কুষ্টিয়া মডেল থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় হাজিরা দিয়েছন দুই সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু ও সেলিম আলতাফ র্জজ। মঙ্গলবার দুপুরে তারা কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতে হাজির হন। এ সময় আদালতের এজলাসে ইনু ও জর্জকে কঠাগড়ায় তোলা হয় হাতকড়াসহ। এসময় ইনুর আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। তবে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে ইনুসহ দ্জুনকেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

হাসানুল হক ইনুকে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় কাঠগোড়ায় তোলা নিয়ে প্রতিবাদ জানান ইনুর আইনজীবীরা। এ নিয়ে অল্প সময়ের জন্য আদালত কক্ষ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের এমন আচরণের বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরেন ইনু ও জর্জ। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ইনুর আইনজীবীসহ কয়েকজন আইনজীবীর সাথে কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কুষ্টিয়া শহরে আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম শরিফ নামে এক যুবক গুলিতে আহত হন। তার হাতে ও পায়ের মধ্যে এখনো গুলি রয়েছে। বিচারের আশায় একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে। এই মামলায় কুষ্টিয়া-২(মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু এজাহারভুক্ত ৩৭ নম্বর আসামি। আর কুষ্টিয়া-৪(কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ ৩৩ নম্বর আসামি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে তাদের দুজনকে হাজিরা দিতে আদালতে নেওয়া হয়। কুষ্টিয়া কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে তাদের আদালত ভবনের দোতলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে নেওয়া হয়। এসময় ইনু ও জর্জের দুই হাতে সামনে রেখে হাতকড়া পড়ানো ছিল। দুজনের মাথায় পুলিশের হেলমেট ও শরীরে পুলিশের ভেস্ট পরানো ছিল।

২টা ১০ মিনিটের দিকে দুজনকেই এজলাসে নেওয়া হয়। এসময় হাসানুল হক ইনু হাতকড়া পরা অবস্থায় কাঠগড়ায় উঠতে আপত্তি জানান। তার আইনজীবী তানজিলুর রহমান এনাম ও আকরাম হোসেন দুলাল বলেন, কাঠগড়ায় তোলার পর এক পুলিশ কর্মকর্তা তাদেরকে বসতে বলেন। তবে সেসময় আদালতে বিচারক উপস্থিত ছিলেন না। বসার কথা শোনার সাথে সাথে হাসানুল হক ইনু উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তিনি হাতকড়া খুলে দিতে বলেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা চুপচাপ থাকেন। 

একপর্যায়ে ইনু বলতে থাকেন,‘হাতকড়া খোলেন, হাতকড়া খোলেন। কেন কাঠগড়াতে হাতকড়া পরা থাকবো।’ তবে পুরো সময় সেলিম আলতাফ জর্জ চুপ ছিলেন।

এই নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে হাসানুল হক ইনু ও তার আইনজীবীদের বাকবিতন্ডা হয়। উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কয়েক মিনিট এমন হবার পর এক পুলিশ কর্মকর্তা বিচারকের খাস কামরায় যান। সেখান থেকে ফিরে এসে হাসানুল হক ইনুর হাতকড়া একহাত খুলে রাখেন। পুলিশের উপ-পরিদর্শক জিলানী ওই সময় সেলিম আলতাফের হাতকড়া খুলতে গেলে তিনি খুলবেন না বলে তাকে জানান। পুলিশ জোর করলেও খুলতে দেন না তিনি।

কয়েক মিনিট পর আদালত শুরু হলে সিনিয়র আইনজীবী আকরাম হোসেন দুলাল সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে উপপরিদর্শক জিলানী আসামিকে জামিন না দেবার যুক্তি তুলে ধরেন।

সিনিয়র আইনজীবী আকরাম হোসেন দুলাল বলেন, একপর্যায়ে সেলিম আলতাফ জর্জ কথা বলার অনুমতি চান বিচারকের কাছে। অনুমতি নিয়ে তিনি সামনে দুই হাত হাতকড়া পরা অবস্থায় তুলে বলতে থাকেন,‘আদালতের সামনে যখন কোন আসামির হাতে হাতকড়া অবস্থায় উপাস্থাপন করা হয় এবং আদালত যদি সেটা দেখেন তাহলে এটা বুঝতে হবে টোটাল জুডিসিয়ালের হাতেই হাতকড়া।’

এসময় আদালত হাতকড়া খুলে দিতে বলেন। তবে জর্জ আর হাতকড়া খুলতে দেননি। বিচারক তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সবমিলিয়ে প্রায় ২০মিনিট তারা কাঠগড়াতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

পুলিশ দ্রুত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে বের করে প্রিজনভ্যানে তোলেন। এজলাস থেকে বের প্রিজনভ্যানে যাবার সময় আদালত চত্বরে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হেসে হাত নেড়ে ইশারা দেন ইনু। এসময় তার একহাতে হাতকড়া ছিল। পাশে থাকা জর্জও হাত তুলে ইশারা দেন। তবে তার দুই হাতেই হাতকড়া ছিল।

আইনজীবী তানজিলুর রহমান বলেন, কোনো আইনে নেই এজলাসে কাঠগড়াতে আসামির হাতে হাতকড়া পরানো অবস্থায় রাখতে হবে। এ নিয়ে বেশ উত্তপ্ত ছিল এজলাস।

জানতে চাইলে কুষ্টিয়া আদালতের পরিদর্শক জহুরুল ইসলাম বলেন,‘দুজনের হাজিরার তারিখ ছিল। একজনের জামিন ধরা হয়েছিল। জামিন না মঞ্জুর হয়েছে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

হাতকড়া পরিয়ে কাঠগড়ায় তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমরাতো হাতকড়া পরিয়ে ওভাবে নিয়ে যাই। আদালত যেমন বলবে, আমরা তেমন হুকুম পালন করি। আদালত পরে বলছে হাতকড়া খুলে দিতে আমরা খুলে দিয়েছি। আদালত যেই নিদের্শ দেবে সেটা আমরা শুনব। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন আমরা হাতকড়া খুলে দিয়েছি।’ 

জর্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমরা খুলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি খুলতে দেননি।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ তকড় এজল স প ল শ কর মকর ত র আইনজ ব অবস থ য় ক ঠগড় য় এজল স হ তকড়

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।

এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।

পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর
  • সিদ্ধিরগঞ্জে প্রবাসী স্বামীর বাড়িতে স্ত্রীর তালা