চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কয়েক বছর আগে সংস্কার কাজ শুরু হয় যশোর সদরের ১১টি সড়কে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়কগুলোর কয়েকটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চার-পাঁচ বছর আগেই। তবে এত বছরেও মাত্র ৫০-৬০ শতাংশের মতো কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদাররা। ম্যাকাডাম পদ্ধতিতে ইটের খোয়া ও বালু ফেলে রোলার ব্যবহার করলেও বছরের পর বছর কার্পেটিং (পিচের প্রলেপ) না করায় সড়কগুলোর অনেক স্থানেই আবার খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। ইটের গুঁড়া ও বালুতে পথচারী ও সড়কের পাশের বসতবাড়ির লোকজন হচ্ছেন নাস্তানাবুদ। আর বৃষ্টি হলে কাদায় চলা দায় হয়ে পড়ছে। 
এলজিইডি অফিস থেকে জানা গেছে, যশোর উপশহরের তৈলকূপ বাজার সড়কের কাশিমপুর ভায়া দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ পান ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম। ২০২০ সালের ১৬ জুন ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও পাঁচ বছরে সংস্কার হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। একই বছরের ৬ আগস্ট সংস্কার শেষ হওয়ার কথা ছিল দেয়াড়া ইউনিয়নের নতুনহাট থেকে দত্তপাড়া পর্যন্ত ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কে। তবে এই কাজও হয়েছে ৬০ শতাংশ। সদর উপজেলারই হুদার মোড় থেকে হাপানিয়া ভায়া ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হানিফ ট্রেডিং অ্যান্ড স্টিল হাউস। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই কাজ শেষের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। 

এ ছাড়া বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সেবানন্দপুরের খেয়াঘাট সড়কের ৪ দশমিক ১১৩ কিলোমিটার ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল, কিসমত-হৈবতপুরে শূন্য দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ২০২১ সালের ২০ আগস্ট, কিসমত হৈবতপুরে ২ দশমিক ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ২০২০ সালের মে মাসে, বলাডাঙ্গা-মথুরাপুর সড়কের ২ দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং মালঞ্চী কোল্ডস্টোর থেকে আরবপুর ইউপি সড়ক ২০২১ সালের জুলাইয়ে, শর্শনাদাহ-ভবানীপুর সড়কের এক দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক ২০২৪ সালের জুনে, একই বছরের সেপ্টেম্বরে মনোহরপুর যোগীপাড়া থেকে ওসমানপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক এবং ডিসেম্বরে চুড়ামনকাটি সড়ক সংস্কারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে এই সময়ে কাজ শেষ হয়েছে ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।  
দীর্ঘদিনেও সড়কগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। আরবপুরের ইজিবাইক চালক মহসিন আলী বলেন, রাস্তায় ইট দিয়ে পাঁচ-ছয় বছর ফেলে রাখছে। যেমন ধুলাবালি ওড়ে, আবার গর্তে পড়ে বিভিন্ন সময় গাড়ি উল্টে যায়। একটু বৃষ্টি হলে তো চলার কোনো উপায়ই থাকে না।
সালতা গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, এই রাস্তা দিয়ে ২০-২৫ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা, এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। ইটের খোয়া বিছানোর পর চার থেকে পাঁচ বছর ফেলে রাখায় খানাখন্দের পাশাপাশি অনেক স্থানে রাস্তা উঁচু-নিচু হয়ে গেছে।
হৈবতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠিকাদাররা এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। এর পর খোয়া দেয়। কিন্তু কার্পেটিং করার সময় খোঁজ পাওয়া যায় না। 
শর্শনাদাহ গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, শর্শনাদাহ-ভবানীপুরের সড়ক দিয়ে কৃষক সবজি-ধান আনা-নেওয়া করে। কয়েক বছর ধরে এই রাস্তা সংস্কারের নামে ফেলে রাখায় কৃষকরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। 

আনন্দ বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদার দাবি করেন, নানা সংকটের কারণে রাস্তার কাজ করতে দেরি হয়েছে। তবে ঈদের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন। আরেক ঠিকাদার আব্দুর রউফের দাবি, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। এ জন্য কাজে দেরি হয়েছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করবেন।
যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী চৌধুরী মোহাম্মদ আসিফ রেজা বলেন, কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক সংস্কারের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের অবহেলায় কাজ শেষ হয়নি। অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখায় জনসাধারণের দুর্ভোগ হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত বাকি কাজ শেষ করা হবে।
এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান জানান, যশোরে অনেক সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ না করে ঠিকাদাররা ফেলে রেখেছেন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে দ্রুত কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো কাজগুলো শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদাররা দ্রুত কাজ শুরু না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক ক ল ম ট র সড়ক ক জ শ ষ কর ক জ কর শ ষ হয় চ বছর দশম ক সড়ক র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাণের গানে সালাহর উৎসব

শেষ বাঁশি বাজতেই নেচে-গেয়ে উৎসবে মাতেন সালাহ-অ্যালিসন-এলিস্টাররা। তবে পর্বটা খুব বেশি লম্বা হয়নি। অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক সবাইকে ডেকে মাঠের একটি গোলপোস্টের সামনে জড়ো করেন। আর্নে স্লটের নেতৃত্বে কোচিং স্টাফরাও যোগ দেন সেখানে। গ্যালারি সামনে রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চেইনের মতো করে সারিবদ্ধভাবে দেয়াল বানিয়ে দাঁড়ান সবাই। পুরো এনফিল্ড তখন সমবেত কণ্ঠে গাইতে শুরু করে– You’ll Never Walk Alone...। অলরেডদের হৃদয় থেকে উৎসারিত এ গানেই পূর্ণতা পায় উৎসব।

এ গানের সঙ্গে সঙ্গে অন্য রকম এক আবহ তৈরি হয় সেখানে। বিশ্বের কোনো স্টেডিয়াম ছুঁতে পারবে না এনফিল্ডের এই আবহ। এই আবহ তৈরি অলরেডদের বিশ্বাসে, বছরের পর বছর যারা কেউ কাউকে একা হাঁটতে দেয়নি। রোববার সকাল থেকেই এনফিল্ডের চারপাশে তৈরি হয়েছিল উৎসবের পরিবেশ। আতশবাজি ও লাল আবিরে রঙিন হয়ে উঠেছিল লিভারপুলের আকাশ-বাতাস। আগে থেকেই বন্দর শহরটির দেয়ালে দেয়ালে ঐতিহাসিক গানটির সঙ্গে ‘২০’ লেখা গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়ে গিয়েছিল। 

ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগেই এনফিল্ড চত্বর রীতিমতো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর্নে স্লট, সালাহদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। লাল জার্সি পরা কাতারে কাতারে সমর্থকদের মাঝখান দিয়ে লাল বাসে করে লিভারপুলের ফুটবলাররা স্টেডিয়ামের আঙিনায় প্রবেশ করেন অন্যরকম এক পরিবেশে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমের পর ৩০ বছর ট্রফি জেতেনি তারা। পাঁচ বছর আগে ট্রফি জিতলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উদযাপন হয়েছিল দর্শকশূন্য গ্যালারিতে। তাই এমন অনেক সমর্থক আছেন, যারা প্রিয় ক্লাবকে লিগ জিততে দেখেননি। সেই তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাসটা ছিল বেশি। 

২০তম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব আর্নে স্লট দিয়েছেন সাবেক কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে। এমনকি তিনি সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে পুরো গ্যালারিকে নিয়ে ক্লপের নামে গানও গেয়েছেন। ২০১৫ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর ক্লপ তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ক্লাবটিকে। এর মধ্যে দুবার অবিশ্বাস্য লড়াই করেও মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে ম্যানসিটির কাছে শিরোপা হারাতে হয়েছিল তাদের। ২০২০ সালে জিতলেও সমর্থকদের নিয়ে উল্লাস করতে পারেননি।

ক্লপের লিগজয়ী দলের সদস্য ছিলেন মোহামেদ সালাহ। এবার ভিন্ন স্বাদ পেয়েছেন মিসরীয় এ তারকা। শিরোপা জয়ের পর স্কাই স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে শিরোপা জয়ের অনুভূতি অবিশ্বাস্য। গতবারের (২০২০) চেয়ে এবার শতভাগ ভালো ছিল। এটা অনেক বেশি আনন্দময়। এটা সত্যিই বিশেষ কিছু।’ 

প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জেতা আর্জেন্টাইন তারকা এলেক্সিস ম্যাক এলিস্টারের জন্যও এ শিরোপা বিশেষ কিছু, ‘বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, এখন জিতেছি প্রিমিয়ার লিগ। আমার জন্য সত্যই এটা বিশেষ কিছু। সতীর্থদের ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। আমাদের দলটি সত্যিই অসাধারণ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালনের দাবি ট্রাম্পের
  • অকার্যকর সিসি ক্যামেরা, পানি নেই ছয় মাস
  • বাধ্যবাধকতা থাকায় ইশরাকের গেজেট প্রকাশ: ইসি
  • প্রাণের গানে সালাহর উৎসব
  • ‎আবু সাঈদ হত্যায় অভিযুক্তদের হলের সিট বাতিল
  • আবু সাঈদ হত্যায় অভিযুক্ত ৪ শিক্ষার্থীর আবাসিকতা বাতিল
  • ক্রিকেটার নাসির ও তামিমার মামলায় শুনানিতে আদালত বিব্রত
  • নাসির-তামিমার মামলায় বিব্রত আদালত, অন্য আদালতে বদলি
  • নাসির-তামিমার মামলার শুনানি বিব্রত আদালত, বদলির আদেশ