টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না– এটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোক তা অফিস কিংবা আদালত। বিচারপ্রার্থীদের পর্যন্ত ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিতে হয় ঘুষ! যদিও তা গোপনে। তবে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি উৎকোচের প্রচলিত রীতি ভেঙে দিয়েছে। সভা ডেকে রেজ্যুলেশন করে ঘুষকে বৈধতা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘুষ বা বকশিশের পরিমাণও নির্ধারণ করেছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার সমিতির সভার রেজ্যুলেশনের অংশবিশেষ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনার ঝড়।

‘ল্যয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রেজ্যুলেশনটি প্রকাশ্যে আসে। এতে আদালতের বিভিন্ন স্তরে কোন কাজের জন্য পেশকার, পিয়নদের কত টাকা বকশিশ দিতে হবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। গত ৬ মার্চ সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় এ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, সভায় আলোচনা শেষে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে পেশকার বা পিয়নকে সিআর ফাইলিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ টাকা, যেকোনো দরখাস্ত (জিআর/সিআর) ফাইলে ১০০ এবং জামিননামা দাখিলে প্রতি মামলায় ১০০-২০০ টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গারদখানায় ওকালতনামা স্বাক্ষরে ১০০, সিভিল ফাইলিংয়ে সর্বোচ্চ ২০০ ও হলফনামার জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সমিতি।
আদালতে ঘুষের পরিমাণ সহনীয় পর্যায় নামিয়ে আনা ও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি ঠেকাতে সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করেন সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেম। তবে সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন অ্যাখ্যা দিয়ে বিচারবিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও খাটো করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন।

শরীয়তপুর আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘সমিতির নতুন নির্বাহী কমিটি প্রথম সভাতে অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘুষ বৈধ করায় সমিতির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলেও তারা আমলে নেননি। এ সিদ্ধান্তে দুর্নীতি ও বিচারহীনতার পরিবেশ আরও জটিল হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আইনজীবী বলেন, বর্তমান কমিটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছে। তারা শুধু অযোগ্য নন, অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ। ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়া দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ, তারাও ভালো করে জানেন। ঘুষকে বৈধতা দেওয়ার এখতিয়ার কোনো আইনজীবী সমিতির নেই। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেমকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি। তবে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ৬ মার্চের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু কিছু মহলে ভুল বার্তা যাচ্ছে, যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে আইনজীবী সমিতি। দুর্নীতিমুক্ত ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। এটি কোনো রেজ্যুলেশন নয়। অনিয়ম ঠেকাতে আমাদের একটি অভ্যন্তরীণ আলোচনা। আমরা চাই– বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক এবং বিচারব্যবস্থা যেন দুর্নীতিমুক্ত হয়। আশা করি, আমার এ লেখার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।
শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন বলেন, ‘সভা ডেকে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে রেজ্যুলেশন নজিরবিহীন। আমরা বিস্মিত। তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করেছে। কারণ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর এমন লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে হঠাৎ কেন আমাদের কর্মীদের ঘুষের আওতায় আনা হলো, জানতে চাই।’

শরীয়তপুর কোর্ট পরিদর্শক শিমুল সরকার জানান, বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। এখানে ঘুষ লেনদেন হয় কিনা জানেন না। কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ আইনজ ব

এছাড়াও পড়ুন:

এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।

এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: নাহিদের জবানবন্দি পেশ
  • অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
  • যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আইনজীবী সোমার মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট