১৮ বছরে ১৪ অধিনায়ক, এবার কি প্রথম ট্রফির দেখা মিলবে
Published: 14th, March 2025 GMT
আইপিএলের ১৮তম আসর শুরু হতে আর এক সপ্তাহ বাকি। টুর্নামেন্টের ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজির ৯টিই আগেভাগে অধিনায়কের নাম ঘোষণা করেছে। বাদ ছিল শুধু দিল্লি ক্যাপিটালস। গতকাল দিল্লিও অধিনায়ক বেছে নেওয়ার কাজটা সেরে ফেলেছে।
এ মৌসুমে দিল্লিকে নেতৃত্ব দেবেন ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিজয়ী অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল। লোকেশ রাহুল অনীহা দেখনোয় শেষ মুহূর্তে অক্ষরকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারতের রাজধানীর ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক হিসেবে গত বছরই অভিষেক হয়েছে অক্ষরের। মন্থর ওভার রেটের কারণে ঋষভ পন্ত এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় থাকায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে দলকে নেতৃত্ব দেন অক্ষর। ৩৬ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার এবার স্থায়ীভাবে অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন।
আইপিএলের যাত্রা শুরুর সময় থেকে খেলে আসছে, এমন দলগুলোর একটি দিল্লি ক্যাপিটালস। অক্ষরকে নিয়ে দলটি ১৮ বছরে ১৪ জনকে অধিনায়ক বানিয়েছে। কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে পারেননি কেউই। টুর্নামেন্টের সব আসরেই খেলা দলগুলোর মধ্যে পাঞ্জাব কিংস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও দিল্লি ক্যাপিটালসই এখন পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারেনি।
২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরের আগে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারে (বর্তমানে ১ হাজার ২০ কোটি ৩১ লাখ টাকার সমপরিমাণ) দিল্লি ক্যাপিটালস কিনে নেয় জিএমআর গ্রুপ। ২০১৮ সাল পর্যন্ত দলটির নাম ছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। সেই বছরের মার্চে জিএমআর গ্রুপ দলটি ৫০ শতাংশ মালিকানা ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারে (বর্তমানে ৭৬৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার সমপরিমাণ) জেএসডব্লু গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়।
দিল্লি ক্যাপিটালসের যত অধিনায়কপরে নামেও পরিবর্তন আনা হয়—দিল্লি ডেয়ারডেভিলস থেকে দিল্লি ক্যাপিটালস। ২০১৯ আসর থেকে এই নামে খেলে আসছে দলটি। কিন্তু নাম বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি, ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি এখনো।
আইপিএলের আগের ১৭ আসরের ১১টিতেই লিগ পর্ব (প্রথম পর্ব) থেকে বিদায় নিয়েছে দিল্লি। সেমিফাইনালে খেলেছে দুবার, প্লে-অফ পর্বে তিনবার, রানার্সআপ হয়েছে একবার।
দিল্লির প্রথম অধিনায়ক ছিলেন ভারতের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ। তাঁর নেতৃত্বেই দলটি সর্বোচ্চ ৫২ ম্যাচ খেলেছে। ভারত জাতীয় দলের বর্তমান প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরও দুই মেয়াদে দিল্লির নেতৃত্বে ছিলেন। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কেভিন পিটারসেন, রস টেলরের মতো কিংবদন্তিরাও এই দলের অধিনায়কত্ব করেছেন, কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় নিতে পারেননি।
দিল্লির সেরা সাফল্য ২০২০ সালে করোনাকালীন আসরের ফাইনালে খেলা। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার, যাঁর নেতৃত্বে গত বছর কলকাতা নাইট রাইট রাইডার্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবারের মেগা নিলামে আইয়ারকে ২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় কিনেছে পাঞ্জাব কিংস। তাঁকেই দলটির অধিনায়ক করা হয়েছে।
দিল্লির নতুন স্থায়ী অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল ২০১৩ আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের শিরোপাজয়ী দলের সদস্য। তবে ওই মৌসুমে কোনো ম্যাচে খেলা হয়নি। আইপিএলে তাঁর অভিষেক পরের বছর। ২০১৪ মৌসুমে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে ফাইনালে খেলেছেন। ২০১৮ পর্যন্ত পাঞ্জাবেই ছিলেন।
২০১৯ মৌসুমে নাম লেখান দিল্লিতে। তখন থেকে এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতেই আছেন। ছয় বছরে তাঁর দাম বেড়েছে তিন গুণের বেশি। মেগা নিলামের আগে তাঁকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে ধরে রেখেছে দিল্লি। অক্ষরের হাত ধরে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি অধরা ট্রফির দেখা পায় কি না, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।
আইপিএলে দিল্লির প্রথম ম্যাচ ২৪ মার্চ বিশাখাপত্তনমে, প্রতিপক্ষ লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ ক য প ট লস প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।
অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।
সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
আরো পড়ুন:
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।
রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।
‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।
একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’
তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।
বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।
‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।
‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’
একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।
‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’
জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’
তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’
বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তারা//