যুক্তরাষ্ট্র কি মন্দার পথে যাচ্ছে, কী বলছেন ট্রাম্প
Published: 11th, March 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর প্রশাসন ‘খুব বড়’ পদক্ষেপ নিতে চলেছে এবং স্বীকার করেছেন, এর ফলে দেশে ‘ক্রান্তিকালীন সময়’ বা ‘বিশৃঙ্খলা’ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।
তবে কী মন্দার পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র? ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্নই করা হয়েছিল ট্রাম্পকে। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এমন আগাম কথা ঘৃণা করি।’ গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়।
কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য ভয়াবহ অবনমন নিয়ে অনেকের মধ্যে আশঙ্কা বেড়ে গেছে। ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার বড় ধরনের পতন দেখেছে।
ট্রাম্প যেভাবে একের পর এক দেশ ও পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর কী প্রভাব পড়তে চলেছে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কিন্তু এখনই মন্দার আশঙ্কা করা কি ঠিক হবে?
সিএনএন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার ইতিহাস এবং দেশটির বর্তমান অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে মন্দার আশঙ্কা কতটা যৌক্তিক, তা তুলে ধরেছে।
মন্দা কীযুক্তরাষ্ট্রে প্রথাগতভাবে মন্দা বলতে বোঝায়, ‘দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়া, পুরো অর্থনীতিতে এ ধারা ছড়িয়ে পড়া এবং বেশ কয়েক মাস বা বছর ধরে ওই পরিস্থিতি বিরাজ করা।’
যুক্তরাষ্ট্রে যখন মন্দার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি একটি বেসরকারি অলাভজনক সংস্থা। সংস্থাটির ‘বিজনেস সাইকেল ডেটিং কমিটি’ ব্যবসার নানা গতিপথ ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে।
এই কমিটি তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে মন্দার হিসাব করে। সেগুলো হলো গভীরতা, বিস্তার এবং সময়।
মাঝেমধ্যে দেখা যায়, বিজনেস সাইকেল ডেটিং কমিটির কর্মকর্তারা মন্দার পূর্বাভাস দেওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা শুরু হয়ে যায়।
এ বিষয়ে ইওয়াই-পার্থেননের প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ড্যাকো সোমবার সিএনএনকে বলেছেন, ‘সংজ্ঞার বেলায় আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে। জিডিপিতে সংকোচন নানা কারণে হতে পারে। যেমন এমনটা হতে পারে বছরের প্রথম এক–চতুর্থাংশে, এমন একটি পরিবেশ থেকে যেখানে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আটলান্টা যে হিসাব দিয়েছে, তাতে এ বছরের প্রথম এক–চতুর্থাংশে জিডিপির সংকোচন হতে পারে। যদি তা–ই হয়, তবে ২০২২ সালের পর এই প্রথম বছরের এক–চতুর্থাংশে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি সংকুচিত হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি অনেক বেড়ে গেছে এবং গত কয়েক মাসে বাণিজ্য–ঘাটতিও বেড়েছে। এর কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কারোপ। ট্রাম্প আরও শুল্ক আরোপ করতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং ক্রেতারা আগাম পণ্য কিনে রাখতে ছুটছেন।
মন্দা কী আসন্নগত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতির বড় ক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপকভাবে নীতিগত পরিবর্তন এনেছেন। এতে অনিশ্চয়তা অনেক বেড়ে গেছে এবং গত কয়েক সপ্তাহে অর্থনৈতিক সতর্কবার্তা তিন গুণ বেড়েছে।
কর্মী ছাঁটাই দ্রুত বাড়ছে এবং গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি আবার বেড়েছে। ২০২৩ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম ভোক্তাপণ্যের দাম সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড্যাকো বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত এমন কোনো লক্ষণ দেখিনি, যার ভিত্তিতে মন্দা আসন্ন, এমনটা বলা যায়। তবে আমরা বেসরকারি খাতে সক্রিয়তা কমে আসার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। আমরা শ্রমবাজারের গতি কমে আসা দেখতে পাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ক্রেতারা ব্যয়ের ব্যাপারে আরও সতর্ক হয়ে উঠছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ব্যবসায়ীরা ‘দেখা যাক কী হয়’ অবস্থানে চলে যাচ্ছেন এবং আমরা নীতিনির্ধারণের বেলায় অনেক বেশি অনিশ্চয়তা এবং পতনের অনেক বেশি ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে বাস্তবায়িত হতে চলেছে, এমন বাণিজ্য নীতিমালায়।’
ড্যাকো এ–ও বলেছেন, ‘মন্দা নিয়ে এখনই খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না। আমরা অত্যন্ত শক্তিশালী দুটি প্রবৃদ্ধির বছর থেকে বেরিয়ে আসছি। এমন একটি পরিবেশ, যেখানে আয়ের প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ছিল, যেখানে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ছিল, যেখানে ভোক্তা ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ছিল এবং বাস্তবে যেখানে পুরো অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল।’
যদিও ২০২৫ সাল শুরু হয়ে গেছে, খানিকটা সময়ও পেরিয়ে গেছে এবং যদি বাণিজ্যে এই বিধিনিষেধ এবং কঠোর অভিবাসন নীতি অব্যাহত থাকে, সর্বোপরি এই অনিশ্চয়তা যদি চলতে থাকে—তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি আরও কমে যাবে। যার ফলে আর্থিক বাজারে চাপ বাড়বে।
ড্যাকো বলেন, আগামী কয়েক মাসে যে বড় বড় ক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে, তার অন্যতম মার্কিনদের আর্থিক স্বাস্থ্যের অবস্থা।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ভোক্তা ব্যয় মার্কিন অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। তাই এটিতে ফাটল ধরতে শুরু করলে, তা মার্কিন অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তিকে মুছে ফেলবে ও মন্দার সূত্রপাত করতে পারে।’
তবে এখন পর্যন্ত ভোক্তা ব্যয় যে পথে চলছে, তা উদ্বেগজনক নয় বলছেন ড্যাকো। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা গড় ভোক্তা ব্যয়ে শক্তিশালী অবস্থান দেখতে পাচ্ছি। যদিও এ ক্ষেত্রে উচ্চবিত্তরা তাদের যেটুকু ব্যয় করার কথা, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করছে এবং যদি দলটি ব্যয় কমিয়ে দেয় বা তাদের আস্থায় ঝাঁকুনি খায়, তবে সেটা হবে উদ্বেগের।’
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা, ভোক্তা এবং বিনিয়োগ খাতের ওপর ট্রাম্পের শুল্কারোপের কী প্রভাব পড়তে চলেছে, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের তিন বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন। ফলে মার্কিনদের মধ্যে দেশে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অবশ্য কানাডা ও মেক্সিকোর অনেক পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্কারোপ এখনো কার্যকর হয়নি। শুল্ক কার্যকর হওয়ার সময় পিছিয়ে ২ এপ্রিল করা হয়েছে।
ড্যাকো বলেছেন, ‘এ ধরনে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং অস্পষ্টতা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই সহায়ক না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব দ ধ র আশঙ ক মন দ র বল ছ ন অন ক ব আমদ ন প রথম ব যবস র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।