দেশে সম্পদ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটা অনেক বড় বিষয় তাঁর কাছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতি একধরনের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তবে যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বা হবে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দার কবলেও পড়তে পারে।

এ সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পরপরই যা হওয়ার তা–ই হলো। বাজার খোলার পরেই পড়ে গেছে মার্কিন বাজারের প্রধান প্রধান সূচক। ছাড় পায়নি চীনের বাজারও। খবর বিবিসির।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক পড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সূচক ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল পড়েছে ২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি পড়েছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সূচক নাসডাক; সেদিন এ সূচকের পতন হয়েছে ৪ শতাংশ। ইলন মাস্কের টেসলার শেয়ারের দাম পড়েছে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাণ হিসেবে পরিচিত চিপ কোম্পানি এনভিডিয়ারের শেয়ারের দাম পড়েছে ৫ শতাংশের বেশি। মেটা, অ্যামাজন ও অ্যালফাবেটের শেয়ারের দামও অনেকটা কমেছে।

এর জেরে আজ মঙ্গলবার এশিয়ার শেয়ারবাজারের পতন হয়েছে। সকালে জাপানের নিক্কেই এশিয়া সূচকের পতন হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপির পতন হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ আর হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।

এদিকে সোমবার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে একাধিক মার্কিন কৃষিজ পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে চীন। সমেই সঙ্গে কানাডাও অনেক মার্কিন পণ্য বর্জন শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব কারণে মার্কিন অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়বে।

ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ রকম ঘন ঘন বাণিজ্যনীতি বদলের ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে কি ‘মন্দা’ আসতে পারে? ঢাক ঢাক গুড় গুড় না করে স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় ট্রাম্প জানিয়ে দেন, ‘আমি এসব বিষয় নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা অপছন্দ করি। তবে মার্কিন অর্থনীতি এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমরা যা শুরু করেছি, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমরা বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে দেশে সম্পদ ফিরিয়ে আনছি। এটা অনেক বড় ব্যাপার। এতে একাধিক পর্যায় রয়েছে; সেগুলো পেরোতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আমার মনে হয়, শেষে আমাদের জন্য সব ভালোই হবে।’

মার্কিন অর্থনীতি বাইডেনের জমানায় খারাপ ছিল না। নীতি সুদ অনেকটা বাড়ানো হলেও নানা কারণে বেকারত্ব বাড়েনি। কিন্তু ট্রাম্প যেভাবে একের পর বাণিজ্যযুদ্ধের ফ্রন্ট খুলছেন, তাতে তিনি নিজেই ‘মন্দার’ সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। ফলে ডাও জোন্স-ন্যাসড্যাক-ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক হুড়মুড় করে নামল ১ থেকে ৩ শতাংশ।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সোমবার জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের যে মতিগতি, তাতে মনে হচ্ছে না যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুল্কযুদ্ধ এড়াতে পারবে। বিষয়টিকে তারা দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির এই হালের খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ার পর সামগ্রিক অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় লন্ডন-প্যারিস-ফ্র্যাঙ্কফুর্টসহ ইউরোপের একাধিক প্রধান বাজারে গতকাল সোমবার সূচকের পতন হয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর পদে পরিবর্তন আসছে। ফলে জার্মানির বাজারই বেশি রক্তাক্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞমহলের একাংশের দাবি, ১২ ডিসেম্বর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর বর্ধিত হারে আমদানি শুল্ক কার্যকর করার হুমকি আগেই দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। ফলে পরিস্থিতির আশু সমাধান হওয়ার বদলে জটিল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স মব র ন হয় ছ হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি 

এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন আরফান হোসেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।’’

আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।

আরফান হোসেন বলেন, ‘‘ফেলানী হত্যার পর সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকে ইচ্ছে ছিল; বিজিবিতে চাকরি করব। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’’

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘‘ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে, দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।’’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।

ঢাকা/সৈকত/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ