নেতাকর্মী সামাল দিতে হিমশিম সিলেট বিএনপি
Published: 9th, March 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলীয় নেতাকর্মীকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা। বালু-পাথর লুট, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের ঘটনায় একের পর এক বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর নাম আসছে। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ছয়-সাতজনকে। তবু এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হয়নি।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে যুবদলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সিলেট নগরীর ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কারের পর গ্রেপ্তার করা হয় মহানগর যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব চৌধুরী মাধবকে। এ ছাড়া চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে শাহপরাণ এলাকার দাসপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর দলীয় পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চোরাচালানের পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্রে করে দু’পক্ষের মধ্যে ওই দিন দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
যদিও জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর দাবি, অভিযুক্ত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে এখন অভিযোগ কম আসছে। দলীয় নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন।
তিনি সমকালকে বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যারা দখল-চাঁদাবাজি করছে, তারা আগাছা। আমরা পুলিশকে বলেছি কঠোর হতে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে জানাতে বলেছি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কৃপণতা করব না।
৫ আগস্টের পর সিলেটে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় বিএনপি নেতাদের বালু ও পাথর কোয়ারি নিয়ন্ত্রণ ও লুটপাট। দ্বিতীয় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে সীমান্তে চোরাচালান। জাফলং পাথর কোয়ারি লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৪ অক্টোবর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানের পদ স্থগিত করা হয়। গত ২ নভেম্বর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন পারভেজকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পদ স্থগিত ও অব্যাহতি ছাড়াও ইতোমধ্যে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ১৫-১৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ১৩ অক্টোবর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে চোরাই চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয় নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সুলেমান হোসেন সুমনকে। গত সোমবার তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতীরঘেঁষা ঘাগটিয়া এলাকায় বিএনপির আবুল কালাম ও আশরাফ আলী গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বালু শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় নিয়ে এমন ঘটনা ঘটে।
চাঁদাবাজি, চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি বহিষ্কার করা হয় জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সালেহ আহমদ, কর্মী সুলতান আহমদ, জেলা বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক, দলের নেতা আহমদ সোলায়মান, জেলা যুবদলের সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক কাওছার আহমদ জুম্মান, কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম মিয়া, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম ও জুনেদ আহমদ, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুস সালামসহ কয়েকজনকে। একইভাবে ১৪ আগস্ট সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাশিমকে জমি দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও একাধিক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে সেখানকার কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি।
নগরীর শাহি ঈদগাহ এলাকার এক রেস্টুরেন্ট মালিক সমকালকে জানান, তাদের এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেবে ছাত্রদল-যুবদলের কর্মীরা চাঁদা নিচ্ছেন। একইভাবে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরশহরের এক ফার্মেসি ব্যবসায়ী জানান, সিলেট থেকে কয়েকজন ডাক্তার সেখানে চেম্বার করছেন। কিছুদিন ধরে বিএনপির নাম করে কয়েকজন নেতাকর্মী ডাক্তারের কাছে চাঁদা দাবি করছেন।
সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, দলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কারণে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলে কোনো সুবিধাভোগী, দখলবাজ ও চাঁদাবাজদের স্থান হবে না। তিনি জানান, শাহপরাণ এলাকার দাসপাড়ায় সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মী জড়িত কিনা, তা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মহানগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ফজলে বাব্বি আহসান দাবি করেন, ছাত্রদলের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে শাহপরাণ এলাকায় ছাত্রদল নেতা জুবের আহমদ সায়েমকে মারধরের জেরে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আমলযোগ্য অভিযোগ হলে সাংগঠনিক পর্যায়ের বিভিন্ন দায়িত্বশীলকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারেক রহমানের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের তদন্তের জন্য দেওয়া হচ্ছে। ছোটখাটো অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম ক ন ত কর ম র ব এনপ র স ছ ত রদল র য বদল র দল র ক এল ক র দল র ন তদন ত র ঘটন গঠন ক শ হপর
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’
তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’
সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’
বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউটকমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।
পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।
আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে