বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনা করতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে সভাপতি করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করেছে সরকার। ছয় সদস্যের এই কমিটি গঠন করে বুধবার (১২ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

কমিটিতে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল হুদাকে কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে।

কমিটিকে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তকাজের অগ্রগতি ও এ বিষয়ে সরকারের নেওয়া অন্যান্য পদক্ষেপ পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কমিটি প্রয়োজনে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। এছাড়া প্রয়োজন অনুসারে সভা করতে পারবে কমিটি।

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। স্থানান্তরিত এসব টাকা পাঠানো হয়েছিল ফিলিপিন্সে তিনটি ক্যাসিনোতে।

এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি।

রিজার্ভ চুরির তিন বছর পর ২০১৯ সালে ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলা খারিজে আবেদন করে আরসিবিসি।

২০২২ সালের এপ্রিলে নিউ ইয়র্কের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলাটি খারিজ করে দেয়। রায়ে বলা হয়, ওই মামলা বিচারের ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার’ ওই আদালতের নেই।

এরপর বাংলাদেশ বাংকের পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্কের ‘এখতিয়ারভুক্ত’ আদালতে মামলা করা হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল।

দেশের অভ্যন্তরেরই কোনো একটি চক্রের সহায়তায় এই অর্থ পাচার হয়েছে বলে তখন ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

পরে সিআইডির তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ মোট ১৩ জন সরকারি কর্মকর্তাকে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করার কথা বলা হয়।

ওই বছরের ১৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা; অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।

মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। কিন্তু দফায় দফায় সময় নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি সংস্থাটি। আদালতে বারবার প্রতিবেদন জমা দিতে তারা সময় চাওয়ায় একের পর এক শুনানি পেছাচ্ছে। এরইমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাও বদল হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুদক গত ৩১ ডিসেম্বর সিআইডিতে চিঠি দিয়ে মামলার তদন্তের দায়িত্ব চেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সিআইডির তরফে কিছু জানানো হয়নি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট তদন ত সরক র স আইড

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ