আদালতে স্তরে স্তরে ‘বকশিশ’ নির্ধারণ
Published: 15th, March 2025 GMT
টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না– এটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোক তা অফিস কিংবা আদালত। বিচারপ্রার্থীদের পর্যন্ত ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিতে হয় ঘুষ! যদিও তা গোপনে। তবে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি উৎকোচের প্রচলিত রীতি ভেঙে দিয়েছে। সভা ডেকে রেজ্যুলেশন করে ঘুষকে বৈধতা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘুষ বা বকশিশের পরিমাণও নির্ধারণ করেছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার সমিতির সভার রেজ্যুলেশনের অংশবিশেষ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনার ঝড়।
‘ল্যয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রেজ্যুলেশনটি প্রকাশ্যে আসে। এতে আদালতের বিভিন্ন স্তরে কোন কাজের জন্য পেশকার, পিয়নদের কত টাকা বকশিশ দিতে হবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। গত ৬ মার্চ সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় এ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, সভায় আলোচনা শেষে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে পেশকার বা পিয়নকে সিআর ফাইলিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ টাকা, যেকোনো দরখাস্ত (জিআর/সিআর) ফাইলে ১০০ এবং জামিননামা দাখিলে প্রতি মামলায় ১০০-২০০ টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গারদখানায় ওকালতনামা স্বাক্ষরে ১০০, সিভিল ফাইলিংয়ে সর্বোচ্চ ২০০ ও হলফনামার জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সমিতি।
আদালতে ঘুষের পরিমাণ সহনীয় পর্যায় নামিয়ে আনা ও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি ঠেকাতে সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করেন সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেম। তবে সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন অ্যাখ্যা দিয়ে বিচারবিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও খাটো করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন।
শরীয়তপুর আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘সমিতির নতুন নির্বাহী কমিটি প্রথম সভাতে অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘুষ বৈধ করায় সমিতির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলেও তারা আমলে নেননি। এ সিদ্ধান্তে দুর্নীতি ও বিচারহীনতার পরিবেশ আরও জটিল হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আইনজীবী বলেন, বর্তমান কমিটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছে। তারা শুধু অযোগ্য নন, অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ। ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়া দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ, তারাও ভালো করে জানেন। ঘুষকে বৈধতা দেওয়ার এখতিয়ার কোনো আইনজীবী সমিতির নেই। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেমকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি। তবে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ৬ মার্চের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু কিছু মহলে ভুল বার্তা যাচ্ছে, যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে আইনজীবী সমিতি। দুর্নীতিমুক্ত ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। এটি কোনো রেজ্যুলেশন নয়। অনিয়ম ঠেকাতে আমাদের একটি অভ্যন্তরীণ আলোচনা। আমরা চাই– বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক এবং বিচারব্যবস্থা যেন দুর্নীতিমুক্ত হয়। আশা করি, আমার এ লেখার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।
শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন বলেন, ‘সভা ডেকে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে রেজ্যুলেশন নজিরবিহীন। আমরা বিস্মিত। তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করেছে। কারণ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর এমন লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে হঠাৎ কেন আমাদের কর্মীদের ঘুষের আওতায় আনা হলো, জানতে চাই।’
শরীয়তপুর কোর্ট পরিদর্শক শিমুল সরকার জানান, বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। এখানে ঘুষ লেনদেন হয় কিনা জানেন না। কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।
এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।
পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।