কুমিল্লায় গুলিতে পা হারানোর ঘটনায় নাঙ্গলকোট থানার সাবেক ওসি নজরুল ইসলামসহ ৩১ জনের নামে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদনটি করেন নাঙ্গলকোট উপজেলার বাম (পণ্ডিত বাড়ি) গ্রামের বেলাল হোসেন মজুমদার। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ও একটি মসজিদের ইমাম।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট থানার ওসি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেনের ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় ওসির নির্দেশে এসআই বাবুল আলী, সালাউদ্দিন আহমেদ ও কনস্টেবলসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য বেলাল হোসেন ও তাঁর এক অনুসারী বেলায়েত হোসেনকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রাখে। পরে গভীর রাতে তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়কের লুধুয়া নামক স্থানে নিয়ে মারধর করে। এক পর্যায়ে ওসির নির্দেশে তাদের পায়ে গুলি করা হয়। এ সময় গুলির শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পুলিশ সদস্যরা ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এর পর পুলিশ তাদের নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে নাঙ্গলকোট থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করে এবং এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নিয়ে কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
মামলার আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাদী বেলাল হোসেনের পায়ের অবস্থার অবনতি হলে কুমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলেন। অপর ভুক্তভোগী বেলায়েতের পা কাটা না হলেও তিনি যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ মামলার আবেদন আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে– উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন কালু, সাবেক পৌর মেয়র আবদুল মালেক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বাছির, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়া, বাঙ্গড্ডা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।
বাদী বেলাল হোসেন মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো অপরাধ না করেও আমাকে পা হারাতে হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় অন্যান্য আসামিরা ছিলেন। গুলি ও নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছি। আমি দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আশা করি, ন্যায়বিচার পাব।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জানান, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের এমন ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগটি আদালত গ্রহণ করেছেন। পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ঙ গলক ট ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।