানিয়ে মুশতাক তাহমিদ বলেন, ‘আহমেদ শাকিল ও মাসরুর রাজনৈতিক দলের হলেও তাঁদের আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা মনে করি না। আমি মনে করি, তারা সন্ত্রাসী। তাঁদের সন্ত্রাসী হামলায় আমার শরীরে ১৩টির মতো সেলাই লেগেছে। আমি নিজেও কোনো রাজনৈতিক দলের নই। আমি বিভিন্ন সময়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনসহ ছাত্রদের বিভিন্ন দাবির পক্ষে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলাম।’

এই হামলার এক পর্যায়ে সারজিস আলমকে নিরাপদে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয় বলে জানান মুশতাক তাহমিদ। তিনি বলেন, তাঁর জানামতে হামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষার্থী হালকা আহত হয়েছেন।

এ ঘটনার পর গতকাল গভীর রাতে ভাটারা থানায় আহমেদ শাকিল ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। ওই রাতেই থানাটিতে পাল্টা অভিযোগ দেয় অপর পক্ষ। তবে কোনো পক্ষের অভিযোগকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা, মুঠোফোন ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে আহত মুশতাক তাহমিদ বলেন, তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাতে মামলা করতে থানা থেকে বলা হয়, ওপর থেকে নির্দেশ আছে। সে কারণে মামলা নিতে পারবে না। অবিলম্বে মামলা নিয়ে এ বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহম দ শ ক ল গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ