দুর্ঘটনা ঘটেছে ভোর ছয়টায়। আর এখন (যখন লিখছি) দুপুর গড়াতে চলল। তার মানে প্রায় আট ঘণ্টা পার হয়েছে। আর এই আট ঘণ্টায় রাজধানীর বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুকে ঘিরে অবরোধের সমাধান হয়নি। বনানী, মহাখালী ও গুলশান জাস্ট ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো গাড়িঘোড়া চলাচলের সুযোগ নেই। এর প্রভাব পড়েছে সারা ঢাকা শহরে।

দুর্ঘটনার পর শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে বনানী, মহাখালী ও গুলশানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। মহাখালী থেকে বনানী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও গাড়ির দীর্ঘ সারি পড়েছে। যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে আছেন। নগরের অন্যান্য জায়গাও যানজটে আটকা পড়ে আছে।

বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে রাস্তাকে চলাচলের উপযোগী করতে এখন পর্যন্ত সরকারকে যা যা করতে দেখা গেছে, তা বলার মতো কিছু না। সরকারের ‘দৃশ্যমান’ অনুপস্থিতি রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থাকা লোকদের শাপ-শাপান্ত করতে প্ররোচিত করেছে।

অনেকে বলছেন, একটা সড়ক দুর্ঘটনাজনিত অবরোধে নামা লোকদের পুলিশ রাস্তা থেকে সরাতে পারছে না; সরকারের কোনো কর্তাব্যক্তি এসে তাঁদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাড়ি পাঠাতে পারছেন না; তাহলে সরকার করছেটা কী? এতক্ষণে যোগাযোগ ও পরিবহন উপদেষ্টার তো ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করা উচিত ছিল। কিন্তু অচল রাস্তাকে সচল করার বিষয়ে ন্যূনতম হেলদোল কারও মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।

প্রশ্ন উঠছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দায়িত্ব কী ছিল? প্রথমত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হতো। কিন্তু তারা সে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সকাল ছয়টায় দুর্ঘটনা ঘটে, অথচ দুপুর পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে—এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। যদি ঠিক সময়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে সংলাপে যাওয়া হতো, তাহলে হয়তো এত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতো না।

সড়ক দুর্ঘটনার পর সাধারণ মানুষের ক্ষেপে যাওয়ারও কারণ আছে। প্রতিদিন ভোরবেলা হাজার হাজার শ্রমিক কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা হন, কিন্তু তাঁদের চলাচলের ওই সময়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে কোনো বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা রাখা হয় না। ফুটওভারব্রিজ থাকলেও সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় না। যানবাহনের গতিনিয়ন্ত্রণ, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিতকরণ, সিসিটিভির মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং—এসব মৌলিক বিষয়েও কার্যকর উদ্যোগ নেই।

ভোর ৬টার দিকে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি ইউটার্ন ইনকামিংয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় আরও এক নারী ও শিশু আহত হয়েছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন বাস তাঁকে চাপা দিয়েছে, সেটাই জানা যায়নি। এটি পোশাক শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ অবস্থায় প্রত্যক্ষদর্শী ও সিসিটিভি ফুটেজ ব্যবহার করে দ্রুত তদন্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু এখানেও গাফিলতি স্পষ্ট।

বনানীর এই দুর্ঘটনাকে নিছক একটি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি শুধু নগর ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার প্রতিচিত্র না, এর মধ্য দিয়ে বিদ্যমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক অদক্ষতা সবার সামনে উঠে আসে। এই অদক্ষতা মানুষকে ক্ষুব্ধ করছে। সেই জনক্ষোভকে সরকার আমল না দিলে সামনের দিন আরও খারাপ হবে, তা বলে দিলাম।

রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন ব যবস থ সরক র র য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ ‍জুন) বিকেলে চালানো এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন।

রবিবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

ইরানে আবারো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরো জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলের নতুন হামলায় আইআরজিসির তৃতীয় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন।

এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল ইরান। 

রবিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। হতাহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী এবং বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ