নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১২ বছর উপলক্ষে মোমশিখা প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ত্বকীসহ দেশে বহু হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন। আমরা ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ সব হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এ দাবি করেন। সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রথীন চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনা ত্বকীসহ দেশে বহু হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন। গুম, খুন, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠা করে বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ভয়াবহ এক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাষ্ট্রক্ষমতার মোহ তাঁকে উন্মাদ করে ফেলেছিল। হাজারো ছাত্র-তরুণদের হত্যা করেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি পুরোপুরি নির্ভর করেছিলেন পুলিশ ও মাফিয়া গোষ্ঠীর ওপর। জনগণ ছিল উপেক্ষিত। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারকে দিয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে রেখেছিলেন। সেই পরিবার আজকে তাঁর মতোই পালিয়ে গেছে।

রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ‘ওসমান পরিবারের সম্পত্তি নারায়ণগঞ্জের মানুষের রক্তে গড়া সম্পত্তি। আমাদের দাবি, ওসমান পরিবারের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা করতে হবে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। দলের সর্বোচ্চ মহল থেকে মন্ত্রী, এমপি, আমলা—সব পর্যায়ে তারা লুটের টাকা বণ্টন করেছে।’

রফিউর রাব্বি বলেন, ‘তাদের নিজ দলীয় নেতারা বলেছেন, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে “নাসিম ওসমান সেতু”, “শামসুজ্জোহা সড়ক” ও “নাগিনা জোহা সড়ক” নামকরণ করা হয়েছে। তখন আমি প্রশ্ন করেছিলাম, নারায়ণগঞ্জে এই মানুষগুলোর অবদান কী? কেন একসঙ্গে তিনটি রাস্তা ও সেতুর নাম একই পরিবারের নামে করা হলো। তারা তখন আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছিল। আমরা আজকে সরকারের কাছে এই খুনি পরিবারের নামে থাকা সেতু ও সড়কের নাম পরিবর্তন দাবি করছি।’

অনুষ্ঠানে সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ, বাসদের জেলার সদস্যসচিব আবু নাইম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু আজও অভিযোগপত্র পেশ করা হয়নি। গত ৫ আগস্ট সরকার বদলের পরে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়জন ঘাতককে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে কাজল হালদার নামের একজন জবানবন্দি দেন। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিকভাবে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!

সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। 

এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।  

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। 

এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন। 

এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। 

এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।

একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।

নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।

যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।  

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়। 

২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
  •  শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা চান নাই : টিপু 
  • নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাথে গিয়াসউদ্দিনের মতবিনিময় সভা
  • সোনারগাঁয়ে ইসলামী আন্দোলনের পরিচিতি সভা ও শপথ গ্রহণ  
  • বন্দর ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ 
  • তেল চোর দেলোয়ারকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন : টিপু
  • নারায়ণগঞ্জে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৫ বিএনপি নেতা বহিষ্কার
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু
  • কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও সদস্য ফরম বিতরণ
  • সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!