রুমুর বাগানে রোজই কোনো না কোনো ফুল ফোটে। যেদিন থেকে বাগানে ফুল ফোটা শুরু করেছে সেদিন থেকেই এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে। একটা নীলরঙের ছোটো পাখি এক গোলাপগাছের ডালে বসে। তবে সারাদিন বসে থাকে না। রুমু যখন খুব ভোরে গাছে পানি দিতে আসে তখনই সে নীল পাখিটার দেখা পায়। রুমু পাখিটার নাম জানে না। রুমুর মাও বলতে পারেনি। তাই রুমু ওর নাম রেখেছে নীল পাখি।
নীল পাখির সাথে রুমুর খুব ভাব। সে গাছে পানি দিতে দিতে পাখির সাথে গল্প করে। তার নাম জিজ্ঞেস করে, তার বাসা কোথায় তাও জিজ্ঞেস করে। পাখিটাও শিস বাজিয়ে রুমুর কথার উত্তর দেয়। কিন্তু রুমু বুঝতে পারে না। শুধু হাসি হাসি মুখে মাথা নাড়ায়।
রুমুর খুব পাখি হতে ইচ্ছে করে। পাখিদের কতো মজা! যেখানে খুশি যেতে পারে। শুধু ডানা মেললেই হলো। রুমু প্রায়ই পাখিকে ছড়া শোনায়–
‘পাখি তুই কই যাস
উড়ে উড়ে উড়ে
মাঠঘাট পথ ছেড়ে
ওই দূরে দূরে.
আর পাখি রুমুকে শোনায় গান। কী দারুণ বন্ধুত্ব ওদের!
একদিন ভোরে রুমু আর নীল পাখি গল্প করছে। হঠাৎ ঝড় নেমে এলো। সেকি বাতাস!
রুমু তাড়াতাড়ি ঘরে এসো ঝড় নেমে এসেছে। বলতে বলতে মা রুমুকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসেন।
মা, নীল পাখিটা বাইরে রইল যে। আর আমার গোলাপগাছগুলো কি ভেঙে যাবে? না রুমু, ঝড়ে ছোটো গাছের কোনো ক্ষতি হবে না। আর নীল পাখিকে সৃষ্টিকর্তা সাহায্য করবেন। পৃথিবীর সব প্রাণীকে সৃষ্টিকর্তা বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
ঝড় থেমে যায়। রুমু দৌড়ে বাগানে গিয়ে দেখে, গাছগুলো সব ঠিক আছে। নীল পাখি কোথাও নেই।
সেই রাতে রুমু নীল পাখির জন্য মনে মনে দোয়া করে।
পরদিন ভোরে রুমু বাগানে যায়। দেখে, গোলাপগাছের ডালে নীল পাখিটা হাসি হাসি মুখে বসে আছে। রুমুর মনে পড়ে মায়ের কথা। সৃষ্টিকর্তা বিপদে পৃথিবীর সকল প্রাণীকে সাহায্য করেন। n
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে: সলিমুল্লাহ খান
লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষের মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল; ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং মেন্ডেট নিতে হবে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচন যে খুব নিখুঁত হয়েছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষের সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার–যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না গণ্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।