ইউক্রেন থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় ইউক্রেন তো বটেই, পুরো ইউরোপেরই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাঁচ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসেছেন ইউরোপের নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে দিনব্যাপী এ বৈঠকে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ কয়েক শ কোটি ডলার বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করছেন তাঁরা।

ইউরোপের প্রতিরক্ষা নিয়ে বিশেষ এ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। বৈঠকে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিতের পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ কিয়েভকে কীভাবে সহায়তা করবে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের আগে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন ইউরোপের নিরাপত্তা জোরদারে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা জানান। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে ৮৬০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। ইইউর এ পরিকল্পনাকে ‘নজিরবিহীন’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

ইইউ নেতাদের এই সম্মেলন চলাকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘মস্কোর নিয়ন্ত্রণে থাকা (ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের অনেক ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার দখলে রয়েছে) কোনো কিছুই ছেড়ে দেওয়া হবে না।’ ইউক্রেনের সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের এমন একধরনের শান্তি প্রতিষ্ঠায় জয়ী হতে হবে যেটা আমাদের জন্য উপযুক্ত।’

ইউরোপের সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সম্মেলন চলাকালে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, তাঁর দেশ শান্তি চায়; কিন্তু ইউক্রেনের বিনিময়ে নয়। যেকোনো শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে যুক্ত করতে ইউরোপীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া ও ইউক্রেনবিষয়ক দূত কেইথ কেলগ ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত চুক্তিতে সই করতে জেলেনস্কির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই চুক্তি সই করা ছাড়া মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে জেলেনস্কির সম্পর্ক আর এগোনোর সুযোগ নেই।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহযোগিতা ও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ইউরোপের নেতাদের এমন তৎপরতা শুরু হয় ২৮ ফেব্রুয়ারির পর। ওই দিন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান জেলেনস্কি। ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা ও খনিজ সম্পদসংক্রান্ত চুক্তি সই ভেস্তে যায়। এর জেরে ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন।

‘রি-আর্ম ইউরোপ’ পরিকল্পনা

ইউরোপের সামরিক সক্ষমতা জোরদারে ‘রি-আর্ম ইউরোপ’ নামে একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন। এ পরিকল্পনার আওতায় জোটভূক্ত দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে পারবে। প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগে ১৫০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি অন্য কর্মসূচি থেকে তহবিল প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে পারবে দেশগুলো।

এদিকে ইউরোপের নিরাপত্তায় ফ্রান্সের পারমাণবিক সক্ষমতা ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। তিনি বলেন, ইউরোপের মিত্রদেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য ফ্রান্স তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। মাখোঁ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে থাকবে। আর যদি তা না হয়, সে ক্ষেত্রেও আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’

ট্রাম্প–জেলেনস্কি বাগ্‌বিতণ্ডার দুই দিন পর রোববার লন্ডনে সম্মেলনে বসেছিলেন ইউরোপের নেতারা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আহ্বানে ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান তাঁরা। লন্ডন সম্মেলন থেকে যুদ্ধ বন্ধে চার দফা একটি পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর দ দ ব ড় ইউর প র ন ন ইউর প র ইউক র ন র ইউর প য় আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ