আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, ওই সময় নির্বাচন আয়োজন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হবে। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরুও করেছে তারা। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন করতে কী কী প্রস্তুতি লাগে কমিশনের, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে অনেকের মনেই।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, মোটাদাগে নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে আছে—ছবিসহ একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়ার মতো কাজগুলো। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তুতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ করতে হয়। আর কিছু প্রস্তুতি নিতে হয় তফসিল ঘোষণার পর।

গত চার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেখা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসি নিজে নির্বাচনী আইনবিধি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করেছিল। নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও আয়োজন করা হয়েছিল। নির্বাচনের দুই-এক বছর আগে থেকেই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে শুরু করা হয়েছিল প্রস্তুতিমূলক কাজ।

গত চার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেখা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসি নিজে নির্বাচনী আইনবিধি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করেছিল। নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও আয়োজন করা হয়েছিল। নির্বাচনের দুই-এক বছর আগে থেকেই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে শুরু করা হয়েছিল প্রস্তুতিমূলক কাজ।

নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিমূলক কাজ হলো, ভোটার তালিকা তৈরি ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা। ভোটার তালিকা তৈরি করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ইসি প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চের মধ্যে এ তালিকা হালনাগাদ করে। এ ছাড়া প্রয়োজনে যেকোনো সময় তালিকা সংশোধন করতে পারে ইসি।

আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা (২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে) প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমও চলছে। এর অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করা যাবে বলে মনে করছে ইসি। তবে এটি চূড়ান্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। এর আগে নির্বাচন হলে ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করতে আইনে সংশোধনী আনার প্রয়োজন হতে পারে।

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করাও ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করা আছে। আইন অনুযায়ী, কোনো আদমশুমারির পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে ও ইসি চাইলে যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে পারে। নির্দিষ্ট আইনের ভিত্তিতে কাজটি করতে হয়। সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করে শুনানির মাধ্যমে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর আসনবিন্যাস চূড়ান্ত করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণে দেড় মাস ও সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ কাজে চার মাসের মতো সময় নিয়েছিল ইসি।

নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ও নির্বাচনের পরিবেশ। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসির ওপর নির্ভর করে। তবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির বিষয়টি পুরোপুরি ইসির একার ওপর নির্ভর করে না। এখানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।বদিউল আলম মজুমদার, সুজনের সম্পাদক

ভোটকেন্দ্র স্থাপন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণত বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য একটি নীতিমালা আছে। ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করতে হয়।

সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়ে থাকে ইসি। এ জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। কিছু শর্ত পূরণ করলে দেওয়া হয় নিবন্ধন। প্রথমে করা হয় আবেদন যাচাই-বাছাই। কাগজপত্র ঠিক থাকলে মাঠপর্যায়ের তথ্য সরেজমিন যাচাই করে ইসি। এরপর নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নেয়। এ কাজ করতেও কয়েক মাস লাগে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো, প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা। ভোটের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, থলে, ১৭ ধরনের খাম, কাগজ, কলম, ছুরি, মোমবাতি, দেশলাইসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। ভোটের বেশ আগে ভাগেই তাদের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অন্য সামগ্রীর বেশ কিছু কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এ কারণে কিছুটা লম্বা সময় প্রয়োজন হয় কেনাকাটায়।

রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় ভোটের তফসিলের সময়। সাধারণত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। আর প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের। এটি চূড়ান্ত করা হয় তফসিল ঘোষণার পর। এরপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাঁদের।

ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি করে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়ে থাকে ইসি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক এ কাজগুলো অনেকটা ‘রুটিন ওয়ার্কের’ মতো। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। তফসিল ঘোষণার পর সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব। এর আগে পরিবেশ তৈরির মূল ভূমিকা সরকার ও দলগুলোর।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা তৈরি ও আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ—এ দুটি কাজে একটু বেশি সময় প্রয়োজন হয়। প্রস্তুতির বাকি কাজগুলো আসলে চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য বেশি সময় প্রয়োজন হয় না।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এসব প্রস্তুতির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ও নির্বাচনের পরিবেশ। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসির ওপর নির্ভর করে। তবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির বিষয়টি পুরোপুরি ইসির একার ওপর নির্ভর করে না। এখানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র পর ব শ ত র ভ টক ন দ র স ধ রণত ন র জন র জন য হয় ছ ল ন করত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ