১১ সড়ক খুঁড়ে ঠিকাদারের খবর নেই বছরের পর বছর
Published: 14th, March 2025 GMT
চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কয়েক বছর আগে সংস্কার কাজ শুরু হয় যশোর সদরের ১১টি সড়কে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়কগুলোর কয়েকটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চার-পাঁচ বছর আগেই। তবে এত বছরেও মাত্র ৫০-৬০ শতাংশের মতো কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদাররা। ম্যাকাডাম পদ্ধতিতে ইটের খোয়া ও বালু ফেলে রোলার ব্যবহার করলেও বছরের পর বছর কার্পেটিং (পিচের প্রলেপ) না করায় সড়কগুলোর অনেক স্থানেই আবার খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। ইটের গুঁড়া ও বালুতে পথচারী ও সড়কের পাশের বসতবাড়ির লোকজন হচ্ছেন নাস্তানাবুদ। আর বৃষ্টি হলে কাদায় চলা দায় হয়ে পড়ছে।
এলজিইডি অফিস থেকে জানা গেছে, যশোর উপশহরের তৈলকূপ বাজার সড়কের কাশিমপুর ভায়া দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ পান ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম। ২০২০ সালের ১৬ জুন ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও পাঁচ বছরে সংস্কার হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। একই বছরের ৬ আগস্ট সংস্কার শেষ হওয়ার কথা ছিল দেয়াড়া ইউনিয়নের নতুনহাট থেকে দত্তপাড়া পর্যন্ত ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কে। তবে এই কাজও হয়েছে ৬০ শতাংশ। সদর উপজেলারই হুদার মোড় থেকে হাপানিয়া ভায়া ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হানিফ ট্রেডিং অ্যান্ড স্টিল হাউস। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই কাজ শেষের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ।
এ ছাড়া বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সেবানন্দপুরের খেয়াঘাট সড়কের ৪ দশমিক ১১৩ কিলোমিটার ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল, কিসমত-হৈবতপুরে শূন্য দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ২০২১ সালের ২০ আগস্ট, কিসমত হৈবতপুরে ২ দশমিক ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ২০২০ সালের মে মাসে, বলাডাঙ্গা-মথুরাপুর সড়কের ২ দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং মালঞ্চী কোল্ডস্টোর থেকে আরবপুর ইউপি সড়ক ২০২১ সালের জুলাইয়ে, শর্শনাদাহ-ভবানীপুর সড়কের এক দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক ২০২৪ সালের জুনে, একই বছরের সেপ্টেম্বরে মনোহরপুর যোগীপাড়া থেকে ওসমানপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক এবং ডিসেম্বরে চুড়ামনকাটি সড়ক সংস্কারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে এই সময়ে কাজ শেষ হয়েছে ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।
দীর্ঘদিনেও সড়কগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। আরবপুরের ইজিবাইক চালক মহসিন আলী বলেন, রাস্তায় ইট দিয়ে পাঁচ-ছয় বছর ফেলে রাখছে। যেমন ধুলাবালি ওড়ে, আবার গর্তে পড়ে বিভিন্ন সময় গাড়ি উল্টে যায়। একটু বৃষ্টি হলে তো চলার কোনো উপায়ই থাকে না।
সালতা গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, এই রাস্তা দিয়ে ২০-২৫ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা, এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। ইটের খোয়া বিছানোর পর চার থেকে পাঁচ বছর ফেলে রাখায় খানাখন্দের পাশাপাশি অনেক স্থানে রাস্তা উঁচু-নিচু হয়ে গেছে।
হৈবতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠিকাদাররা এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। এর পর খোয়া দেয়। কিন্তু কার্পেটিং করার সময় খোঁজ পাওয়া যায় না।
শর্শনাদাহ গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, শর্শনাদাহ-ভবানীপুরের সড়ক দিয়ে কৃষক সবজি-ধান আনা-নেওয়া করে। কয়েক বছর ধরে এই রাস্তা সংস্কারের নামে ফেলে রাখায় কৃষকরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
আনন্দ বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদার দাবি করেন, নানা সংকটের কারণে রাস্তার কাজ করতে দেরি হয়েছে। তবে ঈদের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন। আরেক ঠিকাদার আব্দুর রউফের দাবি, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। এ জন্য কাজে দেরি হয়েছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করবেন।
যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী চৌধুরী মোহাম্মদ আসিফ রেজা বলেন, কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক সংস্কারের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের অবহেলায় কাজ শেষ হয়নি। অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখায় জনসাধারণের দুর্ভোগ হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত বাকি কাজ শেষ করা হবে।
এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান জানান, যশোরে অনেক সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ না করে ঠিকাদাররা ফেলে রেখেছেন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে দ্রুত কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো কাজগুলো শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদাররা দ্রুত কাজ শুরু না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক ক ল ম ট র সড়ক ক জ শ ষ কর ক জ কর শ ষ হয় চ বছর দশম ক সড়ক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন
ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউর রহমান ফারাবী অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ জামিন দেন।
বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী। ২০২২ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। বিচারাধীন আপিলে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ফারাবী, যা আজ আদালতের কার্যতালিকায় ১৭৯ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে ফারাবীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মুহাম্মদ হুজ্জাতুল ইসলাম খান শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. এমরান খান।
পরে আইনজীবী মুহাম্মদ হুজ্জাতুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৫ সালের ৩ মার্চ থেকে কারাগারে আছেন ফারাবী। ফারাবী ১৬৪ ধারায় কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মামলায় চারজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের কেউই ফারাবীর নাম উল্লেখ করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোনো সাক্ষীর বক্তব্যেও তাঁর নাম আসেনি। এসব যুক্তিতে ফারাবীর জামিন চাওয়া হয়। বিচারাধীন আপিলে ফারাবীকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।’
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ২৮ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
এই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় দেন। রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং এক আসামিকে (শফিউর রহমান ফারাবী) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।