রাজধানীর বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় জড়িত ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। রাজধানী ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই চালকের নাম টিটন ইসলাম। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তেজগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘাতক পিকআপটি জব্দ করা হয়েছে। রাতে পিকআপের চালক টিটন ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

এদিকে দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত ওই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সাময়িক স্থগিত করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের (ইকুরিয়া) উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) সানাউল হক স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি জানানো হয়। পত্রে ঢাকা মেট্রো-ন-১৪-০৭৬২ নম্বর মোটরযানের মালিককে মোটরযানটির যাবতীয় কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন স্থায়ীভাবে বাতিল করাসহ মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

সোমবার সকালে রাস্তা পারাপারের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় বনানী এলাকার চেয়ারম্যানবাড়ী ইউটার্নে এক নারী নিহত এবং অপর একজন আহত হয়েছেন। তারা দু’জন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার কর্মী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী সড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে রাখেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এমনকি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।

রাজধানীর অন্যতম প্রধান এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরজীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ভোগ। সড়ক দুর্ঘটনায় সহকর্মী হতাহতের প্রতিবাদে সকাল ৭টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে বনানী-মহাখালী, মগবাজার, গুলশান, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা পড়ে অনেকেই গন্তব্যে হেঁটে যেতে বাধ্য হন।

সড়ক দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকালে চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় কয়েকজন নারী রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এ সময় রাস্তার মাঝখানে চলে আসা এক নারীকে দ্রুতগতির পিকআপ ভ্যান চাপা দিয়ে চলে যায়। পরে সঙ্গে থাকা অন্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিলে দু’পাশের সড়কে শত শত গাড়ি আটকে পড়ে। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের আশ্বাস ও শ্রমিক নেতাদের হস্তক্ষেপে আন্দোলন প্রত্যাহার করে সড়ক ছেড়ে দেন তারা। এরপর ধীরে ধীরে বনানী, মহাখালীসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল শুরু হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, শ্রমিকরা তিনটি দাবি জানিয়েছিলেন। দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন।
 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন বন ন ড এমপ সড়ক দ র ঘটন ক দ র ঘটন দ র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ