ঈদের আগে কালিয়াকৈর ও টঙ্গীতে দুটি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গাজীপুরে দুই মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শত শত শ্রমিক। এ সময় গাজীপুরের বাসন থানার কড্ডা এলাকায় ১০টি, কালিয়াকৈরের মৌচাক শিল্পাঞ্চলে ১৫টি ও টঙ্গীতে কয়েকটি পোশাক কারখানা এক দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। 

এর আগে গাজীপুর মহানগরের বাসন, কড্ডা, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবি এবং শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এ সময় দুই মহাসড়কে কয়েক ঘণ্টা দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। 

খবর পেয়ে বাসন, কড্ডা, কালিয়াকৈর ও টঙ্গীতে শিল্পপুলিশ, থানা পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে বেলা ১১টার দিকে উভয় মহাসড়কে আবার স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।

জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সকালে প্রথমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন গ্লোবোস গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকরা। অন্যদিকে টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। 

শ্রমিকদের অভিযোগ, গত শনিবার সকালে মৌচাকের গ্লোবোস কারখানায় আশরাফুল ইসলাম নামে এক শ্রমিকের গায়ে হাত তোলেন কারখানার লাইনম্যান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দিন লাইনম্যান জহিরুল ইসলামসহ দু’জনকে পিটিয়ে আহত করে আশরাফুলের সহকর্মীরা। এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা কর্মবিরতি করে কারখানা থেকে চলে যান। পরদিন কর্তৃপক্ষ কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। 

মঙ্গলবার সকালে সেই বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ খবর মৌচাক, তেলিরচালা, সফিপুর এলাকার কারখানাগুলোয় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কমপক্ষে ১০-১২টি পোশাক তৈরির কারখানা ও সুতা তৈরির কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। 

অপরদিকে টঙ্গীতে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পোশাকশ্রমিকরা। কয়েকজন শ্রমিক জানান, বিএইচআইএস কারখানায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। গত সোমবার তাদের ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু বিকেলে মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে গোপনে কারখানা ত্যাগ করে। মঙ্গলবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকরা প্রধান ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ লেখা নোটিশ দেখতে পান। এর পরই তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা ১১টার দিকে যৌথ বাহিনী শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে চার ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। 

গাজীপুর শিল্পপুলিশের সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের দাবি ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। শ্রমিকদের গুজব থেকে দূরে থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের নিয়মিত কাজে উপস্থিত থাকতে এবং কারখানার সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।

শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।

সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।

সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’

সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • ‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
  • ‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
  • কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর ময়মনসিংহে স্বস্তির বৃষ্টি
  • ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
  • নান্দাইলে বাস-ইজিবাইক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
  • তাপপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন, এর পর বৃষ্টি
  • গামছা পরে ঘুমিয়ে থাকার কারণ জানালেন সমু চৌধুরী
  • দিনাজপুর সীমান্তে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ