নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরে সুপেয় পানি লইয়া যেই হাহাকার দৃশ্যমান, উহা মনুষ্যসৃষ্ট। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধান চাষে ভূগর্ভের পানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারেই আলোচ্য সংকট তৈয়ার হইয়াছে। একই কারণে গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য গভীর নলকূপেও পানি মিলিতেছে না। পুকুর-জলাশয়েও পানির সংকটে অনেককে সুপেয় পানি ক্রয় করিতে হইতেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে সুবর্ণচরের লক্ষ লক্ষ মানুষের এইরূপ দুর্ভোগ নেহাত দুর্ভাগ্য নহে। সুবর্ণচর রবিশস্যের উপযোগী হইলেও স্থানীয় কৃষকরা যেইভাবে ধান চাষে ঝুঁকিতেছে, উহা উদ্বেগজনক। ইহাতে পানি সমস্যা, তৎসহিত পরিবেশের অন্যান্য সংকট বৃদ্ধিরও আশঙ্কা রহিয়াছে।
সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুবর্ণচরে দুই যুগ পূর্বেও যথায় মাত্র ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হইত, এই বৎসর উহা ১৮ হাজার হেক্টরে উপনীত। এই ধান চাষে ব্যবহার হইয়াছে অর্ধকোটি কিউসেক পানি। যাহা উদ্বেগের, তন্মধ্যে ৭০ শতাংশ পানিই ভূগর্ভ হইতে উত্তোলন করিতে হয়। ধান চাষে ভূগর্ভের পানির ওপর অতিনির্ভরতার কারণে সুবর্ণচরের মানুষ খাবার ও গৃহস্থালিতে সুপেয় পানি হইতে বঞ্চিত। এমনকি ১২ শত ফুট গভীরেও পানি দুষ্প্রাপ্য। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, এইরূপে বোরো আবাদ চলিতে থাকিলে ভূগর্ভের পানি আরও নিম্নগামী হইবে এবং ইহাতে মহাবিপর্যয়ও ঘটিতে পারে। এখন প্রশ্ন হইল, সেচে কেন ভূপৃষ্ঠের পানি কাজে লাগানো হইতেছে না? বিশেষজ্ঞরা জানাইয়াছেন, সুবর্ণচরে বৃহৎ খালগুলি ও লেক সেচের আওতায় আনিলে দুই লাখ হেক্টর পর্যন্ত জমি চাষ করা যাইবে; এমনকি কেবল মেঘনা লেক কাজে লাগাইলে ২০ কোটি কিউসেক পর্যন্ত পানি পাওয়া যাইতে পারে।
আমরা মনে করি, কৃষি বিভাগের ভ্রান্ত নীতির কারণেই সুবর্ণচরে পানির হাহাকার তৈয়ার হইয়াছে। রবিশস্য অধ্যুষিত এলাকায় বোরো ধান চাষ না করিবার বিষয়ে বিধান থাকিলেও এই ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কার্যকর ভূমিকা পালন করিতেছে না কেন? উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলিয়াছেন, ভূগর্ভের পানি রক্ষা ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের লক্ষ্যে তাহারা কৃষককে রবি মৌসুমে অন্যান্য লাভজনক ফসল চাষের পরামর্শ দিতেছেন। তবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসি গভীর নলকূপের অনুমোদন দিতেছে কীরূপে? সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তৎপর না হইলে এই অবিমৃষ্যকারিতা চলিতেই থাকিবে এবং তাহাতে দীর্ঘ মেয়াদে উপজেলার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটে পড়িবে।
জরুরি হইল, সুবর্ণচরে বোরো ধান আবাদ নিয়ন্ত্রণ করা। ধান চাষ নিয়ন্ত্রণ করিলেই কেবল পানির সংকট হ্রাস পাইতে পারে। ইরি ধান চাষাবাদে কৃষককে নিরুৎসাহিত করিতে হইবে, যাহারা ভূপৃষ্ঠের পানি দিয়া চাষাবাদ করিবে, কেবল তাহাদেরই ধান চাষের অনুমোদন দেওয়া যাইতে পারে। বৃষ্টিসহ বর্ষায় ভূপৃষ্ঠের পানি সঞ্চয় করিয়া উহা কৃষিতে ব্যবহারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কৃষি বিভাগ গ্রহণ করিতে পারে। সুবর্ণচরে আমন ধান চাষে গুরুত্ব দিয়া শুষ্ক মৌসুমে রবিশস্য বিষয়েও তদারক করিতে পারে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তরমুজ, ডাউল, বাদাম, মরিচ, শীতকালীন সবজি, সরিষা প্রভৃতি রবি ফসলের মাধ্যমে কৃষকও যাতে অধিক লাভবান হইতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা জরুরি।
প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়া কিছু করিতে গেলেও উহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে বাধ্য। সুবর্ণচরে কীভাবে সময়ের আবর্তনে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান কৃষকের প্রধান ফসল হইয়া উঠিল, উহা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। ইহাতে কেবল কৃষকই দায়ী নহে; তাহাদের জন্য পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টরারাও দায়িত্ব উপেক্ষা করিতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, সুবর্ণচরের বাস্তবতা অনুধাবন করিয়া বিপর্যয়ের পূর্বেই কৃষি বিভাগ ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি, স্নাতক/স্নাতকোত্তরে আবেদন
বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বাণিজ্যিক এ ব্যাংকটি ‘প্রজেক্ট অ্যাপ্রাইজাল অ্যানালিস্ট’ পদে কর্মী নিয়োগ দেবে। গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচিত প্রার্থীরা মাসিক বেতন ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক টেক্সটাইল প্রজেক্টস বিভাগে প্রজেক্ট অ্যাপ্রাইজাল অ্যানালিস্ট পদে কতজনকে নিয়োগ দেবে, তা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ নেই।
আবেদনে শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক/স্নাতকোত্তর অথবা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
অন্যান্য যোগ্যতা: ব্যাংকিং, প্রকল্প মূল্যায়ন অথবা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে অভিজ্ঞতা থাকা। টেক্সটাইল উৎপাদন, যন্ত্রপাতি, খরচ বিশ্লেষণ এবং উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালো ধারণা।
অভিজ্ঞতা: ন্যূনতম ৫ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বেতন: আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে।
অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা: প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্য হবেন।
প্রার্থীর বয়স: ৩৮ বছরের মধ্যে হতে হবে (১৪ মে ২০২৫ তারিখে)।
কর্মস্থল: দেশের যেকোনো স্থানে।
আবেদন যেভাবে—
কাজের ক্ষেত্র, আবেদনপদ্ধতিসহ অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী প্রার্থীরা এখানে ক্লিক করুন।
আবেদনের শেষ তারিখ: আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১৪ মে তারিখের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন৯ ব্যাংকের ৯৭৪ পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ, দেখুন নির্দেশনা৮ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত৩০ এপ্রিল ২০২৫