সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক যখন শিশুটির মাকে মৃত্যুর খবর জানালেন, এর পরপরই মোবাইল ফোনে খবরটি পান চাচা ইব্রাহিম হোসেন। পাশেই ছিলেন চাচি আঁখি খাতুন। মোবাইল ফোনে আহাজারির শব্দে বুঝতে বাকি থাকেনি, আছিয়ার যুদ্ধ শেষ হলো। স্বজনের কান্না-আহাজারিতে এ খবর পৌঁছে যায় পাড়া থেকে গ্রাম; গ্রাম থেকে মাগুরা শহরে। এর পর থেকেই এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন আছিয়ার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

দুপুরে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় আছিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দিনমজুর বাবা-চাচাসহ স্বজনরা কাঁদছেন। লুঙ্গি ও একটা ছেঁড়া শার্ট পরেই বারান্দাতে বসে ছিলেন শিশুটির বাবা। তাঁকে ঘিরে রেখে সান্ত্বনা দিচ্ছেন নারী-পুরুষ। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করছেন। ঘটনার পর আছিয়ার বাবা মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেয়ের মৃত্যুর খবরে তিনি চুপচাপ হাঁটাহাঁটি করছেন, কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। 

নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যুর খবরে শিশু থেকে বৃদ্ধ– সবার চোখই ছলছল করতে দেখা গেছে। কান্না-আহাজারিতে শিশুটির শান্তি কামনার সঙ্গে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন অনেকেই। 
কয়েকজন জানালেন, শান্ত স্বভাবের মানুষ আছিয়ার বাবা। এ ঘটনার পর থেকে একেবারেই কথা বলছেন না তিনি। অনেকটা মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছেন। পাশেই কান্নারত শিশুটির চাচি আঁখি খাতুন বলেন, কখনও কখনও মনে হয়েছে, মেয়েটা সুস্থ হবে। এবার বেঁচে গেলে আর কখনও বাড়ি থেকে একা ছাড়তাম না। কিন্তু আল্লাহ ডাক শোনেননি। এর মধ্যেই তিনি ‘ধর্ষকের গোটা পরিবারসহ’ সবার ফাঁসির দাবি জানালেন। 

তিনি বলেন, যেদিন বোনের সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়, সেদিন যেতে রাজি ছিল না আছিয়া। দু’দিন থেকে বাড়ি আসার জন্য বারবার তার মাকে বলছিল। তার মা বলেছিল ২৫ রোজায় বাড়ি আসতে। 
বাড়িতে আসতে না দেওয়ায় অভিমান করেছিল শিশুটি। সেই পাহাড়সম অভিমান নিয়ে চলে গেল সে। সেদিন যদি বাড়িতে আসতে বলতাম, তাহলে মেয়েটির এ অবস্থা দেখা লাগত না আমাদের। ওরও এত কষ্ট নিয়ে মরতে হতো না।

এদিকে, শিশু আছিয়ার নিথর দেহ সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় মাগুরা জেলা স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। স্টেডিয়াম থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নেওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। রাত ৮টার দিকে মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা ও পরে নিজ গ্রাম জারিয়াতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাতেই আছিয়াকে তার গ্রামের বাড়ির কাছে শ্রীপুর উপজেলার সোনাইকুণ্ডি কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় দল-মত নির্বিশেষে মানুষের ঢল নামে। জানাজায় অনেকেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ ঘটনায় দ্রুত বিচার শেষ করার দাবি জানান।

শিশুটির মরদেহ নিয়ে আসা সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক, মাগুরা জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা প্রমুখ।
মাগুরায় আসার পর কথা হয় আছিয়ার মায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার মণিরে বেলেট (ব্লেড) দিয়া কেটে কেটে হত্যা করতে চেয়েছিল ওরা। আমি ওদের ফাঁসি চাই।’
নুরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ছোট শিশুর কবর খোঁড়া দেখলে খুব খারাপ লাগে। সহ্য করার মতো না।’ 
এদিকে, শিশুটির বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা মোকবুল মিয়া বলেন, তারা (অভিযুক্ত ব্যক্তিরা) অপরাধ করেছে, আর আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

অবশ্য মাগুরার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা জানান, যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, এটি রাষ্ট্র বা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কারণ, এত ছোট্ট একটা বাচ্চা ধর্ষিত হওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এটি কারও জন্য মেনে নেওয়া সহজ না। শিশুটি তো আমাদেরই মেয়ে। কাজেই আমরা সেভাবেই দেখছি।’ 

মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাগুরায় এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম। 
জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি লাবণী জামান জানান, সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। যে কারণে মাগুরায় এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে মৃত ধর্ষিত শিশুটির ধর্ষকের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাগুরার আহ্বায়ক হুসাইন বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করা না হলে যুবসমাজ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাগুরায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

ধর্ষকের বাড়িতে আগুন, সড়ক অবরোধ
এদিকে, রাতে ধর্ষক হিটু শেখের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন লাগিয়ে দেয়। দমকলবাহিনী আগুন  নেভানোর চেষ্টা করছে। 
রাতেই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাগুরার ভায়না মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে ঢাকা-মাগুরা, যশোর-মাগুরা ও ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ও মহাসড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার জিসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয়রা ফুটবলে জিসানের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ বলে ডাকেন। 

তারেক রহমানের পক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জিসানের গ্রামের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি জিসানের বাবা ও এলাকাবাসীকে এ খবরটি জানিয়ে আসেন।

উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের অটোরিকশাচালক জজ মিয়ার ছেলে জিসান। মাত্র ১০ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের অসাধারণ দক্ষতার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় চর ঝাকালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। 

কখনও এক পায়ে, কখনও দু’পায়ে, কখনও পিঠে ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করে জিসান। দেখে মনে হবে, ফুটবল যেনো তার কথা শুনছে। এসব কসরতের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে জিসানের ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হন তারেক রহমান। তিনি জিসানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে জিসানের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। 

জিসানকে উপহার হিসেবে বুট, জার্সি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন তিনি। এছাড়া জিসানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।

জিসানের ফুটবল খেলা নিজ চোখে দেখে মুগ্ধ আমিনুল হক বলেন, “জিসান ফুটবলে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। তারেক রহমান জিসানের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে জিসানের লেখাপড়া, ফুটবল প্রশিক্ষণ ও পরিবারের ব্যয়ভারের জন্য টাকা পাঠানো হবে।”

জিসান জানায়, মোবাইলে ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর খেলা দেখে নিজেই ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে। নিজ চেষ্টায় সে এসব রপ্ত করেছে।

জিসানের বাবা জজ মিয়া বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন কেউ না কেউ আমার ছেলের পাশে দাঁড়াবে। আজ আমার সেই বিশ্বাস পূর্ণ হয়েছে।”

ঢাকা/রুমন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর  করতে ডায়েটে যে পরিবর্তন আনতে পারেন
  • অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী
  • ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান