‘১৩ সেলাই লেগেছে’ নর্থ সাউথের এক ছাত্রের, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
Published: 6th, March 2025 GMT
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বুধবার রাতে সারজিস আলমের উপস্থিতি ঘিরে একপক্ষের প্রতিবাদী স্লোগান ও পরবর্তী সময়ে মারামারির ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মো. মুশতাক তাহমিদ নামের এমবিএর ওই শিক্ষার্থীর পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে। সেখানে ১৩টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আহত মুশতাক তাহমিদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও চার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
হামলার জন্য মুশতাক তাহমিদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা পরিচয়ধারী আহমেদ শাকিল ও তাঁর সহযোগী মাসরুরকে দায়ী করেছেন। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনায় থানায় মামলা গ্রহণ এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন তিনি।
গতকাল রাতের ঘটনার বিষয়ে মুশতাক তাহমিদ জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গতকাল রাত আটটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘ঘাট পাড়ে’ যান। সেখানে অনেকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তিনি কেন আগেই এখানে আসেননি, গণ–অভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারকে দেখভালসহ নানা বিষয়ে তাঁর কাছে অনুযোগ করেন শিক্ষার্থীদের অনেকে। এই আলাপচারিতার এক পর্যায়ে রাত ১০টার পর সারজিস আলম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর ফটকের সামনে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে ছাত্রদলের পরিচয় দিয়ে ৩৫–৪০ জনের মতো ছেলে সারজিস আলমের উপস্থিতির প্রতিবাদ জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। ‘ঢাবির দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’সহ বিভিন্ন উসকানিমূলক স্লোগান দেন তাঁরা।
একপর্যায়ে ওই প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সারজিস আলম ও তাঁর সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডা হয় জানিয়ে মুশতাক তাহমিদ বলেন, তাঁরা সারজিস আলমের ওপর আক্রমণ করতে এলে তিনি থামানোর জন্য এগিয়ে যান। তখন তাঁর ওপর হামলা হয়। ‘এ সময় আহমেদ শাকিল আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন এবং মাসরুর মাথায় কামড় দেন,’ বলেন তাহমিদ।
হামলাকারীদের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কেউ ছিলেন না জানিয়ে মুশতাক তাহমিদ বলেন, ‘আহমেদ শাকিল ও মাসরুর রাজনৈতিক দলের হলেও তাঁদের আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা মনে করি না। আমি মনে করি, তারা সন্ত্রাসী। তাঁদের সন্ত্রাসী হামলায় আমার শরীরে ১৩টির মতো সেলাই লেগেছে। আমি নিজেও কোনো রাজনৈতিক দলের নই। আমি বিভিন্ন সময়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনসহ ছাত্রদের বিভিন্ন দাবির পক্ষে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলাম।’
এই হামলার এক পর্যায়ে সারজিস আলমকে নিরাপদে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয় বলে জানান মুশতাক তাহমিদ। তিনি বলেন, তাঁর জানামতে হামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষার্থী হালকা আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পর গতকাল গভীর রাতে ভাটারা থানায় আহমেদ শাকিল ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। ওই রাতেই থানাটিতে পাল্টা অভিযোগ দেয় অপর পক্ষ। তবে কোনো পক্ষের অভিযোগকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা, মুঠোফোন ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আহত মুশতাক তাহমিদ বলেন, তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাতে মামলা করতে থানা থেকে বলা হয়, ওপর থেকে নির্দেশ আছে। সে কারণে মামলা নিতে পারবে না। অবিলম্বে মামলা নিয়ে এ বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহম দ শ ক ল গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকায় লারিজ ফ্যাশনের পোশাক কারখানায় অসুস্থ হয়ে রিনা আক্তার (৩২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে তারা মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রিনা আক্তার অসুস্থ অবস্থায় কারখানায় কাজ করছিলেন। রোববার তিনি বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। তবে, কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকের আবেদনে সাড়া না দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেন। ওই নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। রিনা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন তিনি।
লারিজ ফ্যাশনের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদেরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লারিজ ফ্যাশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শিমুল বলেছেন, আমাদের একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয়। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেছেন, সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য গার্মেন্টস মালিকপক্ষ দায়ী, এমন অভিযোগ করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও আছে। শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেছেন। যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
ঢাকা/অনিক/রফিক