যেকোনো কিছু থেকেই সুর সৃষ্টি করা সম্ভব, নিজেদের এই বিশ্বাস শ্রোতাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে অভিনব এক কাজ করে যাচ্ছে একটি বাদক দল। তারা তাদের ট্যুরে শুধু সবজি দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে চলেছে। প্রতিবারই একেবারে নতুন ও সতেজ বাদ্যযন্ত্র।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে ওই বাদক দল দিনের পর দিন এ কাজ করে চলেছে এবং সফল হয়েছে। দলটির নাম ‘দ্য ভেজিটেবল অর্কেস্ট্রা’। ১১ সদস্যের বাদক দলটি গঠিত হয় ১৯৯৮ সালে, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়।

বাদক দলটি এ পর্যন্ত ৩৪৪টি কনসার্টে তাদের বিশেষভাবে তৈরি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছে। বাদ্যযন্ত্রগুলো মুলা, গাজর, শসা, বেগুন, কুমড়া ও লিকের মতো সবজি দিয়ে তৈরি।

ভেজিটেবল অর্কেস্ট্রার ওয়েবসাইটে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমরা যে ধ্বনি তৈরি করতে পারি, সেই ধ্বনি অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্র দিয়ে (সহজে) করা সম্ভব নয়। আপনি শুনেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এগুলো থেকে কখনো কখনো প্রাণীদের মতো আওয়াজ বের হয়, কখনো কখনো একেবারে বিমূর্ত ধ্বনি।’

বাদক দলটি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে যাচ্ছে এবং তাদের নতুন সব বাদ্যযন্ত্র তৈরির জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। কারণ, মঞ্চে তাদের অনুষ্ঠান চলাকালেই সবজি ভেঙে যেতে পারে বা শুকিয়ে যেতে পারে।

কনসার্ট শেষে দলটি দর্শকদের সবজির স্যুপ খেতে দেয়। বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে গিয়ে যেসব সবজি বেঁচে যায়, সেগুলো দিয়েই ওই স্যুপ তৈরি করা হয়।

ভেজিটেবল বাদক দলটির ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, ‘আপনি প্রায় সবকিছু থেকেই সুর তৈরি করতে পারবেন। প্রতিটি জিনিসের সুর তোলার নিজস্ব ক্ষমতা আছে। সেদিক থেকে দেখলে প্রতিটি জিনিসই বাদ্যযন্ত্র হয়ে উঠতে পারে।’

নিজেদের অভিনব এসব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দলটি পৃথিবীর নানা প্রান্তে কনসার্ট করে বেড়াচ্ছে। তারা তাদের ওয়েবসাইটে শ্রোতাদের শুধু একটি প্রশ্ন করা বন্ধ করতে বলেছে। প্রশ্নটি হলো, তাঁরা সবাই নিরামিষভোজী কি না?

দলটি বলেছে, ‘না আমরা নই। এ প্রশ্ন আর করবেন না। আমরা ৩০ লাখবার এ প্রশ্ন শুনেছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ যযন ত র ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউনূস-তারেক সফল বৈঠকে স্বপ্নভঙ্গ হলো যাদের

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক দেশের রাজনীতির মোড়  অনেকটাই  ঘুরিয়ে দিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, গুজব রাজনীতিকে ঘিরে ধরেছিল। একধরনের অনাস্থার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এ বৈঠক অনিশ্চয়তা, শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়।

পারস্পরিক যে কাদা ছোড়াছুড়ি, দুর্নাম করার রাজনীতি, সেখান থেকে বেরিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চললেও বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে। এটা আমাদের রাজনীতিতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বৈঠকটি সারা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। মানুষের ধারণাকে বাস্তবে রূপদান করার দায়িত্ব সরকারের।

বিএনপি এর আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির সময়সীমাকে মেনে নিয়েছে। সরকারও এপ্রিল থেকে সরে এসে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। উভয় পক্ষেরই কিছুটা সরে আসা, কিছুটা ছাড় দেওয়া—এটাই আমাদের রাজনীতি থেকে একদম হারিয়ে গিয়েছিল।

রাজনীতি মানেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে শত্রুতা করতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনীতি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু কথায় কথায় উদার হলে হবে না। কাজে-কর্মেও উদারতা দেখাতে হবে। লন্ডনের বৈঠকে সেই উদারতার কিছু নমুনা আমরা দেখতে পেলাম।

আরও পড়ুনলন্ডনে ইউনূস-তারেকের আলোচনায় বিএনপিরই কি জিত১৩ জুন ২০২৫

বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। তা নিয়ে আপাতত আলোচনার কিছু নেই। আমরা বরং রাজনীতিতে এ বৈঠকের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি। প্রথমত, এ বৈঠক সারা দেশের মানুষকে আশান্বিত করলেও রাজনীতির কোনো কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি হতাশ হয়েছেন।

এসব গোষ্ঠীর মূল কাজ যেন বিএনপিকে যে কোনোভাবে ঠেকানো। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের মধ্যে  রাজনীতিবিদ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যেকোনো প্রকারে বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিহত করা। এ অংশ চাইছে না বিএনপির রাজনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাক। বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে বাংলাদেশের বিনির্মাণ হোক।

কেউ যদি সহজ রাজনীতির পথ পরিহার করে অহেতুক কুটিল ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, তবে তারা নিজেরাই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও জাসদ আমাদের সামনে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

বিএনপি যে শত ভাগ শুদ্ধ ও সঠিক রাজনীতি করছে, এটা বলা যাবে না। ভুল-ত্রুটি বিএনপিরও আছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই পর্যন্ত চার হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। দেশের ইতিহাসে কোনো দল নিজেদের এতসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেনি। এ ধরনের অপরাধ শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই করছেন না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এটা আমাদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাজনীতি এই অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই রাজনৈতিক সরকার লাগবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচিও লাগে। এ জন্যই বিএনপি বারবার নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আমরা মনে করি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থান উন্নতি ঘটবে। বিএনপির বিকল্প অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে।

বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

সম্পর্কিত নিবন্ধ