‘রোজার দিন এসব কাজ ভালো না’ বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
Published: 11th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে পিটুনিতে একজন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পৌর শহরের শিলাসী কড়ইতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় রোজার দিনে মাদকাসক্ত একদল যুবকের হাতে খুন হয়েছেন ইমরান নামে এক যুবক।
নিহত ইমরান শিলাসী কড়ইতলা আশ্রয়ন কেন্দ্রে বাসিন্দা। এক বছর আগে বিয়ে করেছেন তিনি। তার স্ত্রী সাবিনা ৮ মাসের সন্তান সম্ভবা। অভিযুক্ত সানি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিহ্নিত দালাল।
জানা গেছে, আজ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন ইমরান। পথে দেখেন কড়ইতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনে সানীর নেতৃত্বে দুই মাদকসেবী মোটরসাইকেলে বসে ইয়াবা সেবান করছে এবং উচ্চস্বরে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। ইমরান প্রতিবাদ করে বলে রোজার দিন এসব কাজ ভালো না। এ সময় সানী ক্ষিপ্ত হয়ে মোটরসাইকেল থেকে রড বের করে ইমরানের পথরোধ করে। প্রথমে ইমরানের কাছে ৭০০ টাকা পাওনা দাবি করে। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইমরানকে পেটাতে শুরু করে সানী। এলাকাবাসী এগিয়ে এলে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় মাদকসেবীরা। এলাকাবাসী ইমরানকে উদ্ধার করে রিকশায় করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সানী ও তার লোকজন হাসপাতালের সামনে আবার তাকে মারধর করে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিতে বাধা দেয়। পরিবারের লোকজন মাইক্রোবাসে করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেল ৬টার দিকে মারা যান ইমরান।
ইমরানের বোন চম্পা কাঁদতে কাঁদতে জানান, হাসপাতালের সামনে আবার মারধর না করলে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে দিলে হয়তো ইমরানকে বাঁচানো যেত।
গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে গফরগাঁওয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে হামলায় গুরুতর আহত দুলাল মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, গত বুধবার সকালে লংগাইর ইউনিয়নের গুলাবাড়ি প্রামের দুলাল মিয়া ও তার ছেলে জুলফিকার বাড়ির পাশের খাদে মাছ ধরছিলেন। এ সময় তাদের ওপর একই এলাকার মুনছুর আলী ও আনছার আলীর নেতৃত্বে ৭-৮ জন হামলা চালায়। স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুলাল মিয়ার মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেশী মজনু মিয়া জানান, প্রয়াত বিএনপি নেতা জহিরুল মন্ডলের কাছ থেকে ১০ বছর আগে দুলাল মিয়া খাদ ক্রয় করে মাছ চাষ করে আসছেন।
নিহত দুলালের ছেলে শেখ সাদি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমাদের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন হামলাকারীরা।’
পাগলা থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’