Samakal:
2025-12-13@13:14:48 GMT

অপরিকল্পিত কৃষির দায়

Published: 13th, March 2025 GMT

অপরিকল্পিত কৃষির দায়

নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরে সুপেয় পানি লইয়া যেই হাহাকার দৃশ্যমান, উহা মনুষ্যসৃষ্ট। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধান চাষে ভূগর্ভের পানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারেই আলোচ্য সংকট তৈয়ার হইয়াছে। একই কারণে গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য গভীর নলকূপেও পানি মিলিতেছে না। পুকুর-জলাশয়েও পানির সংকটে অনেককে সুপেয় পানি ক্রয় করিতে হইতেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে সুবর্ণচরের লক্ষ লক্ষ মানুষের এইরূপ দুর্ভোগ নেহাত দুর্ভাগ্য নহে। সুবর্ণচর রবিশস্যের উপযোগী হইলেও স্থানীয় কৃষকরা যেইভাবে ধান চাষে ঝুঁকিতেছে, উহা উদ্বেগজনক। ইহাতে পানি সমস্যা, তৎসহিত পরিবেশের অন্যান্য সংকট বৃদ্ধিরও আশঙ্কা রহিয়াছে।

সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুবর্ণচরে দুই যুগ পূর্বেও যথায় মাত্র ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হইত, এই বৎসর উহা ১৮ হাজার হেক্টরে উপনীত। এই ধান চাষে ব্যবহার হইয়াছে অর্ধকোটি কিউসেক পানি। যাহা উদ্বেগের, তন্মধ্যে ৭০ শতাংশ পানিই ভূগর্ভ হইতে উত্তোলন করিতে হয়। ধান চাষে ভূগর্ভের পানির ওপর অতিনির্ভরতার কারণে সুবর্ণচরের মানুষ খাবার ও গৃহস্থালিতে সুপেয় পানি হইতে বঞ্চিত। এমনকি ১২ শত ফুট গভীরেও পানি দুষ্প্রাপ্য। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, এইরূপে বোরো আবাদ চলিতে থাকিলে ভূগর্ভের পানি আরও নিম্নগামী হইবে এবং ইহাতে মহাবিপর্যয়ও ঘটিতে পারে। এখন প্রশ্ন হইল, সেচে কেন ভূপৃষ্ঠের পানি কাজে লাগানো হইতেছে না? বিশেষজ্ঞরা জানাইয়াছেন, সুবর্ণচরে বৃহৎ খালগুলি ও লেক সেচের আওতায় আনিলে দুই লাখ হেক্টর পর্যন্ত জমি চাষ করা যাইবে; এমনকি কেবল মেঘনা লেক কাজে লাগাইলে ২০ কোটি কিউসেক পর্যন্ত পানি পাওয়া যাইতে পারে। 

আমরা মনে করি, কৃষি বিভাগের ভ্রান্ত নীতির কারণেই সুবর্ণচরে পানির হাহাকার তৈয়ার হইয়াছে। রবিশস্য অধ্যুষিত এলাকায় বোরো ধান চাষ না করিবার বিষয়ে বিধান থাকিলেও এই ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কার্যকর ভূমিকা পালন করিতেছে না কেন? উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলিয়াছেন, ভূগর্ভের পানি রক্ষা ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের লক্ষ্যে তাহারা কৃষককে রবি মৌসুমে অন্যান্য লাভজনক ফসল চাষের পরামর্শ দিতেছেন। তবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসি গভীর নলকূপের অনুমোদন দিতেছে কীরূপে? সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তৎপর না হইলে এই অবিমৃষ্যকারিতা চলিতেই থাকিবে এবং তাহাতে দীর্ঘ মেয়াদে উপজেলার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটে পড়িবে। 

জরুরি হইল, সুবর্ণচরে বোরো ধান আবাদ নিয়ন্ত্রণ করা। ধান চাষ নিয়ন্ত্রণ করিলেই কেবল পানির সংকট হ্রাস পাইতে পারে। ইরি ধান চাষাবাদে কৃষককে নিরুৎসাহিত করিতে হইবে, যাহারা ভূপৃষ্ঠের পানি দিয়া চাষাবাদ করিবে, কেবল তাহাদেরই ধান চাষের অনুমোদন দেওয়া যাইতে পারে। বৃষ্টিসহ বর্ষায় ভূপৃষ্ঠের পানি সঞ্চয় করিয়া উহা কৃষিতে ব্যবহারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কৃষি বিভাগ গ্রহণ করিতে পারে। সুবর্ণচরে আমন ধান চাষে গুরুত্ব দিয়া শুষ্ক মৌসুমে রবিশস্য বিষয়েও তদারক করিতে পারে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তরমুজ, ডাউল, বাদাম, মরিচ, শীতকালীন সবজি, সরিষা প্রভৃতি রবি ফসলের মাধ্যমে কৃষকও যাতে অধিক লাভবান হইতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা জরুরি। 

প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়া কিছু করিতে গেলেও উহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে বাধ্য। সুবর্ণচরে কীভাবে সময়ের আবর্তনে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান কৃষকের প্রধান ফসল হইয়া উঠিল, উহা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। ইহাতে কেবল কৃষকই দায়ী নহে; তাহাদের জন্য পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টরারাও দায়িত্ব উপেক্ষা করিতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, সুবর্ণচরের বাস্তবতা অনুধাবন করিয়া বিপর্যয়ের পূর্বেই কৃষি বিভাগ ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি কেরানীগঞ্জে বহুতল ভবনের আগুন

ঢাকার কেরানীগঞ্জের আগানগরে জমেলা টাওয়ারে লাগা আগুন ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট। আগুন লাগা ভবনে আটকেপড়া ৪৫ জনকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস৷

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এসব তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের ডাইরেক্টর (অপারেশন) তাইজুল ইসলাম। এর আগে, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ১২ তলা ওই ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে।

আরো পড়ুন:

কৃষিজমি ক্ষতির শঙ্কায় ভেকুসহ মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ

সুনামগঞ্জে আগুনে পুড়ল ৭ ঘর 

তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরে আরো ১০টি ইউনিট যুক্ত হয়। বর্তমানে ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে আটকে পড়া ৪৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘ভবনের ভেতরে বিপুল পরিমাণ দাহ্য বস্তু থাকায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে রবিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে অতিরিক্ত ইউনিট মোতায়েন করা হবে এবং আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’’

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এখনই সূত্রপাত বলা যাবে না, আগে আগুন নিয়ন্ত্রণ করব, তারপর সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।’’

ঢাকা/শিপন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ