পুলিশের যে সমস্যাগুলোর কথা বলে না কেউ
Published: 9th, March 2025 GMT
৫ আগস্টের পর ক্ষমতার পালা বদলে যেভাবে সব দোষ পুলিশের গায়ে তুলে দিয়ে বাকি সবাই হাত ধুয়ে মুছে তুলসি পাতা বনে গেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো। অথচ একটি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুলিশ শুধু একটি প্রতিষ্ঠানমাত্র। কিন্তু ঘটনার পালাবদলে এমনভাবে বিষয়টাকে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আন্দোলনটি ছিল কেবলমাত্র পুলিশের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, সেখানেও পুলিশকে এককভাবে বৃহৎ অংশের জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে। আচ্ছা, নির্বাচনের অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কি শুধু একা পুলিশ যুক্ত ছিল? বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় পুলিশ নির্বাচন কমিশনের অধীন দায়িত্ব পালন করে। শুধু তা–ই নয়, কোনো একটি নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবগুলো প্রতিষ্ঠানই প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল। সেখান থেকে স্থানীয় বিচারিক কাঠামোও বাইরে ছিল না। নির্বাচনে যা কিছু হবে, সেটি সবার সম্মিলিত প্রয়াস যদি না হতো, তাহলে কি এমনটা সম্ভব হতো? বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় ছাড়া কি এমনটি করা সম্ভব ছিল?
এমন একটি বিষয় ঘটে গেল, অথচ সরকারি কোনো দপ্তর তা জানল না? এমনকি নির্বাচন কমিশনও না? স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও না?
ইদানীং বেশ কিছু ঘটনা পত্রপত্রিকা থেকে জানা যাচ্ছে, যাতে মনে হচ্ছে, পুলিশ সক্রিয় হতে পারছে না; কিন্তু যদি বিষয়টি উল্টোভাবে বলা হয়, পুলিশকে সক্রিয় হতে দেওয়া হচ্ছে না, তাহলে কি খুব ভুল হবে? পুলিশিং করার জন্য একই সময়ে একাধিক এনটিটিকে মাঠে থাকবে, তখন দায়িত্ব নিয়ে এক ধরনের পিলো পাসিং হবে। এটাই স্বাভাবিক।
যদি পুলিশের কেউ সরকারি আদেশের তোয়াক্কা না করে অন্যায় করে থাকে, তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন রয়েছে।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলেও সত্য, পুলিশ যদি বেআইনি আক্রমণের শিকার হয়, সে ক্ষেত্রে আইন থাকা সত্ত্বেও সেটির প্রয়োগ খুবই কম হচ্ছে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, পুলিশকে তার কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবে আক্রমণ ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।
কয়টি ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যের পাশে আমরা দাঁড়াতে পেরেছি? কিন্তু এখন যারা দায়িত্ব পালন করছেন, কিছু হলেই মানুষ তাদের গায়ে হাত তুলছে। এটি কি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা? অপরাধীরা যদি পুলিশকে ভয় পাওয়া ভুলে যায়, তাহলে তার ফল হবে ভয়ানক, মারাত্মক ও নির্মম।
৫ আগস্টের পরে পুলিশ এমন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, যা এই প্রতিষ্ঠানকে মুক্তিযুদ্ধের সময়েও হতে হয়নি। কিন্তু এত প্রতিকূলতা ভুলেও কিছু পুলিশ সদস্য ছাড়া প্রায় সবাই কাজে যোগ দিয়েছিলেন; কিন্তু এখন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। পুলিশকে গালি দেওয়া, পুলিশের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, শারীরিকভাবে আঘাত করা কিংবা লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনাগুলোকে ৫ আগস্টের দোহাই দিয়ে অনেকেই জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছেন।
এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের যতটা সুরক্ষা পাওয়ার কথা ছিল, সেটির কতটা তারা পাচ্ছে, সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
ঘটনার পরিক্রমায় ৫ আগস্ট ও তার পূর্ববর্তী সময়ে নিজের সহকর্মীদের নির্মম মৃত্যু যেমন পুলিশকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে, তেমনিভাবে সরকার পরিবর্তনের পর বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর নিজের সহকর্মীদের বিচারের মুখোমুখি হওয়াও তাদের প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। বদলিজনিত কারণে তাদের একদিকে যেমন নতুন একটি জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, অন্যদিকে দায়িত্ব পালনকালে তাদের প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের অপমান–অপদস্থ হতে হচ্ছে। পুলিশের যে সব সদস্য সুনির্দিষ্ট অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু এই দায় কি পুরো পুলিশ বাহিনীর?
এমন পরিস্থিতি শুধু পুলিশের জন্য নয়, একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কখনোই কাম্য নয়। পরিবর্তিত এই অভিনব পরিস্থিতি পৃথিবীর আর অন্য কোন দেশের পুলিশ মুখোমুখি হয়েছে কি না, তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এ জন্য এমন অবস্থায় পুলিশকে তার কাজে ফোকাস করার জন্য বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
পুলিশের বর্তমান নেতৃত্ব কাঠামোতে যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের পুলিশের দূরত্ব কমানোর জন্য দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে, যাঁরা মাঠে কাজ করেন, তাঁরা কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলো জেনে তাৎক্ষণিকভাবে তার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কোনো পুলিশ সদস্য যদি অন্যায়ের শিকার হন, তাহলে তাঁর রক্ষা ও অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। হয়তো অনেকে আমার সঙ্গে দ্বিমত হতে পারেন, তবুও মাঠপর্যায়ের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একধরনের হতাশা ও অবিশ্বাস রয়েছে।
এমন অবিশ্বাস, সন্দেহ ও হতাশা দূর করতে অবশ্যই মাঠপর্যায়ের সব স্তরের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব কমানো প্রয়োজন এবং একটি আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক বিনির্মাণের জন্য সামষ্টিক পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যই নিষ্পাপ—এমন দাবি করার পক্ষে আমি নই। কিন্তু পুলিশ যদি অন্যায় করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনি কাঠামো আছে; কিন্তু মানুষ যখন পুলিশকে আঘাত করে, তখন পরোক্ষভাবেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানায়। কাজেই দায়িত্ব পালনকালে পুলিশকে আক্রমণের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন কিংবা তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়। এখন এক স্থানে পুলিশকে আক্রমণের পর সেটির দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া মানুষ দেখতে পায় না, তখন সেই ঘটনা অন্য স্থানেও প্রতিধ্বনিত হয়।
এ জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও যৌক্তিকভাবে ভাবা উচিত ও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দিন শেষে, মনে রাখবেন, যারা পুলিশ হিসেবে আছেন, তারা আপনারই স্বজন, বন্ধুজন। তাঁরাও রক্তমাংসের মানুষ। তাঁদেরও পরিবার আছে। কাজেই পুলিশের সঙ্গে আমরা যেন মানুষ হিসেবে আচরণ করি। তাঁদের মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়েও যেন আমরা একটু ভাবি। মোটিভেটেড করতে না পারলে সমস্যা নেই, দয়া করে ডি-মটিভেটেড করবেন না।
মোঃ ইমরান আহম্মেদ, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ ও বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের পলিটিকস ও ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিভাগের পিএইচডি গবেষক। ইমেইল: [email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য ব যবস থ ৫ আগস ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
মবকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে একে উসকে দেওয়া হয়েছে
আমাদের সমাজে মব সহিংসতা (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) কেন ঘটছে? অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাকে। গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আমাদের ইতিহাসে আগেও মব সহিংসতার ঘটনাগুলো ছিল। তবে এখন এটা চরম আকার ধারণ করেছে। নানা আকারে হচ্ছে। কারণগুলো বিস্তৃত। সাধারণভাবে আপনি-আমিও কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে পারি। কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত দেখলে সোচ্চার হতে পারি। ওই ব্যক্তিদের পুলিশের হাতে আমরা তুলে দিতে পারি। অপরাধ প্রমাণিত হলে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করবে, পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাধারণ জনগণ হিসেবে পুলিশে সোপর্দ করার দায়িত্ব পালন করা যেতে পারে। তার মানে এই নয় যে যাকে অপরাধী মনে করা হচ্ছে, তাকে গণপিটুনি দেওয়া যাবে, হেনস্তা করা যাবে, নির্যাতন করা যাবে। অথচ এই জিনিসটাই করতে দেখা যাচ্ছে। আপনি একটা মানুষকে গণপিটুনি দিতে পারেন না। আর এটা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনি অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ প্রমাণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে অপরাধী বা আসামিও বলা যাবে না। আমাদের সংবিধান, ফৌজদারি আইন, দণ্ডবিধি—কোনো আইনে আপনাকে মব সৃষ্টি করে কারও বিচার করার অধিকার দেওয়া নেই। মবের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বরং সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। যতগুলো মব সৃষ্টি করা হয়েছে, ততবার বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটা কোনো নাগরিকের কাম্য নয়। এটা একধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ির সামনে বসে মব তৈরি করতে দেখা গেছে। বাসার ভেতরে গিয়ে মব তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন অফিসে হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে দেখেছি। সবার আগে স্কুল-কলেজে শুরু হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক বা জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বা প্রভাবশালী কাউকে হেনস্তা করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
তখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছিল, এটা মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাঁরা মনে করেছেন, এটা মব না, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এভাবে মবের ঘটনাকে অস্বীকার করে মবকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে। মবের মাধ্যমে মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে। মানুষ ভাবছে, বিচারব্যবস্থা খুবই দুর্বল। আমি ছেড়ে দিলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ওই ব্যক্তি (যাকে অপরাধী ভাবা হচ্ছে) বের হয়ে যাবে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, শাস্তি হবে না। যেটা করার আমাদেরই করতে হবে। আমাদেরই বিচার করতে হবে। মানুষ মনে করছে, বৈষম্য হচ্ছে। মানসিক হতাশা থেকে মানুষ রাস্তায় নামছে। মবের ঘটনার মধ্য দিয়ে তার অবস্থান ও মানসিক হতাশা প্রকাশ করতে চায়। মবের কোনো ঘটনার বিচার হতে দেখা যাচ্ছে না। কোনোটার বিচার দৃশ্যমান না। সে জন্য আরও বেশি ঘটনা ঘটছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও ভঙ্গুর দশায়।
মব সহিংসতার কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেকগুলো রাজনৈতিকভাবে পরিকল্পিত। সেগুলোকে স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। বাসায় ঢুকে ডাকাতি করা হয়েছে। দোকান লুটপাট করা হয়েছে। পুলিশের ভূমিকাও ছিল নিষ্ক্রিয় পর্যায়ে। পুলিশ নিজেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। দু–একটা ঘটনায় পুলিশ নিজেও মবের শিকার হয়েছে। একটি প্রতিবেদনে দেখেছিলাম, ৪৭৭ জন পুলিশ মবের শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক দলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার মব সহিংসতার বিরুদ্ধে। অনেক সময় কোনো অপরাধের অভিযোগে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কেউ যখন দেখেন অপরাধ করলেও তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে, তখন ওই ব্যক্তি অপরাধ করতে আর ভয় পান না। শাস্তির ভয় থাকে না বলে অপরাধ করতে থাকেন।
আরও পড়ুন‘পানিও দিতে দেয় নাই’, মব তৈরি করে হত্যায় আসামি গ্রেপ্তার মাত্র ১.২৭%১১ ঘণ্টা আগেমব সহিংসতা বন্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। মব সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। মব সহিংসতার ঘটনাগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মবের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে সরকার নির্দেশনা দিলে এবং সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিলে মব সহিংসতা কমবে।
রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আরও সচেতন হতে হবে। তাঁদের কর্মকাণ্ড মানুষ দেখছে। সামনে নির্বাচন। সব দলকে সাধারণ মানুষ পর্যবেক্ষণ করছে। কে কী ধরনের আচরণ করছেন, তা দেখা হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের মব সহিংসতার মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ানো উচিত নয়। কোনো বড় রাজনৈতিক দল যদি ঘোষণা দেয় যে আজ থেকে তারা মবের সঙ্গে থাকবে না। তাহলে তৃণমূলের একজন কর্মী তাঁর পদ হারানোর ভয়ে ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মব সহিংসতায় জড়ানোর আগে দুবার চিন্তা করবেন।
আরও পড়ুনগাইবান্ধায় চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা০২ নভেম্বর ২০২৫বিচারপ্রক্রিয়ার ত্রুটি দূর করতে হবে। থিওরি (তত্ত্ব) বলে, মানুষ যখন দেখে সে কোনোভাবে সমাজে তার ক্ষমতার চর্চা করতে পারছে না। পাশাপাশি দেখে যে একজন অপরাধী দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো সাজার সম্মুখীন হচ্ছে না। তখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিচারে গলদ থেকে গেলে মব সহিংসতা ঠেকানো যাবে না।
গণমাধ্যম মব সহিংসতার বিরুদ্ধে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যম মব সহিংসতার নেতিবাচক প্রভাব সহজভাবে বিশ্লেষণ করে মানুষকে বোঝাতে পারে। বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনতে হবে। সহজভাবে বোঝালে মানুষ তা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুনরূপলাল-প্রদীপকে হত্যায় অংশ নেয় যারা, কী বলছে পরিবার১৯ আগস্ট ২০২৫আমি নারী হিসেবে বলব, ধর্ষক আমার কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধী। তারপরও বলব, ভুক্তভোগীর মতো ধর্ষকেরও আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। জনগণকে মব সহিংসতাবিরোধী অবস্থানে আসতে হবে। যেকোনো কিছু হলে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে যেন মব সহিংসতা করা না হয়। সব বিষয়ে জেনে–বুঝে সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সমাজে মব সহিংসতা ঘটবে না।
শাহারিয়া আফরিন,
সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়