ফ্রান্সের বিখ্যাত সাহিত্যিক, লেখক ও সাংবাদিক অলিভিয়ার টড ১৯২৯ সালের ১৯ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ফ্রান্সে যুদ্ধকালীন সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। ফরাসি দার্শনিক জ্য পল সার্ত্রের ঘনিষ্ঠজন এবং নোবেলজয়ী আলবার্ট কামুর জীবনীকার হিসেবে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ষাটের দশকে বিবিসিতে পরিচিত মুখ ছিলেন। ঘটনা বিশ্লেষণ, প্রতিবেদন উপস্থাপন, ভাষাশৈলী এবং সুন্দর চেহারা দিয়ে ব্রিটিশ দর্শকদের মন জয় করেন।
তিনি ছিলেন ফ্রান্সে ইংরেজ প্রবাসী হেলেন টডের অবৈধ পুত্র; যিনি নিজেও ছিলেন ডরোথি টডের অবৈধ কন্যা। ১৯২৬ সালে ডরোথি টড সমকামিতার জন্য ব্রিটিশ ভোগের সম্পাদকের কাজ থেকে অব্যাহতি পান। টডের বাবা জুলিয়াস ওব্লাট একজন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান স্থপতি ছিলেন। অলিভারের জন্মের সময় পর্যন্ত লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। তাঁর মা দীর্ঘদিন গৃহশিক্ষক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেছেন এবং একসময় শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। ১৯৪৭ সালে টড সোরবোনে অধ্যয়ন করার পর কেমব্রিজের কর্পাস ক্রিস্টিতে নৈতিক বিজ্ঞান পড়ার জন্য বৃত্তি লাভ করেন। এর পরের বছর ১৯ বছর বয়সে তিনি দার্শনিক পল নিজানের কন্যা অ্যান-মারি নিজানকে বিয়ে করেন। তৎকালীন ডানকার্কে যুদ্ধে নিজান নিহত হন। এরপর জ্য পল সার্ত্র ছিলেন মারির অভিভাবক।
সার্ত্রকে টড বাবা হিসেবে বিবেচনা করতেন। তিনিই তাঁকে তাঁর প্রথম বইয়ের জন্য একজন প্রকাশক খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলেন এবং বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন। মরক্কোতে থাকাকালীন বিবিসিতে কিছু ভাষ্য প্রদানের সুযোগ পান। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে বিবিসি রেডিওতে নিয়মিত অবদানকারী ছিলেন। ইউরোপীয় যাবতীয় বিষয়ে তিনি কথা বলতেন। ১৯৬৪ সালে মধ্যপ্রাচ্য, ভিয়েতনাম থেকে রাজনৈতিক সাপ্তাহিক ‘লে নুভেল অবজারভেটর’-এ যোগ দেন। সার্ত্র তাঁকে উত্তর ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম ভান ডংয়ের সঙ্গে পরিচয় করান।
এই সময়ের মধ্যে টড ইউরোপা, বিবিসি টু-এর জন্য লন্ডনে যান। ১৯৬৭ সালে তিনি রবার্ট হিউজ এবং লুইস এনকোসির সঙ্গে ‘থ্রি সুইংস অন আ পেন্ডুলাম’ নামে প্রামাণ্যচিত্রে ‘সুইনগিং লন্ডন’-এর বিদেশি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। ফ্রান্সে দ্রুতই তিনি জনপ্রিয় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হিসেবে পরিচিতি পান। টড ভিয়েতনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে একজন ফরাসি বামপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি কমিউনিজমের প্রতি উৎসাহী ছিলেন না। ১৯৭৭ সালে স্যার জেমস গোল্ডস্মিথের ম্যাগাজিন ‘এলএক্সপ্রেস’ ত্যাগ করেন।
এরপর তিনি একজন পূর্ণকালীন লেখক হন। তিনি অ্যালবার্ট কামুর সরকারি জীবনীকার নিযুক্ত হন এবং অনেক পরিশ্রমের পর তাঁর অত্যন্ত প্রশংসিত জীবন, সংগীতশিল্পী জ্যাক ব্রেল এবং ঔপন্যাসিক আন্দ্রে মালরাক্সের জীবনীও লেখেন। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে
মাদারীপুরে মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের প্রেমের টানে চীনের নাগরিক শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসেছেন। বিয়ে করে বর্তমানে মাদারীপুরে শশুরবাড়িতে আছেন। ভিনদেশি যুবককে দেখার জন্য ওই বাড়িতে মানুষ ভিড় করছেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর এলাকার বাসিন্দা সাইদুল হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৯)। সুমাইয়া মাদারীপুর শহরের সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তারা তিন বোন। সুমাইয়া বড়। মেঝ সাদিয়া আক্তার (১২) মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট বোন আরিফা (৬)।
চীনের সাংহাই শহরের সি জিং নিং এর ছেলে শি তিয়ান জিং (২৬)। তারা দুই ভাই। বড় শি তিয়ান জিং। তার চীনের সাংহাই শহরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে।
আরো পড়ুন:
‘একজন ছেলে মানুষ আমাদের পরিবারের বৌ হয়েছিল’
এক বিয়ের বরযাত্রী খেয়ে ফেলল অন্য বিয়ের খাবার
শি তিয়ান জিংকে টিকটকে দেখেন সুমাইয়া। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা আদান-প্রদান হয়। উভয়ই গুগলের মাধ্যমে লেখা অনুবাদ করে মনের ভাব আদান- প্রদান করেন। এক পর্যায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মাত্র চার মাসের প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ২৪ জুলাই চীন থেকে বাংলাদেশ আসেন শি তিয়ান জিং। এরপর এক দিন ঢাকার একটি হোটেলে থাকেন। ২৬ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেচরের সুমাইয়ার বাড়িতে আসেন।
সুমাইয়া, সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম ও তার দুইজন আত্মীয় মিলে ঢাকা থেকে শি তিয়ান জিংকে মাদারীপুরে নিয়ে আসেন। বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারায় মোবাইলে অনুবাদ করে কথা আদান-প্রদান করেন শি তিয়ান জিং। এরপর ২৭ জুলাই তারা বিয়ে করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সুমাইয়ার বাড়িতে মানুষ ভিড় করতে থাকে।
সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘‘টিকটক দেখে আমি ওর ভক্ত হই। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা হয়। পরে দুজনেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। মাত্র চার মাসের প্রেমের সূত্র ধরে চীন থেকে বাংলাদেশ আমার কাছে চলে আসবে, তা কখনো ভাবিনি। ও প্লেনে উঠার সময় বলেছে, আমি বাংলাদেশে আসছি। আমি বিশ্বাস করিনি। যখন ইন্ডিয়া এসে আমাকে জানায়, তখন বিশ্বাস করেছি।’’
সুমাইয়া আক্তার আরো বলেন, ‘‘ও ওর মা-বাবাকে আমার কথা বলেছে। তারাও মুসলিম। ওর মা বলেছেন, আমাকে বিয়ে করে চীনে নিয়ে যেতে। তাই শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করেছেন।’’
সুমাইয়া বলেন, ‘‘এরই মধ্যে পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। শি তিয়ান জিং এক মাস বাংলাদেশে থাকবে। এর মধ্যে আমার কাগজপত্র রেডি করা হবে। তারপর ও আমাকে চীনে নিয়ে যাবে। আমিও চীনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
শি তিয়ান জিং বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আমার ভালো লেগেছে। তবে অনেক গরম। আর অনেক মানুষ আমাকে দেখতে আসে। তাই আমার ভয় লাগে। আমি ভালোবেসে চীন থেকে এখানে এসেছি। সুমাইয়াকে বিয়ে করেছি। এখন ওর কাগজপত্র রেডি করে চীনে নিয়ে যাবো। আমার পরিবার সব জানে। তারাই সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যেতে বলেছেন।’’
সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘শি তিয়ান জিং আমাদের এখানে আছে। ও খুব ভালো ছেলে। খুবই অমায়িক। কোনো অহংকার নেই। এক মাস থাকবে এবং আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে। আমরা খুব খুশি।’’
পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুবেল হাওলাদার জানান, প্রথমে আদালতের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। পরে সামাজিকভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। চীনে ওই ছেলের ব্যবসা আছে। কিছু দিনের মধ্যে সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যাবে।
ঢাকা/বকুল