ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পূর্বাচলে সরকারি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক আরও অভিযোগ করে, নিজের বোনের নামে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করেছিলেন টিউলিপ। তাতে এক আইনজীবীর জাল সই ব্যবহার করা হয়েছিল।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য। তিনি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’–এর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদে ইস্তফা দেন তিনি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুদকের দাবি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য পূর্বাচলের নিউ টাউন প্রকল্পের সরকারি প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। বৃহস্পতিবার দুদকের প্রকাশিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বোনের নামে আলাদা একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরের জন্য একটি জাল নোটারি ব্যবহার করেছিলেন তিনি।

দুর্নীতির অভিযোগে কাউকে বিচারের আওতায় আনা এবং দুর্নীতির ঘটনা তদন্তের এখতিয়ার রয়েছে দুদকের। সংস্থাটি জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ-সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বৃহত্তর তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ হাসিনার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনছে তারা।

দুদকের দাবি, আইন লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনেরা সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়েছিলেন। দুদকের চেয়ারম্যান ড.

মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘এটি হিমশৈলর চূড়ামাত্র। বর্তমানে দুদকে তদন্তাধীন আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে, যেগুলো ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরাট দুর্নীতি তুলে ধরবে।’

দুদক দাবি করেছে যে পূর্বাচলের নিউ টাউন প্রকল্পের ৬০ কাঠা (প্রায় এক একর) সরকারি জমি অবৈধভাবে শেখ হাসিনা, তাঁর সন্তান ও পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীরা অভিযোগ করেছেন, ঢাকায় টিউলিপের মালিকানায় আরেকটি সম্পত্তি থাকায় পূর্বাচলে জমি বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী, তিনি প্লট পাওয়ার যোগ্য নন। তবে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিয়ম লঙ্ঘন করে প্লট বরাদ্দ পান।

দুদকের অভিযোগ, বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে ঢাকার গুলশান এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। দুদক বলেছে, ওই নথিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সিল রয়েছে। তবে এই আইনজীবী বলেছেন, ওই নোটারি তিনি করেননি। সিলটি তাঁর হলেও স্বাক্ষর তাঁর নয়। আর সিরাজুল ইসলাম তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তিনি শুধু নিজের আইনি চেম্বারে বসে নথিপত্রে নোটারি করে থাকেন। টিউলিপ সিদ্দিক বা আজমিনা সিদ্দিকের সঙ্গে তাঁর কোনো পূর্বপরিচয় নেই।

ওই নথি একটি হেবা দলিল। কাউকে সম্পত্তি উপহার দেওয়ার ইসলামি আইনসম্মত দলিল এটি। ওই হেবা দলিল করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। তখন লেবার পার্টির এমপি ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক, তবে মন্ত্রিত্ব পাননি। দুদক অভিযোগ করেছে যে ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিকানা গোপন রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে ওই ভুয়া নোটারি করা হয়েছিল।

দুদকের অভিযোগের বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই অভিযোগগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এই বিষয়গুলো নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি এবং তিনি এই দাবিগুলো পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট উল প স দ দ ক ছ ল ন ট উল প ব যবহ র কর পর ব র র র জন য র কর ছ য গ কর হয় ছ ল বর দ দ সদস য সরক র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।

এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।

পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর