সমকাল: রমজান ও ঈদ উপলক্ষে আপনাদের ক্রেডিট কার্ডে কী কী অফার রয়েছে?

খোরশেদ আনোয়ার: প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ও ইএমআই সুবিধা নিয়ে আসে। এ বছর নির্দিষ্ট ক্লোথিং ও ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডে শপিং, সিলেকটিভ গ্রোসারি মার্চেন্টে ক্যাশব্যাক অফার, উইকেন্ড গ্রোসারি শপিংয়ে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, রোজায় নির্দিষ্ট হোটেল চেইনের সঙ্গে বুফে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ডিনার অফার এবং সিলেকটিভ ইএমআই মার্চেন্টে ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন স্টোর, রেস্টুরেন্ট, ট্রাভেল এজেন্সি ও হোটেল বুকিংয়ে বিশেষ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। অফারগুলো নির্দিষ্ট শর্ত ও সীমিত সময়ের জন্য প্রযোজ্য। বিস্তারিত জানতে ইবিএল ওয়েবসাইটে ভিজিট অথবা হেল্পলাইনে কল করতে পারেন গ্রাহকরা।

সমকাল: আপনাদের কার্ডগুলো সম্পর্কে  বিস্তারিত জানতে চাই। 

খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল গ্রাহকদের জীবনযাত্রা ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষভাবে ডিজাইন করা ক্রেডিট কার্ড অফার করে থাকে। আমাদের সব কার্ডই ডুয়াল কারেন্সি সুবিধাসম্পন্ন, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ করে তোলে। আমাদের ক্রেডিট কার্ডগুলো বিভিন্ন গ্রাহক চাহিদার ভিত্তিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। দৈনন্দিন কেনাকাটায় সাশ্রয়ী করার জন্য কিছু কার্ড বিশেষ ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক সুবিধা প্রদান করে। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ট্রাভেল কার্ড। প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য রয়েছে বিশ্বব্যাপী লাউঞ্জ অ্যাক্সেস, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইবিএল স্কাইলাউঞ্জ সুবিধা, ঢাকা বিমানবন্দরে মিট-অ্যান্ড-গ্রিট সেবা, এক্সক্লুসিভ ডিসকাউন্ট ও রিওয়ার্ড পয়েন্টসহ আরও অনেক সুবিধা। ইবিএল ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করে।

সমকাল: ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কতটা বাড়ছে? 

খোরশেদ আনোয়ার: বাংলাদেশের বাজারে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বর্তমান বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন আরও সুবিধাজনক ও সহজলভ্য হয়ে উঠছে। এটি গ্রাহকদের দৈনন্দিন কেনাকাটা ও প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করছে। পাশাপাশি তাদের অর্থ ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি স্বাধীনতা দিচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার ধারণা সামনে রেখে ভবিষ্যতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার আরও দ্রুত বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বাজারের এই বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইবিএল সর্বদা পরিবর্তনশীল গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক ক্রেডিট কার্ড সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারের অগ্রগতিতে ইবিএল অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতেও উদ্ভাবনী অফার ও সুবিধার মাধ্যমে এই সেক্টরে নেতৃত্ব বজায় রাখবে।

সমকাল: ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করতে কী করণীয় রয়েছে?

খোরশেদ আনোয়ার: ডিজিটাল লেনদেনকে আরও জনপ্রিয় করতে হলে ডিজিটাল পেমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন, গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং লেনদেন খরচ কমানো প্রয়োজন। ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং কার্ড পেমেন্টের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের অন্যতম পার্টনার হিসেবে কাজ করছে। আমাদের গ্রাহকদের জন্য রয়েছে ইবিএল স্কাইব্যাংকিং, যা একটি সমৃদ্ধ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপলিকেশন। এটি বিভিন্ন ইবিএল সেবাকে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একত্র করেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা যে কোনো সময়, যে কোনো স্থান থেকে অ্যাকাউন্ট চেক, ফান্ড ট্রান্সফার, বিল পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, ক্রেডিট কার্ড ম্যানেজমেন্ট, এটিএম লোকেশন, ব্রাঞ্চ লোকেশন ট্র্যাকিংসহ আরও অনেক সেবা নিতে পারেন।

সমকাল: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে গ্রাহকদের কোন কোন ক্ষেত্রে সচেতন থাকা উচিত?

খোরশেদ আনোয়ার: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অনুরোধ, দয়া করে কেউ ওটিপি, পিন, সিভিভি বা কার্ড ডিটেইলস কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। ব্যাংক কখনোই গ্রাহকের কাছ থেকে এই তথ্য জানতে চাইবে না। অনলাইন শপিংয়ের সময় বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক কোনো লেনদেন দেখে যোগাযোগ করতে হবে ব্যাংকের  কন্ট্যাক্ট সেন্টারে। আমরা বিশ্বাস করি, গ্রাহক সচেতনতা ও উন্নত সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থা সম্মিলিতভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখবে।

সমকাল: ক্রেডিট কার্ড নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিছু উদ্যোগ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা আমাদের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রোডাক্ট ফিচারস অ্যান্ড বেনিফিটস ক্রমাগত আপডেট করছি, যা ডিজিটালি কম্প্যাটিবল এবং গ্রাহকদের জন্য উপকারী। এ ছাড়া আমরা নতুন ও উদ্ভাবনী ক্রেডিট কার্ড সলিউশন আনার জন্য পেমেন্ট স্কিম পার্টনারদের সঙ্গে কৌশলগতভাবে কাজ করছি। বাজারের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে আমাদের কার্ড সেলস টিমও ধাপে ধাপে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে, যাতে আমরা আরও কার্যকরভাবে নতুন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারি। ইবিএল বিশ্বাস করে, উন্নত গ্রাহক সেবা সাফল্যের চাবিকাঠি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইবিএল ক্রমাগত তার ব্যাংকিং সেবাগুলো উন্নত করছে, যা পরিবর্তনশীল গ্রাহক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। উন্নত ডিজিটাল সেবা ও প্রোডাক্টের মাধ্যমে ব্যাংকিং অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ, নিরাপদ ও দক্ষ করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। ভবিষ্যতে ইবিএল আধুনিক ও উদ্ভাবনী সেবা নিয়ে দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে আরও প্রসারিত হবে বলে আশা করি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক র ড ট ক র ড ব যবহ র গ র হকদ র জ দ র জন য গ র হক ল নদ ন আম দ র সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ও জামায়াতের কাছে কেন আরপিওর ২১ ধারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল

নির্বাচনের আগেই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে গত ছয় দিনে দল দুটির পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর ২১ ধারার সংশোধনীর পরিবর্তন। জামায়াত মনে করে, সরকার বিএনপির চাপে নতি স্বীকার করে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়া সংশোধনী বাতিল করেছে। আর বিএনপি মনে করে, জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ায় ২১ ধারার পরিবর্তন করে; যা গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। আরপিওর ২১ ধারা সংশোধনীর ওই পরিবর্তন বহাল থাকলে কোনো দল জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে বাধ্য ছিল। ৩০ অক্টোবর সেটি আবার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এতে জামায়াত বেশ ক্ষুব্ধ হয়।

যদিও সরকারের দিক থেকে এই নতুন সিদ্ধান্তের তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে সরকার-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি শুধু বিএনপির দাবির কারণে নয়, ছোট বিভিন্ন দলেরও দাবি ছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নিশ্চিত করেছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবেই। আমরা সরকারের কথায় বিশ্বাস করি। সুতরাং এখন থেকে আমাদের সব কার্যক্রম নির্বাচনকেন্দ্রিক। এখন সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কীভাবে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে, সেটি তাদের বিষয়। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে যতটুকু সহযোগিতা দেওয়া দরকার, সেটা বিএনপি করবে।’

বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে...একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

এ দিকে আজ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা হবে। তবে অন্য দিন রাতে সভা হলেও আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সভা বসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজকের সভায় আলোচ্যসূচিতে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিষয় থাকবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

হঠাৎ কেন সামনে এল আরপিওর সংশোধনী

আরপিওর ২১ ধারার সংশোধন বিএনপি ও জামায়াতের কাছে হঠাৎ করে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়। এর পরেই সরকার আরপিওর ২১ ধারার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, নতুন সিদ্ধান্তে বিএনপি উপকৃত হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো, এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভোটের হিসাব-নিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হতো বিএনপি। অন্য দিকে এতে লাভবান হয় জামায়াতসহ তার মিত্র দলগুলো। এর হিসাবটা হচ্ছে, ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আছে একসঙ্গে নির্বাচন করার জন্য এবং সংসদ সদস্য পদে জোটের প্রার্থী হওয়ার আশায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীককে ছোট দলগুলোর নেতারা জয়ের ক্ষেত্রে ‘ভরসা’ হিসেবে দেখেন।

...যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছে না। সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের নায়েবে আমির, জামায়াত

এখন জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হলে ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করতে খুব আগ্রহী হবে না। এর কারণ দুটি। প্রথমত, বিএনপির সমর্থন পেলেও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা না থাকলে ছোট দলগুলোর নেতাদের নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্য দিকে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি আসন ছাড় দিলেও দলের কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে ভোটে জেতা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহীকে সরাতে বিএনপির নেতৃত্ব কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে প্রশ্নও আছে।

এ ছাড়া এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যে আটটি দল আছে, তারা আরপিওর ওই ধারা পরিবর্তনের পক্ষে। অর্থাৎ দলগুলো জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে—এর পক্ষে। এর জন্য দলগুলো যৌথ কর্মসূচিও করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জামায়াত যে নির্বাচনী জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা করতে চাইছে, সে দলগুলো পরস্পর আস্থাশীল। তাদের কাছে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বা ‘হাতপাখা’ বা ‘রিকশা’ প্রতীক কোনো বিষয় নয়। সমঝোতা হলে সবাই ওই প্রতীকের পক্ষে এক হয়ে কাজ করবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা নেই। অন্যদিকে বিএনপির জোটের ক্ষেত্রে ভাবনা হচ্ছে, ধানের শীর্ষ প্রতীক না দিলে ভোটের আগেই আসন হারানোর আশঙ্কা থাকবে।

গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, একটি দলের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে সরকার আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বাতিল করেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাতিল করা হলে সেটি ন্যক্কারজনক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হবে।

আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়।

ঐকমত্য কমিশন সুপারিশের পর থেকেই উত্তাপ

২৮ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ জমা দেয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে—সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংশোধন না করলে আপনা–আপনি সেটা সংবিধানে যুক্ত হবে। এ ছাড়া গণভোট কবে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন নাকি তার আগে—সেটা ঠিক করবে সরকার।

চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ

বিএনপি প্রথমত ক্ষুব্ধ হয় বাস্তবায়নের সুপারিশ থেকে ভিন্নমত বাদ দেওয়ায়। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন, ২৭০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া, সেটা না হলে আপনা-আপনি সংবিধানে যুক্ত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে দলটির আপত্তি আছে। দলটি গণভোট আগে নয়, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে চায়। জামায়াতের অবস্থান এর পুরো বিপরীত।

এসব নিয়ে পরস্পরকে লক্ষ্য করে দল দুটির রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি ক্রমেই বাড়তে থাকে। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।

গতকাল দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা দেখছি যে বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে, ততই বাংলাদেশে একটা অ্যানার্কিক সিচুয়েশন, একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।’

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।

এর আগের দিন শনিবার বিএনপির মহাসচিব জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে যতটা বাধা সৃষ্টি করেছেন, সেটা আপনারা করেছেন।’

পাল্টা বক্তব্য এসেছে জামায়াতের দিক থেকেও। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের গতকাল বিকেলে ঢাকায় এক সেমিনারে বলেছেন, ‘বিএনপি ভেতরে-ভেতরে আবার ফ্যাসিস্ট হওয়ার একটা খায়েশ আছে মনে হচ্ছে। যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছেন না।’

অবশ্য সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই উসকানি দিক, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায় না। মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক আছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দূর করে স্পষ্ট করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। সুতরাং আসুন আমরা সব ভুলে আলোচনায় বসি।’

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এই মুখোমুখি অবস্থা চলতে থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, একটা চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ