ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত কাজ (ওভারটাইম) করার সময় গতকাল বুধবার তাঁরা কারখানায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নের বীর রামপুর এলাকায় ‘জেওসি বিডি গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেড’ নামের একটি কারখানায় ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর আজ কারখানাটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তারা জানান, কারখানায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকেরা গতকাল বেলা ১১টার পর থেকে অসুস্থবোধ করতে থাকেন। শ্রমিকেরা প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে কাজ করার পর রাত ১০টা পর্যন্ত ওভারটাইম করেন। গতকাল সন্ধ্যার পর হঠাৎ শ্রমিকেরা অচেতন হয়ে পড়তে থাকেন। এ অবস্থায় ১৩ জনকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নিয়ামুল হোসাইন বলেন, শ্রমিকেরা দুপুর ১২টা থেকে অসুস্থবোধ করলে কারখানার চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়। শরীরে চিনির পরিমাণ কমে যাওয়া, গরমের কারণে পানিশূন্যতা থেকে এমনটি হতে পারে। দিনের বেলায় শ্রমিকেরা অসুস্থ হলেও কেউ হাসপাতালে আসেনি। তিনি বলেন, শ্রমিকদের সবার রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, রাত নয়টার পর হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ জন শ্রমিককে ভর্তি করা হয়। তাঁদের অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। রাত ১২টার পর শ্রমিকেরা কিছুটা সুস্থ অনুভব করতে থাকেন।

আজ বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের চিকিৎসা চলছে। কারখানাটির বিভিন্ন পদের কর্মীরা শ্রমিকদের ঘিরে আছেন। চিকিৎসাধীন তাহমিনা আক্তার (২৫) জানান, তাঁরা কারখানায় সকাল সাতটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেন। সকালে কাজ শুরুর পর বেলা ১১টার পর হঠাৎ একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়। লাঞ্চের পর আরও কয়েকজন অচেতন হয়ে পড়েন। ইফতারের পর অন্যরা অসুস্থ হতে থাকলে কারখানা ছুটি দেওয়া হয়। আগে দু-একজন অসুস্থ হলেও গতকালের মতো পরিস্থিতি কোনো দিন হয়নি।

কারখানার সেকশন ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিউটির চাপ একটু বেশি ছিল। রোজায় অনেকের শরীর দুর্বল ছিল। দুপুরের পর দু-তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের ছুটি দেওয়া হয়। ইফতারের পর আরও ১০ জন অসুস্থ হলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করি। তাঁরা এখন সুস্থ। খাবার বা অন্য কোনো কারণ থেকে এ সমস্যা হয়নি।’ তিনি বলেন, শ্রমিকেরা আজ কারখানায় এলেও গতকালের পরিস্থিতির কারণে বিশ্রামের জন্য আজ ছুটি দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এমদাদ উল্লাহ খান বলেন, ১০ জন নারী শ্রমিক ভর্তি হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ২২। সবার একই ধরনের উপসর্গ ছিল—মাথা ঘোরাচ্ছিল, অচেতন হয়ে যাচ্ছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, অসুস্থ শ্রমিকেরা ওভারটাইমের কাজ করছিলেন। চিকিৎসায় আজ তিনজনের কিছুটা মাথা ঝিমঝিম ভাব থাকলেও বাকিরা অনেকটা সুস্থ। সাইকোলজিক্যাল ইলনেস থেকে শ্রমিকদের এমন হয়েছে। তবে তদন্ত করলে প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে।

ঘটনা তদন্তে কমিটি

এ ঘটনায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক আহমাদ মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে অসুস্থ হয়ে ১০ জন শ্রমিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। আজ তাঁদের প্রতিনিধি দল হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে। শ্রমিকেরা অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় আজ ও কাল কারখানাটিতে ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অতিরিক্ত কাজের চাপে শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়েছে কি না তা তদন্তের পর বলা যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ কর র র পর ১০ জন ঘটন য় তদন ত গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক

জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।

গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’

২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।

থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে ১০ শ্রমিক আহত
  • ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদিন উদ্যানে উচ্ছেদ হচ্ছে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক
  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
  • ময়মনসিংহে ময়লা ছিটিয়ে টাকা ছিনতাই, দুই বছর পর ঢাকা থেকে আসামি গ্রেপ্তার
  • সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত, ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ময়মনসিংহের সেই মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল, অপসারণের উদ্যোগ
  • ময়মনসিংহে বন্ধুর বাড়িতে যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ
  • টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে ২৫ জন আহত
  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস