মাত্র ৫০ দিন সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আগের যে কোনো উত্তরসূরির চেয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিয়মের ভিতে বেশি নাড়া দিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় লাভের পর ৮০ বছরে এ ভিত অনেক কষ্টে গড়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র।

দিক পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে বা কোনো নৈতিক কৌশল তুলে না ধরেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে পক্ষাবলম্বন করেন এবং আগ্রাসনকারীকে সমর্থন করেন। তিনি মস্কোকে আগ্রাসনকারী আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের আনা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত মিত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার পক্ষে ভোট দিতে দ্বিধা করেননি।

মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড, গাজা ও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যেটি– কানাডার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের মিত্রের (কানাডা) সঙ্গে সীমান্ত মূলত একটি ‘বিভেদের কৃত্রিম রেখা’। ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডার পর তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র, এমনকি মার্কিন বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট চিত্র পাঠানোও বন্ধ করে দেন।

ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির জন্য ‘জোঁক’ আখ্যা দিয়ে মিত্রদের ওপর করারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে ন্যাটোর আস্থা অত্যন্ত গভীরভাবে নষ্ট করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স তাদের পারমাণবিক ছাতা পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে। পোল্যান্ড নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা ভাবছে। এ দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রকে আর চূড়ান্ত সুরক্ষাদাতা মনে করছে না। যখন ন্যাটো চুক্তি হয়, তখন কেন্দ্রে ছিল এ সুরক্ষার বিষয়টি।      

বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিষয়ক দপ্তর তাদের প্রায় অর্ধেক জনবল ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আকার কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এ পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষা দপ্তরের প্রায় ২ হাজার ১০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের মধ্যে পড়তে পারেন। ট্রাম্প অনেক দিন থেকেই শিক্ষা দপ্তরকে বিলুপ্ত করতে চাইছেন। তবে শিক্ষা দপ্তরকে বিলুপ্ত করতে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে। 

বুধবার এনডিটিভি জানায়, শুল্ক নিয়ে আবারও ভারতের সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি জানান, মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর কথা দিয়েছে ভারত। এরই মধ্যেই শুল্ক নিয়ে আরেকবার দিল্লিকে নিশানা করেছে ওয়াশিংটন। 

কানাডার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা প্রত্যাহার 

রয়টার্স জানায়, কানাডার ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী ঘোষণায় আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার এক ঘোষণায় কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার কথা জানান তিনি। তবে কয়েক ঘণ্টা পরই এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র।  

ইউএসএআইডির নথি ধ্বংসের নির্দেশ

মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির বিপুল নথিপত্র ধ্বংসের আদেশ দিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা। মঙ্গলবার আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে এ দাবি তোলা হয়। মার্কিন সরকারি কর্মীদের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়। 

নাসার প্রধান বিজ্ঞানী বরখাস্ত, ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত 

বুধবার এএফপি জানায়, নাসা মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানীসহ আরও কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

এ‘সেলফ ডিপোর্টেশন’ অ্যাপ চালু

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের সম্ভাব্য গ্রেপ্তার ও আটকের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে নিজ থেকে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিতে একটি অ্যাপ চালু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ