দুর্ঘটনা ভোরে, দুপুরেও ঢাকা অচল, সরকার কোথায়?
Published: 10th, March 2025 GMT
দুর্ঘটনা ঘটেছে ভোর ছয়টায়। আর এখন (যখন লিখছি) দুপুর গড়াতে চলল। তার মানে প্রায় আট ঘণ্টা পার হয়েছে। আর এই আট ঘণ্টায় রাজধানীর বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুকে ঘিরে অবরোধের সমাধান হয়নি। বনানী, মহাখালী ও গুলশান জাস্ট ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো গাড়িঘোড়া চলাচলের সুযোগ নেই। এর প্রভাব পড়েছে সারা ঢাকা শহরে।
দুর্ঘটনার পর শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে বনানী, মহাখালী ও গুলশানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। মহাখালী থেকে বনানী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও গাড়ির দীর্ঘ সারি পড়েছে। যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে আছেন। নগরের অন্যান্য জায়গাও যানজটে আটকা পড়ে আছে।
বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে রাস্তাকে চলাচলের উপযোগী করতে এখন পর্যন্ত সরকারকে যা যা করতে দেখা গেছে, তা বলার মতো কিছু না। সরকারের ‘দৃশ্যমান’ অনুপস্থিতি রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থাকা লোকদের শাপ-শাপান্ত করতে প্ররোচিত করেছে।
অনেকে বলছেন, একটা সড়ক দুর্ঘটনাজনিত অবরোধে নামা লোকদের পুলিশ রাস্তা থেকে সরাতে পারছে না; সরকারের কোনো কর্তাব্যক্তি এসে তাঁদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাড়ি পাঠাতে পারছেন না; তাহলে সরকার করছেটা কী? এতক্ষণে যোগাযোগ ও পরিবহন উপদেষ্টার তো ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করা উচিত ছিল। কিন্তু অচল রাস্তাকে সচল করার বিষয়ে ন্যূনতম হেলদোল কারও মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন উঠছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দায়িত্ব কী ছিল? প্রথমত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হতো। কিন্তু তারা সে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সকাল ছয়টায় দুর্ঘটনা ঘটে, অথচ দুপুর পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে—এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। যদি ঠিক সময়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে সংলাপে যাওয়া হতো, তাহলে হয়তো এত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতো না।
সড়ক দুর্ঘটনার পর সাধারণ মানুষের ক্ষেপে যাওয়ারও কারণ আছে। প্রতিদিন ভোরবেলা হাজার হাজার শ্রমিক কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা হন, কিন্তু তাঁদের চলাচলের ওই সময়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে কোনো বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা রাখা হয় না। ফুটওভারব্রিজ থাকলেও সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় না। যানবাহনের গতিনিয়ন্ত্রণ, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিতকরণ, সিসিটিভির মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং—এসব মৌলিক বিষয়েও কার্যকর উদ্যোগ নেই।
ভোর ৬টার দিকে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি ইউটার্ন ইনকামিংয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় আরও এক নারী ও শিশু আহত হয়েছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন বাস তাঁকে চাপা দিয়েছে, সেটাই জানা যায়নি। এটি পোশাক শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ অবস্থায় প্রত্যক্ষদর্শী ও সিসিটিভি ফুটেজ ব্যবহার করে দ্রুত তদন্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু এখানেও গাফিলতি স্পষ্ট।
বনানীর এই দুর্ঘটনাকে নিছক একটি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি শুধু নগর ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার প্রতিচিত্র না, এর মধ্য দিয়ে বিদ্যমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক অদক্ষতা সবার সামনে উঠে আসে। এই অদক্ষতা মানুষকে ক্ষুব্ধ করছে। সেই জনক্ষোভকে সরকার আমল না দিলে সামনের দিন আরও খারাপ হবে, তা বলে দিলাম।
রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন ব যবস থ সরক র র য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী।
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”
আরো পড়ুন:
কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি
কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”
কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”
ঢাকা/শান্ত