ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে মধ্য–ডানপন্থী বিরোধীরা আশ্চর্যজনক জয় পেতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষিত অঞ্চলটিতে স্বাধীনতার পক্ষে থাকা জাতীয়তাবাদী নালেরাক পার্টির সমর্থন বেশ বেড়েছে।

গ্রিনল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএনআর এ তথ্য জানিয়েছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত ভোট গণনা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে নিজেদের ‘সোশ্যাল লিবারেল’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া ডেমোক্রেটিক পার্টি অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে রয়েছে। দলটি গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। তবে পর্যাপ্ত সময় নেওয়ার পক্ষে।

স্বাধীনতাপন্থী দলগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত নালেরাক পার্টি এরই মধ্যে একটি ‘অত্যাশ্চর্য’ নির্বাচনী সফলতার দিকে এগিয়ে চলেছে বলেও জানিয়েছে কেএনআর।

আরও পড়ুনট্রাম্পের নজরে পড়া গ্রিনল্যান্ডে ভোট আজ১১ মার্চ ২০২৫

মোট ৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭১টির গণনা শেষে দেখা গেছে, নালেরাক পার্টি ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দলটির ভোট দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। বিবিসি বলছে, ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতাসীন আইএ পার্টি তৃতীয় অবস্থানে নেমে গেছে।

অতীতে গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনের ভোট বাইরের বিশ্বের খুব কমই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। কিন্তু এবার ভিন্ন আবহ রয়েছে। ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণের আগ্রহের কারণে এবারের ভোট বাইরের বিশ্বের নজর কেড়েছে।

গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও বাম–গ্রিন আইএ পার্টির নেতা মুট এগেদে বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’ ক্ষমতাসীনদের জোটসঙ্গী সিউমুত পার্টির নেতাও নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন।

গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের জনসংখ্যা ৬০ হাজারের কিছুটা কম। এর মধ্যে ভোটার প্রায় ৪৪ হাজার। স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটির ৩১ আসনের পার্লামেন্টে চার বছর অন্তর নির্বাচন হয়। পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ১৬ আসন পেতে হয়।

আরও পড়ুনগ্রিনল্যান্ড কেন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ০৯ জানুয়ারি ২০২৫

এবারের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। তাই আগামী দিনগুলোয় জোট সরকার গঠনের জন্য এগিয়ে থাকা দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে। পরবর্তী সরকার গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

‘ডেমোক্র্যাটরা সব দলের সঙ্গে আলোচনার পথ উন্মুক্ত রেখেছে এবং ঐক্য চাইছে। বিশেষ করে, বিশ্বে এখন যা ঘটছে তা নিয়ে’, বলেন দলটির ৩৩ বছর বয়সী নেতা জেনস-ফ্রেডেরিক নিয়েলসেন। তিনি গ্রিনল্যান্ডের সাবেক ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন।

তবে দলের নির্বাচনী ফলাফলে ‘বেশ অবাক’ হয়েছেন বলেও জানান এই ডেমোক্রেটিক নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ফলাফল আশা করিনি। আমরা বেশ খুশি।’

দ্বীপের বাসিন্দারা, যাঁদের প্রায় ৯০ শতাংশই ইনুইট—বলেছেন, তাঁরা তাঁদের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ডেনমার্কের দ্বারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো আচরণ পেতে পেতে ক্লান্ত। তাঁদের অভিযোগ, ঐতিহাসিকভাবে তাঁদের সংস্কৃতিকে দমন করা হয়েছে। জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এমনকি পরিবারগুলো থেকে তাঁদের শিশুদের বিতাড়িত করাও হয়েছে।

এসব কারণে গ্রিনল্যান্ডের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান। তবে স্বাধীনতার সময়সীমা নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

আরও পড়ুনট্রাম্প প্রথম নন, ৭৯ বছর আগেও গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র২৭ জানুয়ারি ২০২৫

কৌশলগত অবস্থানের পাশাপাশি অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের কারণে দ্বীপটির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজর পড়েছে। তিনি তাঁর ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ড কেনার ধারণাটি প্রথম সামনে এনেছিলেন।

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নেন। ক্ষমতায় বসার পর থেকে তিনি দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছার কথা বারবার বলে আসছেন। তবে ট্রাম্পের এই আগ্রহের বিষয়টি গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের নেতারা বারবার নাকচ করেছেন।

গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন ট্রাম্প। ওই ভাষণে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড আমাদের দরকার। যেকোনো উপায়ে আমরা এটি অর্জন করব।’ ট্রাম্পের এমন মন্তব্য গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুনগ্রিনল্যান্ড নিজের থাবায় নিতে ট্রাম্পের তৎপরতাকে কী চোখে দেখছেন সেখানকার বাসিন্দারা১২ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন র জন য র নজর ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ