ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা মাগুরার সেই শিশুটির ধর্ষণের ঘটনায় এক মাসের মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

আজ রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে এই পাঁচ দাবি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে সেখান থেকে মশালমিছিল বের করা হয়। মিছিল থেকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্য রেপিস্ট’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘ধর্ষকের গদিতে আগুন জ্বালো এক সাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে বাণিজ্য অনুষদ হয়ে শাহবাগের দিকে যান। শাহবাগ থেকে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে মিছিল শেষ করেন তাঁরা। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন।

প্রথম দুটি দাবি ঘোষণা করেন আশরেফা। দাবি দুটি হলো: ১.

মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুটির মামলার বিচারে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন, ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা এবং এক মাসের মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালে শিশুটির পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২. প্রতিটি ধর্ষণ মামলার বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার কার্যক্রম শেষ করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

পরের তিনটি দাবি ঘোষণা করেন উমামা ফাতেমা। দাবিগুলো হলো: ৩. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে। ৪. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন ও সেলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। সারা দেশে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৫. ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার বুলিং–সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।

এ সময় উমামা ফাতেমা বলেন, ‘বাংলাদেশের আপামর জনগণের উদ্দেশে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধে আপনারা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আপনারা অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করুন এবং তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করুন।’

এর আগে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, রাষ্ট্র নারীদের কেন নিরাপত্তা দিতে পারছে না? তাঁরা বলেন, যত দিন পর্যন্ত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ স্থায়ী হবে। বক্তৃতায় বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘এই রাষ্ট্রে একটা তিন বছরের বাচ্চাও নিরাপদ না, নব্বই বছরের বৃদ্ধাও নিরাপদ না। আমার মা–বোনেরা আজ গণপরিবহনে নিরাপদ না, তারা কোথাও নিরাপদ না।’ তিনি বলেন, একজন মুনিয়া (মোসারাত জাহান) কিংবা মাগুরার শিশুটি—এরা প্রতীকী; এসব ঘটনার বিচার করে বাকি ঘটনাগুলোরও বিচার করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর ন র পদ ন শ ষ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ইউনূস-তারেক সফল বৈঠকে স্বপ্নভঙ্গ হলো যাদের

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক দেশের রাজনীতির মোড়  অনেকটাই  ঘুরিয়ে দিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, গুজব রাজনীতিকে ঘিরে ধরেছিল। একধরনের অনাস্থার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এ বৈঠক অনিশ্চয়তা, শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়।

পারস্পরিক যে কাদা ছোড়াছুড়ি, দুর্নাম করার রাজনীতি, সেখান থেকে বেরিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চললেও বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে। এটা আমাদের রাজনীতিতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বৈঠকটি সারা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। মানুষের ধারণাকে বাস্তবে রূপদান করার দায়িত্ব সরকারের।

বিএনপি এর আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির সময়সীমাকে মেনে নিয়েছে। সরকারও এপ্রিল থেকে সরে এসে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। উভয় পক্ষেরই কিছুটা সরে আসা, কিছুটা ছাড় দেওয়া—এটাই আমাদের রাজনীতি থেকে একদম হারিয়ে গিয়েছিল।

রাজনীতি মানেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে শত্রুতা করতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনীতি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু কথায় কথায় উদার হলে হবে না। কাজে-কর্মেও উদারতা দেখাতে হবে। লন্ডনের বৈঠকে সেই উদারতার কিছু নমুনা আমরা দেখতে পেলাম।

আরও পড়ুনলন্ডনে ইউনূস-তারেকের আলোচনায় বিএনপিরই কি জিত১৩ জুন ২০২৫

বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। তা নিয়ে আপাতত আলোচনার কিছু নেই। আমরা বরং রাজনীতিতে এ বৈঠকের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি। প্রথমত, এ বৈঠক সারা দেশের মানুষকে আশান্বিত করলেও রাজনীতির কোনো কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি হতাশ হয়েছেন।

এসব গোষ্ঠীর মূল কাজ যেন বিএনপিকে যে কোনোভাবে ঠেকানো। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের মধ্যে  রাজনীতিবিদ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যেকোনো প্রকারে বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিহত করা। এ অংশ চাইছে না বিএনপির রাজনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাক। বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে বাংলাদেশের বিনির্মাণ হোক।

কেউ যদি সহজ রাজনীতির পথ পরিহার করে অহেতুক কুটিল ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, তবে তারা নিজেরাই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও জাসদ আমাদের সামনে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

বিএনপি যে শত ভাগ শুদ্ধ ও সঠিক রাজনীতি করছে, এটা বলা যাবে না। ভুল-ত্রুটি বিএনপিরও আছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই পর্যন্ত চার হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। দেশের ইতিহাসে কোনো দল নিজেদের এতসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেনি। এ ধরনের অপরাধ শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই করছেন না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এটা আমাদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাজনীতি এই অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই রাজনৈতিক সরকার লাগবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচিও লাগে। এ জন্যই বিএনপি বারবার নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আমরা মনে করি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থান উন্নতি ঘটবে। বিএনপির বিকল্প অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে।

বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

সম্পর্কিত নিবন্ধ