সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন বৈঠকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। বৈঠকের পর গতকাল মঙ্গলবার যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছে, একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত ইউক্রেন। যা উভয় পক্ষের সম্মতিতে বাড়ানো যেতে পারে এবং রাশিয়া রাজি থাকলে একযোগে তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এই প্রস্তাবগুলো রাশিয়ার কাছে উপস্থাপন করা হবে। রাশিয়া রাজি থাকলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আকাশ, সমুদ্র ও স্থল– সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। 

এ ছাড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে খনিজ চুক্তি ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ সম্পন্ন করা হবে। অর্থনীতি সম্প্রসারণ ও দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইউক্রেন এ চুক্তি সম্পাদন করবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগিসহ নিরাপত্তা সহায়তা পুনরায় শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে এ ঐকমত্য এমন সময় এলো, যখন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। 

মস্কোয় হামলায় অন্তত তিনজন নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছেন। রুশ কর্মকর্তারা জানান, হামলার জেরে সাময়িক সময়ের জন্য মস্কোর চারটি বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। এমন একসময় এ হামলা হলো, যখন তিন বছরের যুদ্ধাবসানে যুদ্ধবিরতি ও খনিজসম্পদ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে সৌদি আরবের জেদ্দায় আলোচনায় বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। 

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অফিসের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে গঠনমূলক উপায়ে। আমরা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছি। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিবিসিকে বলেন, আলোচনায় ‘ভালো কিছু’ হবে। আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে সৌদি আরব। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগ্‌বিতণ্ডার পর এটা দু’পক্ষের মধ্যে প্রথম বৈঠক। এর আগে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রয়টার্স জানায়, ৩৩৭টি ড্রোন দিয়ে রাশিয়াজুড়ে এ হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে মস্কো অঞ্চল টার্গেট করে ৯১টি। এসব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। রুশ বাহিনী পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের হাজার হাজার সেনাকে ঘিরে ফেলার চেষ্টার সময় গতকাল ভোরের দিকে এ হামলা ঘটে। যুদ্ধ চলাকালে বারবার বড় ধরনের রুশ হামলার শিকার হয়েছে কিয়েভ। গত সোমবার রাতে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১২৬টি ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া।  

মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেন, এটি ছিল সবচেয়ে বড় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা। মস্কো রাশিয়ার বৃহত্তম শহর, যেখানে কমপক্ষে ২ কোটি ১০ লাখ লোকের বাস। একজন জ্যেষ্ঠ রুশ আইনপ্রণেতা মনে করেন, ইউক্রেন মস্কোতে যে হামলা চালিয়েছে, এর জবাবে রাশিয়ার উচিত ‘ওরেশনিক’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালানো। স্থানীয় ও রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি ড্রোন আবাসিক এলাকায় আঘাত হানে। নিহতদের মধ্যে দু’জন শ্রমিক রয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শিশুসহ আরও ১৮ জন। রাশিয়ার বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়, হামলার পর চারটি বিমানবন্দরেই ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। পরে সেগুলো চালু হয়েছে। সম্প্রতি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তোড়জোড় শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা ও প্রাণহানি বেড়েছে। 

এদিকে রুশ সেনাদের ভয়াবহ আক্রমণে টিকতে না পেরে কুরস্ক অঞ্চলের দখলকৃত এলাকা থেকে পিছু হটছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। এরই মধ্যে অন্তত সাতটি গ্রাম পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি

সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’

অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ