কানাডা পালিয়ে গেছেন মরক্কোয় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত
Published: 14th, March 2025 GMT
কানাডা পালিয়ে গেছেন মরক্কোয় দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদ। সেখানে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী এবং ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার পক্ষে লেখালেখি করছেন। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বিগত সরকারের অনুচরদের প্রশ্রয় ও পুনর্বাসন না করা হলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতো না বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মরক্কোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ এবং আমার জন্য একটি আবেদন। বিষয়: ড.
সেখানে রাষ্ট্রদূত লেখেন, ‘মানবতার বিবেকের উদ্দেশে: বাংলাদেশ আজ নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছড়িয়ে দেওয়া বর্বরতার শিকার। লাখো মানুষ এক ভয়ংকর বাস্তবতার মুখোমুখি– মৃত্যু, নির্বাসন, অথবা উগ্রপন্থার কাছে আত্মসমর্পণ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দেশটি তার ইতিহাসের এক অন্ধকারতম অধ্যায়ের মুখোমুখি হয়– একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে বাংলাদেশের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। যখন দেশ জ্বলছিল এবং শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছিল, মুহাম্মদ ইউনূস তখন আত্মপ্রকাশ করেন দখলদার হিসেবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত জিহাদিরা যেমন ফরহাদ মজহার ও জাহেদুর রহমান– শেখ হাসিনার বাক্স্বাধীনতার নীতির সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থার প্রচার চালিয়েছে। তারা হিন্দু ও ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে, শুধুমাত্র এই কারণে যে, শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের হিন্দুরা নিরাপদ ছিল। তাদের মিথ্যাচার বাংলাদেশি মুসলিমদের মনে ভারতবিদ্বেষকে এক মানসিক ব্যাধিতে পরিণত করেছে, যা উগ্রপন্থার পথ সহজ করে দিয়েছে।’
হারুন আল রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিচয় ধ্বংস: ইউনূসের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই জিহাদিরা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় ধ্বংস করেছে, ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে দিয়েছে। তারা শুধু জাদুঘর, ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও সাংস্কৃতিক প্রতীক ধ্বংস করেনি; শত শত সুফি দরগাহ এবং হিন্দু মন্দিরও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ইউনূসের শাসনে বাংলাদেশ নারীদের প্রতি সবচেয়ে নির্যাতনমূলক দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। সংখ্যালঘু ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, আর হিযবুত তাহ্রীর, আইএস ও আল কায়দা প্রকাশ্যে তাদের লাল-কালো পতাকা উড়িয়ে ইসলামী খেলাফতের দাবি জানাচ্ছে। জুলাই-আগস্ট মাসের সন্ত্রাসীরা এদের মধ্য থেকেই উঠে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু ড. ইউনূস শুধু তাদের রক্ষা করেননি– তাদের ক্ষমতাও দিয়েছেন। তার সরকারে সন্ত্রাসীরা মন্ত্রী হয়েছে, আর যাদের তিনি মন্ত্রিত্ব দিতে পারেননি, তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ করে দিয়েছেন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে কূটনীতিকের এমন মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, যে সরকারই এসেছে, তারাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ৫ আগস্টের পর পুরো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানোর সুযোগ এসেছিল। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব বিগত আমলে যেসব কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তারাই মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে রেখেছেন। সেই সঙ্গে এসব কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় ভালো ভালো পোস্টিং নিয়ে বিদেশে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ব্যর্থতা। আর কর্মকর্তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই এখানকার শীর্ষ কর্মকর্তাদের।
এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মরক্কোয় বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছর ১১ ডিসেম্বর দেশে প্রত্যাবর্তন ও অনতিবিলম্বে মন্ত্রণালয়ে যোগদানের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এ সত্ত্বেও তিনি তাঁর পদে বহাল থেকে চলতি বছর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব ত্যাগ করেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার পরিবর্তে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে তাঁর যাত্রা বিলম্বিত করেন। মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন ছাড়াই তিনি মরক্কোর রাবাত থেকে কানাডার অটোয়ায় চলে গেছেন। ৬ মার্চ তাঁর অটোয়া থেকে ঢাকায় ফিরে আসার কথা থাকলেও তিনি ফেরত আসেননি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের গুণকীর্তনের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রচেষ্টাসহ দেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং বাস্তবতাকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃত উপস্থাপন করে ফেসবুকে এ ধরনের লেখা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এর বিষয়বস্তু গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এ রূপ উদ্দেশ্য বা অসৎ অভিসন্ধির ইঙ্গিত দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তাঁর এবং পরিবারের পাসপোর্ট বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয় এ কূটনীতিকের কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র ম হ ম মদ মরক ক য় ইউন স র সরক র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল
১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।
১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।
১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।
মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।
বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।
আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।
কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।
ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি