পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্রদের রক্ষা করতে চান না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের মিত্রদের সুরক্ষায় তার ইচ্ছা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, নিজের প্রতিরক্ষায় ন্যাটো সদস্যরা যদি যথেষ্ট অর্থ ব্যয় না করে তবে তিনি তাদের সুরক্ষা দেবেন না।

ওয়াশিংটনে ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘এটা সাধারণ বোধের বিষয়, তাই না?’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তারা যদি অর্থ না দেয়, আমি তাদের সুরক্ষা দিতে যাব না। না, আমি তাদের সুরক্ষা দিতে যাব না।’

ট্রাম্প বলেন, তিনি বছরের পর বছর এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছেন এবং আগের মেয়াদে (২০১৭-২১) প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ন্যাটো মিত্রদের তিনি এটা জানিয়েছিলেন। ওই প্রচেষ্টার কারণে ৭৫ বছরের পুরোনো ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের অন্য সদস্যরা আরও বেশি ব্যয় করতে উৎসাহিত হয়েছেন। তবে এখনো তা যথেষ্ট নয়। তাদের আরও অর্থ ব্যয় করতে হবে।

ন্যাটো জোটের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি পারস্পরিক সহায়তার ধারা রয়েছে। মিত্র ভূখণ্ডে সোভিয়েত আক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল এ জোট।

ট্রাম্পের মন্তব৵  ইউরোপ থেকে এশিয়ার রাজধানীগুলোতে সতর্ক ঘণ্টা বাজাতে পারে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বাগ্‌বিতণ্ডার পর কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করতে ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে শঙ্কিত অন্য নেতারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্বিগ্ন ইউরোপের নেতারা আরও বেশি নিরাপত্তা ব৵য় বাড়ানোর ও ইউক্রেনের পাশে থাকার পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, ‘আমি জানি, ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে কারও কারও উদ্বেগ থাকতে পারে। তাই আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ট্রান্স–আটলান্টিক সম্পর্ক এবং ট্রান্স–আটলান্টিক অংশীদারত্ব আমাদের জোটের ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এবং ন্যাটোর প্রতি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ট্রাম্প তাঁর প্রত্যাশাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইউরোপে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি কিছু করতে হবে।’

ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ন্যাটো সদস্যরা তাঁর বন্ধু। কিন্তু প্রশ্ন তোলেন, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ সংকটের মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করবে কি না। তিনি বলেন, ‘আপনি কি মনে করেন, তারা এসে আমাদের রক্ষা করবে? তাদের তো করার কথা। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই।’

ট্রাম্প বলেন, ব্যয়ের সমস্যাটি সমাধান করা গেলে তিনি ন্যাটোকে ভালো হিসেবে দেখেন। এ নিরাপত্তা জোট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বাণিজ্যে বাধা দিচ্ছে।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ন্যাটোর পারস্পরিক প্রতিরক্ষার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছিলেন।

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের এক বৈঠকে ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ৯/১১-এর পর আফগানিস্তানে যুদ্ধে ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ মার্কিন সেনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনুগত ও বিশ্বস্ত মিত্র’।

১২ দেশের দূতাবাস বন্ধ করা হচ্ছে

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আগামী মাসগুলোতে বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের ১২টির বেশি দেশে দূতাবাস বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী দূতাবাসগুলোতে কর্মী সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মানবাধিকার, শরণার্থী, বৈশ্বিক ফৌজদারি বিচার, নারীবিষয়ক সমস্যা এবং মানব পাচার প্রতিরোধের প্রচেষ্টার মতো ক্ষেত্রে কাজ করা ওয়াশিংটনে অবস্থিত বেশ কয়েকটি বিশেষজ্ঞ ব্যুরোকে একীভূত করার সম্ভাবনাও বিবেচনা করছে পররাষ্ট্র দপ্তর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট র ম প বল ন আম দ র আরও ব ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ