Samakal:
2025-08-01@00:23:47 GMT

সমাজে তাদের ভয়ের জীবন

Published: 15th, March 2025 GMT

সমাজে তাদের ভয়ের জীবন

‘বড় হয়ে আমি ডাক্তার হবো’– যে শিশুটি মাঝেমধ্যেই বলত এমন কথা, সে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিনের পর থেকে পার্বতীপুরের এই শিশু ও তার পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। শিশুটি ঘর থেকে বের হতে পারে না, লেখাপড়াও বন্ধ । আশপাশের কারও কারও কটু কথা শুনতে হয়। ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবরের ঘটনা। তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। পার্বতীপুর উপজেলার জমিরহাট তকেয়াপাড়ায় এই কন্যাশিশুকে ১৮ ঘণ্টা আটকে রেখে ধর্ষণ করে তার খেলার সাথী রেশমার বাবা সাইফুল ইসলাম। ব্লেড দিয়ে শিশুটির প্রজনন অঙ্গ কেটে ফেলা হয়। সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেওয়া হয় ছোট্ট শরীরে। এদিকে, প্রজনন অঙ্গ কেটে ফেলায় পাঁচ বছর অনিয়ন্ত্রিত মূত্র সমস্যার কারণে সে চলাফেরা করতে পারেনি। পরে রাজধানীর বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, সমাজসেবীর সহায়তায় তার চিকিৎসা হলে বর্তমানে প্রায় আধঘণ্টা মূত্র আটকে রাখতে পারে। ৯ বছর ধরে সে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে।  

ওই বছরের ২০ অক্টোবর তার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় ঘটনাটি আলোচিত হয়। বিচারে সাইফুলের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে সে আপিল করে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দেওয়া এক আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে উই ক্যান অ্যালায়েন্সের জাতীয় সমন্বয়ক জিনাত আরা হক সমকালকে বলেন, ‘কোন গ্রাউন্ড দেখিয়ে হাইকোর্ট থেকে এই আসামি জামিন পায়, তা বোধগম্য নয়। মেয়েটার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই শঙ্কিত। আসামিরা এভাবে জামিন পেলে নারী নির্যাতন আরও বেড়ে যাবে। ধর্ষণের শিকার শিশুটির সঙ্গে সমাজের মানুষের আচরণ স্বাভাবিক নয়। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কেউ তার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ বিভিন্নভাবে এই পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হতো। এখন তো মেয়েটির ঘরের সামনে দিয়েই চলাচল করে আসামি। তাদের ঘরের পাশেই আসামির ঘর। 
শুধু এই শিশুই নয়, ধর্ষণ কিংবা শারীরিকভাবে সহিংসতার শিকার অসংখ্য শিশু ও নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়েছে। ধর্ষণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরও জামিন হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীরা আতঙ্কে আছেন। 
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন দেওয়া প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওয়ালিউর রহমান দোলন বলেন, শুধু ধর্ষণ মামলার আসামিই নয়, এসিড সহিংসতাসহ বিভিন্ন আলোচিত ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে বিভিন্ন উপায়ে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এটা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতি আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধকে ম্লান করে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোর্টের আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার। কোর্টের বাদীপক্ষকে এসব মামলার ব্যাপারে অত্যন্ত সাবধানী ও কঠোর মনোভাবাপন্ন হওয়া উচিত। 

আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের তথ্য অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলাগুলোর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় সাত ভাগেরও কম। সাজা পায় স্বল্পসংখ্যক আসামি। আইনের ত্রুটি, ফরেনসিক পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালীদের চাপ, অর্থের দাপট এবং সামাজিক কারণে কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও ধর্ষক ভীত হচ্ছে না। 
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর সৈয়দা আহসানা জামান 

(এ্যানী) বলেন, ধর্ষণের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। অনেক ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করতে সাহস পায় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থ বা পেশির দাপটে মামলা তুলে নেওয়া হয়। এতে আসামিরা পার পেয়ে যায়। এখনতো ধর্ষণের মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও জামিন দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক ব্যবহার। পুরুষরা যাই করুক না কেন, সবকিছুতেই তারা পার পেয়ে যায়। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা দিতে পারে না। বর্তমানে কন্যাশিশু ও নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনোভাবেই যেন ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামিন না পায়। এমনটি ঘটতে থাকলে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা থাকবে না।

 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে

চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।

সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।

মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্গম অঞ্চলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এখনো পিছিয়ে
  • মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
  • কালীগঞ্জ পৌর শহর যেন মশার স্বর্গরাজ্য