নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে, প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
Published: 11th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন। ইমাম পরিবহন নামের একটি বাসে অজ্ঞান পার্টি অচেতন করে সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র লুটে নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ নগরের দীঘারকান্দা বাইপাস মোড়ে ফেলে যায় তাঁকে। এই খবরে গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল হালুয়াঘাট থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৭তম ব্যাচের রাহি। ইফতারের সময় ময়মনসিংহ নগরের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায় ইমাম পরিবহনের একটি বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন তিনি। বাস থেকে অচেতন অবস্থায় রাহিকে রাস্তায় নামিয়ে চলে যায় বাসটি। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
ওই খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাত সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইমাম পরিবহনের বাস আটক করেন। তাঁরা ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে জেলা পরিবহন মালিক সমিতি, ইমাম গাড়ির প্রতিনিধি, ওই বাসের চালক, তাঁর সহকারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির করতে হবে। অন্যথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করা হবে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় ইমাম পরিবহনকে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সব রুটে বাসের ভাড়া সমন্বয় করে নির্ধারিত করে দিতে হবে। ত্রিশালে সব বাসের কাউন্টার দিতে হবে।
পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপস্থিত হন। তাঁদের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে মহাসড়ক থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ কবির বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে ময়মনসিংহ পরিবহন মালিক সমিতি আজ ১২টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বসতে রাজি হয়েছে। যদি পরিবহন প্রশাসন আজ দুপুর ১২টার মধ্যে ছাত্রদের সঙ্গে না বসে, তাহলে ছাত্ররা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করে দেবেন।
ত্রিশালের ইউএনও আবদুল্লাহ আল বাকীউল বারী বলেন, হালুয়াঘাট থেকে ক্যাম্পাসের দিকে আসা এক শিক্ষার্থীকে অজ্ঞান করে তাঁর সব জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে। পরে তাঁকে রাস্তায় নামিয়ে রেখে চলে যান বাসের লোকজন। এ খবরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। আজ দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ