আশির দশকের কথা বলছি, কৈশোরে দেখেছি প্রকৃতিতে প্রকৃত অর্থেই ষড়ঋতু ছিল। আর ষড়ঋতুর মতোই ছিল নারীদের জীবন, দিনলিপি, কর্মব্যস্ততা। তখন গ্রামে ছিল কৃষিভিত্তিক সমাজ। সবকিছু আবর্তিত হতো কৃষিকে কেন্দ্র কের।
আমি দেখেছি গ্রীষ্মকালে বাড়িতে বাড়িতে অনেক আম, কাঁঠাল পাওয়া যেত। দেড়তলা টিনের ঘরের সিলিংয়ে ওই আম সাজিয়ে রাখতেন বাড়ির নারীরা। ওই সময় গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারই ছিল একান্নবর্তী। বড় বড় গেরস্ত বাড়িতে অনেক সহকারি থাকতো। বাড়ির সবচেয়ে বয়ষ্ক নারী অর্থাৎ দাদি, নানীরা ওই আম যাচাই-বাছাই করতেন। তারপর তিন চারটি করে আম আর মুড়ি পরিবারের সবাইকে সকালে খেতে দিতেন। একেবারে ছোট সদস্যদের জন্য আমের রস তৈরি করে দিতেন তারা। আর যেসব আম পঁচে যাওয়ার মতো হতো সেগুলো ঘঁষনিতে নিয়ে পিউরি বের করে আমসত্ব বানাতে বসতেন নারীরা। আম, কাঁঠালের দিনে বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসতো। আবার বাড়ির ফল আত্মীয় স্বজন বাড়িতে পাঠানো হতো। কোন বাড়িতে কতগুলো ফল পাঠাবেন সেসবও তত্ত্বাবধায়ন করতেন নারীই।
বর্ষায় বন্যা হওয়া ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। বন্যার কথা মাথায় রেখে গ্রামের বাড়িগুলো হতো উঁচু উঁচু। বর্ষা আসার আগে ঘরবাড়ি লেপে পুছে নতুনের মতো করে রাখতেন বাড়ির নারীরা। বর্ষায় মেয়েরা বাপের বাড়ি নাইওর আসতো। এই সময় নারী-পুরুষের বাইরে তেমন কোনো কাজ থাকতো না। নারীরা পুরনো কাঁথায় পুরনো কাপর লাগাতেন অথবা নতুন কাঁথায় নকশা তুলতেন। বর্ষায় টানা বর্ষণে বাড়িঘরের মাটি ধুয়ে যেত। ঘরের ডুয়া ভাঙতো। বষা বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির নারীরা সেবস মেরামত শুরু করতেন।
শরৎয়ে ঘরবাড়ি নতুন রূপ পেত। হেমন্ত মানে নবান্ন উৎসব। বাড়িতে নতুন ধান আসতো। গরু দিয়ে মলন মলা হতো। ভোরে বাড়ির পুরুষ মলন মলে অন্য কাজে চলে যেতেন বা বিশ্রাম নিতেন। আর নারীরা ধান পরিষ্কার করতেন। বীজ সংগ্রহ করতেন। সিদ্ধ করার জন্য ধান আলাদা করতেন। আবার মুড়ি ভাজা, পিঠা বানানোর জন্যও আলাদা রাখা হতো ধান।
শীতে বাড়িতে বাড়িতে নারীরা পিঠাপুলি তৈরি করতেন। কেউ কেউ বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। নতুন বউ, বাড়ির মেয়েরা তাদের কাছে পিঠা বানানো শেখার জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতো। শীতের সকালে বাড়িতে বাড়িতে খেঁজুরের রস আসতো। সকালে পরিবারের কে কতটুকু রস খাবে তাও ঠিক করে দিতেন বাড়ির নারীরাই।
বসন্তে বেশিরভাগ বাড়িতে শিশুরা নানারোগে আক্রান্ত হতো। বিশেষ করে বসন্ত রোগে। আক্রান্ত রোগীর দেখাশোনা, কি খাবে, না খাবে এসবকিছুর ঠিক করতেন বাড়ির দাদি, নানিরা। প্রতিদিনকার দৃশ্য ছিল এমন—বাড়ির পুরুষেরা খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে তারা থালাবাসন পরিষ্কার করে তারপর ঘুমাতে যেতেন নারীরা। সকালে তারাই আগে ঘুম থেকে উঠে যেতেন। মুসলিম পরিবারের নারীরা সকালে নামাজ পড়ে কেউ কেউ কুরআন পাঠ করতেন তারপর সংসারের কাজ শুরু করতেন। কিন্তু তাদের একটি কাজে খুব তাড়া ছিল, তাহলো ‘খাওয়া’। নারীদের খেতে বসার দৃশ্য বাড়ির পুরুষেরা খুব কমই দেখতেন। কোনো এক সুযোগে তারা খেয়ে উঠতেন। প্রচলিত কথা ‘পুরুষের নাওয়া আর নারী লোকের খাওয়া কেউ দেখে না’। এই যে না দেখা- এই মূলত আমাদের নারীদের জীবনচিত্র।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র জন য করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে প্রফেশনাল এমএস কোর্স, আবেদনের সময় বৃদ্ধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রফেশনাল এমএস কোর্সে আবদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় ব্যাচের ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্র গ্রহণ ও জমাদানের সর্বশেষ তারিখ ২২ মে ২০২৫। ভর্তি পরীক্ষা ২৩ মে ২০২৫, সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের২৮ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনজাপানে উচ্চশিক্ষা: যাত্রা শুরু করবেন কোথা থেকে, কীভাবে?২৮ এপ্রিল ২০২৫