আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলীয় নেতাকর্মীকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা। বালু-পাথর লুট, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের ঘটনায় একের পর এক বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর নাম আসছে। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ছয়-সাতজনকে। তবু এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হয়নি।

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে যুবদলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সিলেট নগরীর ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কারের পর গ্রেপ্তার করা হয় মহানগর যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব চৌধুরী মাধবকে। এ ছাড়া চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে শাহপরাণ এলাকার দাসপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর দলীয় পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চোরাচালানের পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্রে করে দু’পক্ষের মধ্যে ওই দিন দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। 

যদিও জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর দাবি, অভিযুক্ত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে এখন অভিযোগ কম আসছে। দলীয় নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন।
তিনি সমকালকে বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যারা দখল-চাঁদাবাজি করছে, তারা আগাছা। আমরা পুলিশকে বলেছি কঠোর হতে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে জানাতে বলেছি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কৃপণতা করব না। 
৫ আগস্টের পর সিলেটে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় বিএনপি নেতাদের বালু ও পাথর কোয়ারি নিয়ন্ত্রণ ও লুটপাট। দ্বিতীয় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে সীমান্তে চোরাচালান। জাফলং পাথর কোয়ারি লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৪ অক্টোবর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানের পদ স্থগিত করা হয়। গত ২ নভেম্বর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন পারভেজকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

পদ স্থগিত ও অব্যাহতি ছাড়াও ইতোমধ্যে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ১৫-১৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ১৩ অক্টোবর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে চোরাই চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয় নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সুলেমান হোসেন সুমনকে। গত সোমবার তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতীরঘেঁষা ঘাগটিয়া এলাকায় বিএনপির আবুল কালাম ও আশরাফ আলী গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বালু শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় নিয়ে এমন ঘটনা ঘটে।
চাঁদাবাজি, চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি বহিষ্কার করা হয় জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সালেহ আহমদ, কর্মী সুলতান আহমদ, জেলা বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক, দলের নেতা আহমদ সোলায়মান, জেলা যুবদলের সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক কাওছার আহমদ জুম্মান, কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম মিয়া, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম ও জুনেদ আহমদ, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুস সালামসহ কয়েকজনকে। একইভাবে ১৪ আগস্ট সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাশিমকে জমি দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও একাধিক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে সেখানকার কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি।

নগরীর শাহি ঈদগাহ এলাকার এক রেস্টুরেন্ট মালিক সমকালকে জানান, তাদের এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেবে ছাত্রদল-যুবদলের কর্মীরা চাঁদা নিচ্ছেন। একইভাবে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরশহরের এক ফার্মেসি ব্যবসায়ী জানান, সিলেট থেকে কয়েকজন ডাক্তার সেখানে চেম্বার করছেন। কিছুদিন ধরে বিএনপির নাম করে কয়েকজন নেতাকর্মী ডাক্তারের কাছে চাঁদা দাবি করছেন। 
সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, দলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কারণে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলে কোনো সুবিধাভোগী, দখলবাজ ও চাঁদাবাজদের স্থান হবে না। তিনি জানান, শাহপরাণ এলাকার দাসপাড়ায় সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মী জড়িত কিনা, তা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। 
অন্যদিকে, মহানগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ফজলে বাব্বি আহসান দাবি করেন, ছাত্রদলের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে শাহপরাণ এলাকায় ছাত্রদল নেতা জুবের আহমদ সায়েমকে মারধরের জেরে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আমলযোগ্য অভিযোগ হলে সাংগঠনিক পর্যায়ের বিভিন্ন দায়িত্বশীলকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারেক রহমানের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের তদন্তের জন্য দেওয়া হচ্ছে। ছোটখাটো অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম ক ন ত কর ম র ব এনপ র স ছ ত রদল র য বদল র দল র ক এল ক র দল র ন তদন ত র ঘটন গঠন ক শ হপর

এছাড়াও পড়ুন:

কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা

জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম।

শুক্রবার সকালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি গ্যাসকূপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সিলেটের যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হয় সেসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কি? -এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শিল্প কারখানা যেখানে গ্যাস পাচ্ছে না সেখানে বাসা বাড়িতে গ্যাস দেওয়া অপচয়। নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত এই সুযোগ বন্ধ রাখা উচিত। তবে যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করা হয়, সেসব এলাকায় স্বল্পমূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করবে সরকার।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন কমছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, কৈলাশটিলা-৭ ও সিলেট-১০ গ্যাস কূপ থেকে থেকে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে গোলাপগঞ্জে কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি উপজেলার পৌর এলাকার কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপ এলাকা, বাপেক্সের রিগ বিজয়-১২ ও কৈলাশটিলা ১ নম্বর কূপে ওয়ার্কওভারের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত রিগপ্যাড পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি একই উপজেলাধীন কৈলাশটিলা এমএসটি প্লান্ট পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (অপারেশন বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. খালিদ আহমেদ, বাপেক্স/এসজিএফএলের প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেব আহমদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেহসানুল ইসলাম, সেক্রেটারি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনির হোসেন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএম ফারুক আহমদ, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড এমএসটি প্লান্টের ডিজিএম জাফর রায়হানসহ সংশ্লিষ্ট কূপের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা, আসামি ১৫৯
  • জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা: ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক ও ১৯ সংগঠনের নিন্দা
  • আপেল মাহমুদ অথবা রবিঠাকুরের কাদম্বিনীর গল্প
  • বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
  • জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • মরিচক্ষেতে গ্রেনেড, নিষ্ক্রিয় করলেন সেনাসদস্যরা
  • কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা