ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নাগরিকের যে উপাত্ত আছে, তা মানসম্মত নয়। এমনকি নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দেওয়া ইসির কাজ নয়। তবে ইসি এত দিন যে দায়িত্ব পালন করেছে, তাতে তারা প্রশংসার দাবিদার। উপাত্ত কর্তৃপক্ষের অধীনে উপাত্ত সংরক্ষণ হলেও ইসির দায়িত্ব কমবে না।

আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও ইসি দেশের নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ করে না। তবে বাংলাদেশে এক ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে ইসি যে দায়িত্ব নিয়েছিল, তাতে তারা প্রশংসা প্রাপ্য। তিনি বলেন, উপাত্তের সংখ্যা না বাড়িয়ে মানের দিক থেকে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সমন্বয় বাড়াতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমান ইসি কি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) থেকে উপাত্তকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো যোগ্য? বা তার এই দায়িত্ব হওয়া উচিত? তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ভোটাধিকার সুরক্ষা ও বাস্তবায়ন করা। নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দেওয়া ইসির কাজ নয়। উপাত্ত কর্তৃপক্ষ হলে ইসির ক্ষমতা কমবে না, বাড়বে। তারা মানসম্মত ডেটা পাবে। তাদের গুরুত্বও বাড়বে।

বাংলাদেশে এত দিনেও ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন হয়নি উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, সাবেক সরকারের সময়ে আইনের খসড়ায় উপাত্ত কর্তৃপক্ষ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয়ের কাজ একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেখে দিলে তা একটা ব্লকের মধ্যে পড়ে যায়। তার জাতীয় চরিত্র থাকে না। বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সংরক্ষণ, কার সঙ্গে কীভাবে শেয়ার করবে, তার যে নীতি থাকা দরকার ছিল, তা হয়নি। পাশাপাশি সমাজের অংশীদারদের মধ্যে যে বোঝাপড়া দরকার, তা তৈরি হয়নি।

বর্তমান সরকার একটি ডিজিটাল রূপান্তরের পথরেখা তৈরি করবে উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, তাতে বিদ্যমান সিস্টেমগুলোর মধ্যে ইন্টারকানেক্ট (ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি) করা হবে। এরপর উপাত্ত সুরক্ষা আইনের অধীনে একটি উপাত্ত কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হবে, যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হবে। তাদের বিধি মেনে সবাই কাজ করবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। উপাত্ত কর্তৃপক্ষ হলে একটি শৃঙ্খলা তৈরি হবে।

এ কাজের জন্য বিভিন্ন দেশের উদাহরণগুলো দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, যে মন্ত্রণালয় নাগরিককে সেবা দেয়, তার অধীনে ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) থাকবে। তিনি বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ৩৫ ধরনের ডেটা আছে, ভোটের জন্য কি এটার দরকার আছে? তবে বলছি না, তাদের আইটি সেল বন্ধ করে দেব। তাদের কারিগরি সক্ষমতা নিয়ে নেব। ডেটা অথরিটির মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রিত হবে। যার কাছে যেটা আছে, সেটা তো তার কাছেই থাকবে। যখন রূপান্তরের দরকার হবে, তখন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে আসবে।’

ফয়েজ আহমদ বলেন, ইসি ছাড়াও জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে নাগরিকের ডেটাবেজ আছে। কিন্তু এগুলো বছর পার হলেও এদের মধ্যে কোনো ইন্টার-অপারেবিলিটি (আন্তক্রিয়াশীলতা) নেই। মানুষের তথ্য এখন ডার্কওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সরকার নাগরিকের উপাত্তের নিরাপত্তা ও মানসম্মত করার দিকে নজর দিচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ বলেন, কেউ জন্ম নিলে তার নিবন্ধন হবে সিটি করপোরেশনে। এর বাইরে আর কোনো উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি থাকবে না। এরপর ডেটা হালনাগাদ হবে। তিনি আরও বলেন, উপাত্ত নিয়ে যে জঞ্জাল হয়েছে, তা যক্ষের ধনের মতো আঁকড়ে না ধরে সমস্যা স্বীকার করে তা সমাধানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

উল্লেখ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা ইসির কাছে রাখার দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইসি সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও সারা দেশে ইসির মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

এখন অন্তর্বর্তী সরকার জন্মনিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে স্বতন্ত্র একটি কমিশন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এনআইডি সেবা নিজেদের হাতে রাখতে কর্মসূচি পালন করছেন ইসির কর্মকর্তারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র উপ ত ত উল ল খ সরক র দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’

তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’

বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউট

কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।

পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।

আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • মানিব্যাগ তুলতে সেপটিক ট্যাংকে নেমে বড় ভাইয়ের মৃত্যু, ছোট ভাই হাসপাতালে
  • সিলেটে সহপাঠীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
  • ৪ কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১টি স্থাপনার নাম বদল
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
  • তাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ
  • মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন