উষ্ণ আবহাওয়ায় স্বস্তিদায়ক ফল হিসেবে তরমুজ বেশ জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল আপনি খেতে পারেন ইফতারেও। তরমুজের প্রায় ৭৫ শতাংশই পানি। তার মানে, এক কাপ পরিমাণ তরমুজ খেলে প্রায় পৌনে এক কাপ পানি গ্রহণ করা হয়। বুঝতেই পারছেন, ইফতারে তরমুজ খেলে তাতে তৃষ্ণা মিটবে, হবে রসনার তৃপ্তিও। এর সঙ্গে কিন্তু আরও কিছু ব্যাপার জড়িয়ে আছে।
আমাদের দেহের ভেতর যেসব ক্রিয়া–বিক্রিয়া চলে অবিরাম, সেগুলোর জন্য পানি অপরিহার্য। কিন্তু ইফতারের সময় দেহের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আপনি যদি অনেকটা পানি খেয়ে ফেলেন, তাহলে পুষ্টিকর অন্যান্য খাবার খুব একটা খেতে পারবেন না। অর্থাৎ পানি ছাড়া অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবেন না। তাই এমন খাবার খাওয়া উচিত, যাতে পানি ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন ফলমূল থেকে আপনি পানি, আঁশ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাবেন।

আর ফল খেলে খিদেও খানিকটা মিটবে। কেউ যদি ইফতারের একটি পদ হিসেবে রোজই তরমুজ খান, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়—জানালেন রাজধানীর আজিমপুরের গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার।

শক্তিতে ভরপুর

ইফতারের পর ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসতে চায় অনেকেরই। তরমুজে কেবল পানি নয়, রয়েছে পটাশিয়াম আর ম্যাগনেশিয়ামও। অতিরিক্ত ক্লান্তির পেছনে অনেক ক্ষেত্রেই পানি ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি দায়ী হয়ে থাকে। পেশির স্বাভাবিক কাজের জন্যও পটাশিয়াম প্রয়োজন। তাই ইফতারে মোটামুটি এক কাপ পরিমাণ তরমুজ খেলে আপনি ইফতারের পর খুব বেশি ক্লান্তি অনুভব করবেন না। রাতের বেলা অন্যান্য কাজও সারতে পারবেন সহজে।

ইফতারে মোটামুটি এক কাপ পরিমাণ তরমুজ খেলে আপনি ইফতারের পর খুব বেশি ক্লান্তি অনুভব করবেন না।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন য ন য এক ক প প ইফত র র

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি

‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’

কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।

হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’

অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’

একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’

খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ