সাতক্ষীরায় অপরিকল্পিতভাবে মরিচ্চাপ নদ খনন:
Published: 7th, March 2025 GMT
সাতক্ষীরায় অপরিকল্পিতভাবে মরিচ্চাপ নদ খনন করায় এর ওপর নির্মিত পাঁচটি সেতু ভেঙে পড়েছে। এতে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার বাসীন্দাদের তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া যারা নৌকায় পারাপার হচ্ছেন তারাও ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, জনসাধারণের চলাচলের জন্য একটি কাঠের তৈরি সেতু নির্মাণে করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা ও আশাশুনি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস সূত্রে জানা গেছে, মরিচ্চাপ নদ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর সঙ্গে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। সাতক্ষীরার বাঁকাল থেকে আশাশুনির শোভনালি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মরিচ্চাপ নদের ওপর নয়টি সেতু ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা
দুই বছর আগে মরিচ্চাপ নদী খননের কারণে বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি সেতু ভেঙে পড়ে। এরপর এসব স্থানে আর কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ জাতয়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। তবে সেতু গুলো ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থী মরিয়াম খাতুন, তানিয়া, জুঁই ও শ্রিপরা পাল জানায়, সব সময় তাদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। বিশেষ করে অনেক সময় জোয়ারের সময় ভিজে যেতে হয়। নদী পারাপারের সময় কেউ না কেউ প্রতিদিন নদীতে পড়ে আহত হয়। তারা দ্রুত সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছে।
বাঁকড়া ও কামালকাটিতে নির্মিত সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে আছে
সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, “আশাশুনি উপজেলার শোভনালি ইউনিয়নের মরিচ্চাপ নদের ওপর নির্মিত বাঁকড়া ও কামালকাটিতে নির্মিত সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “এর মধ্যে বাঁকড়া সেতুর দুই পাশে বাঁশের পাটাতন ও মাঝখানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। এই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দ্রুত নতুন করে সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।”
সেতুগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্মাণ করা
সাতক্ষীরার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, “মরিচ্চাপ নদীর উপার নির্মাণ করা সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরাসহ মানুষ চলাচল করছে এমন খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নির্বাহী প্রকৌশলী সাথে সেতু নির্মাণের জন্য কথা হয়েছে। তবে চলাচলের জন্য দ্রুত কাঠের তৈরি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/শাহীন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ম ণ কর উপজ ল র ব যবস থ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা
একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।
এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন
প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।
হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।
জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’
আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’