মাগুরায় ধর্ষকের বাড়িতে আগুন, সড়ক অবরোধ
Published: 13th, March 2025 GMT
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক যখন শিশুটির মাকে মৃত্যুর খবর জানালেন, এর পরপরই মোবাইল ফোনে খবরটি পান চাচা ইব্রাহিম হোসেন। পাশেই ছিলেন চাচি আঁখি খাতুন। মোবাইল ফোনে আহাজারির শব্দে বুঝতে বাকি থাকেনি, আছিয়ার যুদ্ধ শেষ হলো। স্বজনের কান্না-আহাজারিতে এ খবর পৌঁছে যায় পাড়া থেকে গ্রাম; গ্রাম থেকে মাগুরা শহরে। এর পর থেকেই এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন আছিয়ার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
দুপুরে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় আছিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দিনমজুর বাবা-চাচাসহ স্বজনরা কাঁদছেন। লুঙ্গি ও একটা ছেঁড়া শার্ট পরেই বারান্দাতে বসে ছিলেন শিশুটির বাবা। তাঁকে ঘিরে রেখে সান্ত্বনা দিচ্ছেন নারী-পুরুষ। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করছেন। ঘটনার পর আছিয়ার বাবা মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেয়ের মৃত্যুর খবরে তিনি চুপচাপ হাঁটাহাঁটি করছেন, কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।
নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যুর খবরে শিশু থেকে বৃদ্ধ– সবার চোখই ছলছল করতে দেখা গেছে। কান্না-আহাজারিতে শিশুটির শান্তি কামনার সঙ্গে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন অনেকেই।
কয়েকজন জানালেন, শান্ত স্বভাবের মানুষ আছিয়ার বাবা। এ ঘটনার পর থেকে একেবারেই কথা বলছেন না তিনি। অনেকটা মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছেন। পাশেই কান্নারত শিশুটির চাচি আঁখি খাতুন বলেন, কখনও কখনও মনে হয়েছে, মেয়েটা সুস্থ হবে। এবার বেঁচে গেলে আর কখনও বাড়ি থেকে একা ছাড়তাম না। কিন্তু আল্লাহ ডাক শোনেননি। এর মধ্যেই তিনি ‘ধর্ষকের গোটা পরিবারসহ’ সবার ফাঁসির দাবি জানালেন।
তিনি বলেন, যেদিন বোনের সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়, সেদিন যেতে রাজি ছিল না আছিয়া। দু’দিন থেকে বাড়ি আসার জন্য বারবার তার মাকে বলছিল। তার মা বলেছিল ২৫ রোজায় বাড়ি আসতে।
বাড়িতে আসতে না দেওয়ায় অভিমান করেছিল শিশুটি। সেই পাহাড়সম অভিমান নিয়ে চলে গেল সে। সেদিন যদি বাড়িতে আসতে বলতাম, তাহলে মেয়েটির এ অবস্থা দেখা লাগত না আমাদের। ওরও এত কষ্ট নিয়ে মরতে হতো না।
এদিকে, শিশু আছিয়ার নিথর দেহ সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় মাগুরা জেলা স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। স্টেডিয়াম থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নেওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। রাত ৮টার দিকে মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা ও পরে নিজ গ্রাম জারিয়াতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাতেই আছিয়াকে তার গ্রামের বাড়ির কাছে শ্রীপুর উপজেলার সোনাইকুণ্ডি কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় দল-মত নির্বিশেষে মানুষের ঢল নামে। জানাজায় অনেকেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ ঘটনায় দ্রুত বিচার শেষ করার দাবি জানান।
শিশুটির মরদেহ নিয়ে আসা সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক, মাগুরা জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা প্রমুখ।
মাগুরায় আসার পর কথা হয় আছিয়ার মায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার মণিরে বেলেট (ব্লেড) দিয়া কেটে কেটে হত্যা করতে চেয়েছিল ওরা। আমি ওদের ফাঁসি চাই।’
নুরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ছোট শিশুর কবর খোঁড়া দেখলে খুব খারাপ লাগে। সহ্য করার মতো না।’
এদিকে, শিশুটির বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা মোকবুল মিয়া বলেন, তারা (অভিযুক্ত ব্যক্তিরা) অপরাধ করেছে, আর আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অবশ্য মাগুরার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা জানান, যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, এটি রাষ্ট্র বা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কারণ, এত ছোট্ট একটা বাচ্চা ধর্ষিত হওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এটি কারও জন্য মেনে নেওয়া সহজ না। শিশুটি তো আমাদেরই মেয়ে। কাজেই আমরা সেভাবেই দেখছি।’
মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাগুরায় এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম।
জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি লাবণী জামান জানান, সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। যে কারণে মাগুরায় এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে মৃত ধর্ষিত শিশুটির ধর্ষকের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাগুরার আহ্বায়ক হুসাইন বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করা না হলে যুবসমাজ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাগুরায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ধর্ষকের বাড়িতে আগুন, সড়ক অবরোধ
এদিকে, রাতে ধর্ষক হিটু শেখের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন লাগিয়ে দেয়। দমকলবাহিনী আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
রাতেই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাগুরার ভায়না মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে ঢাকা-মাগুরা, যশোর-মাগুরা ও ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ও মহাসড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা