গাজীপুরে ৪ ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছাড়লেন শ্রমিকরা, যান চলাচল শুরু
Published: 12th, March 2025 GMT
গাজীপুরের সদর উপজেলায় বাঘের বাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে চার ঘণ্টা পর ওই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
ট্রাকচাপায় এক নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বুধবার সকাল ৮টার দিকে এ অবরোধ শুরু করেন গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস্ লিমিটেডের শ্রমিকরা। দুপুর ১২টার দিকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেলে শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে সড়ক থেকে সরে যান বলে জানিয়েছেন জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম।
নিহত জান্নাতুল ফেরদৌস তামান্না (৩২) গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস্ লিমিটেড কারখানার সুইং সেকশনের সিনিয়র অপারেটর ছিলেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, বুধবার ভোরে ৫টা ৪০মিনিটে কারখানায় যাওয়ার পথে মহাসড়ক পার হতে গিয়ে অটোরিকশা ও ট্রাকচাপায় তাদের সহকর্মী তামান্না নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় দ্রুত ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনাসহ বিভিন্ন দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।
শ্রমিকদের দাবির মধ্যে ছিল, নিহত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষণসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ডিউটি টাইম সকাল ৬টা থেকে পরিবর্তন করে ৭টা পর্যন্ত করা এবং বিকেল ৫টার মধ্যে ছুটি দেওয়া ও ইফতারের পর কোনো ডিউটি না করা। এছাড়া ঈদে ১০দিন ছুটি, চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে ঈদ বোনাস পরিশোধ করাসহ অতিদ্রুত পর্যাপ্ত পরিমাণে ফেস পাঞ্চ মেশিন বাড়ানোর ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।
এদিকে দীর্ঘ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ও চালকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন। অনেকেই হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন।
ওসি আব্দুল হালিম জানান, পরে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হলে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে সড়ক থেকে সরে যান।
শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’