বাংলাদেশে নারীদের ক্যানসার: ঝুঁকি, সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা
Published: 12th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি যেমন আশার আলো দেখাচ্ছে, তেমনি নারীদের ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার অভাব এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশে ব্রেস্ট ক্যানসার ও সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের ঝুঁকি এখনো অনেক বেশি। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের গুরুত্ব ও চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে বাস্তবসম্মত আলোচনা অত্যন্ত জরুরি।
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এসকেএফ অনকোলজির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। এ পর্বের বিষয় ছিল ‘নারীদের ক্যানসার এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা’। পর্বটি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলোজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন আহছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা.
শুরুতেই উপস্থাপক বাংলাদেশে নারীদের ক্যানসারের ধরন সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে ডা. অদিতি পাল চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে যে দুটি ক্যানসার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, সেগুলো হলো ব্রেস্ট ক্যানসার ও সার্ভাইক্যাল ক্যানসার। সেই সঙ্গে নারীদের ডিম্বাশয়ের ক্যানসারেরও ঝুঁকি থাকে। ফিমেল জেনিটাল অর্গানের আশপাশেও যেকোনো ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভধারণের সময় অনেক নারীর গর্ভফুল থেকে ক্যানসার হতে পারে, যেটিকে আমরা ‘করিও কারসিনোমা’ বলি। ফুসফুস, পাকস্থলী, নাক, কান, গলা ইত্যাদির ক্যানসার নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। আর যেসব নারী তামাক কিংবা পান খান, তাঁদের ক্ষেত্রে মুখেও ক্যানসার দেখা দিতে পারে।’
নারীদের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে ডা. নওশিন তাসলিমা হোসেন বলেন, ‘একেক ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে একেক ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি খানিকটা ভয়াবহ। কারণ, প্রাথমিকভাবে এর গুরুত্ব দেওয়ার মতো কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। আর সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অস্বাভাবিক রক্তপাত দেখা দেয় এবং অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব নিঃস্বরণ হতে পারে। আর মুখগহ্বরের ক্যানসারের ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখে ঘা কিংবা ক্ষতের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমদিকে এগুলোকে অনেকেই তেমন গুরুত্ব দেন না। তবে যাঁরা তামাক ও পান খান, তাঁদের এসব ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’
নারীদের ক্যানসার নিয়ে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত—এ বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. অদিতি পাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ক্যানসারের দুই ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। তাঁদের মধ্যে যেগুলো জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে সেগুলোকে কোনো সতর্কতা অবলম্বন করে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না। তবে যে ক্যানসারগুলো পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে, সেগুলো সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নিজের জীবনযাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজের খ্যাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
ডা. অদিতি পাল চৌধুরী আরও বলেন, ‘ত্বকের ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচতে সান প্রটেকশন ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া চাপমুক্ত থাকাও জরুরি। আর চাপমুক্ত থাকতে মেডিটেশন করা যেতে পারে। পরিবারে কারও ক্যানসার হলে অন্য সদস্যদের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই পরিবারে কারও ক্যানসার হয়ে থাকলে নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো উচিত। সেই সঙ্গে আজকাল ক্যানসারের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। এসব ভ্যাকসিন নিলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা কমে আসে।’
বাংলাদেশে নারীদের ক্যানসারের ঝুঁকি, ধরন, ডায়াগনোসিস, চিকিৎসাব্যবস্থা, সচেতনতা এবং প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. নওশিন তাসলিমা হোসেন ও ডা. অদিতি পাল চৌধুরীউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।