বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে সড়কে প্রকাশ্যে মারধর করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে সড়কের ওপর এক নারীকে অপর এক পুরুষ ব্যক্তি উপর্যুপরি কিল ও ঘুষি দিচ্ছেন। এ সময় পুরুষ ব্যক্তিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছেন পথচারী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা।

২৭ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি শুক্রবার দুপুরের। বাকেরগঞ্জ পৌর শহরের সদর রোডের একটি তৈরি পোশাকের দোকানে ওই নারীকে মারধরের ঘটনা ঘটে। মারধর করা ব্যক্তি দোকানটির মালিক জাকির হোসেন। তিনি বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি।

ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার দুপুরে তিনি ওই দোকানে পোশাক কিনতে যান। এ সময় দোকানমালিক জাকির হোসেন পোশাক দেখানোর নামে তাঁর (নারী) শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দেন। এর প্রতিবাদ করলে দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে তাঁকে (নারী) মারধর শুরু করেন দোকানমালিক। কিল-ঘুষি মারতে মারতে দোকানের বাইরে সড়কের ওপর নিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী দুই ব্যক্তি জানান, দোকানের ভেতরে হট্টগোল দেখে তাঁরা গিয়ে উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। তবে এর আগেই হামলার ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত জাকির হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই নারী তাঁর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমার দোকানে এসে আমার ওপর প্রথম হামলা করেছিল। এরপর আমিও পাল্টা হামলা করেছি।’

বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহবুদ্দিন শাহিন তালুকদার বলেন, জাকির হোসেন বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি। তবে নারীর সঙ্গে তাঁর এমন আচরণের বিষয়টির বিস্তারিত কিছুই তিনি জানেন না। তবে একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখেছেন।

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নাসির উদ্দিন জমাদ্দার দাবি করেন, নারীকে মারধরের ঘটনাটি সত্য নয়। আজ রোববার দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়েছি। আসলে ওই নারীকে মারধর করার ঘটনা ঘটেনি। বাগ্‌বিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে ওই নারীর সঙ্গে থাকা ছেলে দোকানমালিক জাকির হোসেনকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছেলেকে মারধর করেছেন। ওই নারী ছেলেকে রক্ষা করতে গেছে। আসলে জাকির হোসেন ওই নারীকে মারধর করেননি।’

বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামও একই কথা জানিয়ে বলেন, জাকির ওই নারীর ছেলের ওপর হামলা করেছেন। এ সময় ওই নারী তাঁর ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। আসলে ওই নারীকে মারধর করা হয়নি। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ক রগঞ জ প র ওই ন র ক ব এনপ র কর ছ ন র ওপর র ঘটন ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ